অবসরের আগে সরকারি কর্মকর্তারা ঢিলেঢালা কাজ করে

ডেস্ক রিপোর্ট: গাইবান্ধার দায়রা জজ আদালতের একটি মামলার রায়ে নিম্ন আদালতের প্রতি ১৫ দফা নির্দেশনা দিয়ে হাইকোর্ট বলেছেন, অবসরে যাওয়ার আগে এ দেশের অনেক সরকারি কর্মকর্তা তাদের দায়িত্ব পালনের প্রতি অনীহা দেখানোর প্রবণতা ধারণ করে এবং ঢিলেঢালা স্টাইলে কাজ শুরু করে। বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজদের ওই ধরনের মানসিকতা ধারণ করা যাবে না।

রায়ে আদালত বলেন, সাধারণ জনগণ আদালতের দুর্বল ও শ্লথগতির কারণে কোনো মামলার তদন্ত অথবা বিচার বিলম্ব হচ্ছে বলে কেউ যেন দোষারোপ করতে না পারে।

এক রায়ে নিম্ন আদালতের প্রতি এমন নির্দেশনা দিয়ে ১৫ দফার নীতিমালায় এসব কথা বলেছেন হাইকোর্ট।

গাইবান্ধার দায়রা জজ আদালতের একটি সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে দেওয়া রায়ে বিচারপতি রেজাউল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ ১৫ দফা নির্দেশনা সংবলিত এই নীতিমালা দিয়েছেন।

আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ১৫ দফা নীতিমালা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রায়ে বলা হয়, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে আরো সিরিয়াস হতে হবে। সৎ, মেধাবী, সজাগ ও দক্ষ অফিসারদের দ্বারা পরিচালনার মাধ্যমে বিচার বিভাগকে রাষ্ট্রের সবচেয়ে গতিশীল ও দেশপ্রেমী অঙ্গ হিসেবে জনগণের স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করতে হবে।

রায়ে আরো বলা হয়েছে, দায়রা আদালতের বিচারকদের ফৌজদারি রিভিশনের ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে অধীনস্থ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনায় শুধু সম্মত বা অসম্মত উল্লেখ করেই দায়িত্ব শেষ করা যাবে না; সংশ্লিষ্ট মামলার বিষয়বস্তুর সঙ্গে জড়িত আইনগত প্রশ্নের গভীরে ঢুকে অনুসন্ধান এবং তারপর তাদের মেধা ও দক্ষতা অনুযায়ী নিজস্ব মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে তারা কাঠামোগতভাবেই বাধ্য, তাদের অবশ্যই বিচারিক মনোভাব সম্পন্ন হতে হবে এবং যেকোনো আদেশের বিরুদ্ধে দায়ের করা রিভিশনাল বিষয়গুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।

রায়ে মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) ও মুখ্য বিচারিক হাকিমের (সিজেএম) সহযোগিতায় সব বিচারক এবং হাকিমদের নিয়ে জেলা ও মহানগর দায়রা জজের অফিসে মাসে কমপক্ষে একবার জুডিশিয়াল কনফারেন্স (বিচারিক সম্মেলন) করতে হবে।

এতে আরো বলা হয়, নারাজি পিটিশনে যেসব সাক্ষীর নাম উল্লেখ করা হয় তাদের কাছ থেকে বক্তব্য নেওয়া বিচার বিভাগীয় অনুসন্ধানকারী হাকিমের (ম্যাজিস্ট্রেট) প্রাথমিক দায়িত্ব হলেও অনুসন্ধানকারী হাকিমের কাছে যেসব সাক্ষী প্রাসঙ্গিক মনে হয়, তাদের বক্তব্যও নিতে হবে।

নারাজি পিটিশনে করা অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় মনে হলে বিচার বিভাগীয় অনুসন্ধানকারী হাকিমকে সম্ভব হলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে হবে। বিচার বিভাগীয় অনুসন্ধানকালে একজন হাকিমের কাছে যদি কোনো বিষয় গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, অনুসন্ধান প্রতিবেদনে কোনো মতামত বা ফাইন্ডিংস যোগ করতে হয়, তা হলে ওই হাকিমকে বিচারিক সাক্ষীদের আচরণ ও মানসিক অবস্থা রেকর্ড করতে হবে। একজন বিচার বিভাগীয় অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাকে তাঁর অনুসন্ধান অবশ্যই যথাসম্ভব কম সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। বিচার বিভাগীয় অনুসন্ধান ও এ সংক্রান্ত মামলা সঠিকভাবে পরিচালনায় বিচার বিভাগীয় অনুসন্ধানকারী হাকিম, আমলে গ্রহণকারী হাকিম ও দায়রা আদালতের জজদের প্রতি এ নীতিমালা পালন করতে বলা হয়েছে।