‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট অতীতের চেয়ে ভিন্ন ও গভীর’

ali reajডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট অতীতের চেয়ে ভিন্ন ও গভীর বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘অতীতে বাংলাদেশ যত ধরনের রাজনৈতিক সংকট বা অনিশ্চয়তার মোকাবেলা করেছে এখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে তার আপাত সাদৃশ্য থাকলেও এবারের সংকট অতীতের যে কোনও সময়ের চেয়ে ভিন্ন এবং আরও গভীর।’

শুক্রবার (৬ জুলাই) বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুল ইসলাম লেকচার হলে ‘বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতি’ শীর্ষক গণবক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। রিডিং ক্লাব ট্রাস্ট ও জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এ বক্তৃতার আয়োজন করে।

এসময় অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, ‘এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তা আসলে হাইব্রিড রেজিম বা দোআঁশলা ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় দৃশ্যত গণতন্ত্রের কিছু কিছু উপাদান থাকলেও সেগুলো প্রধানত শক্তি প্রয়োগের ওপরে নির্ভর করে। ফলে রাষ্ট্রের নিপীড়ক যন্ত্রগুলো আগের যে কোনও সময়ের চেয়ে বেশি ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে এবং তাদের একধরনের দায়মুক্তি দেওয়া হয়। এক সময় যে প্রাণবন্ত সিভিল সোসাইটি ছিল এখন তার চিহ্ন পর্যন্ত অবশিষ্ট নেই। গত এক দশকে সিভিল সোসাইটির বিরুদ্ধে অব্যাহত প্রচারণা চালানো হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু নির্বাচনি ব্যবস্থার ওপর ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেহেতু আর সব ধরনের জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থা চূর্ণ করে ফেলাই হচ্ছে ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করার উপায়। বাংলাদেশের সমাজে অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি, সহিংসতার ব্যাপক বিস্তারের যে সব ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করছি তা আগামীতে আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা এখানেই।’

রাজনীতিতে ইসলামপন্থীদের প্রভাবের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইসলামপন্থী রাজনীতি দুইভাগে বিভক্ত। তুলনামূলকভাবে রক্ষণশীল এবং সংস্কারপন্থী। গত কয়েক বছরে তুলনামূলকভাবে সংস্কারপন্থী ধারা দূর্বল হয়েছে। তাদের অনুপস্থিতির সুযোগে রক্ষণশীল ইসলামপন্থীরা রাজনীতির প্রান্তিক অবস্থান থেকে রাজনীতির কেন্দ্রে আসতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে রক্ষণশীল ইসলামপন্থীরা রাজনীতির এজেন্ডা নির্ধারণের মতো ক্ষমতা রাখেন। ক্ষমতাসীন দল গত দুই-তিন বছরে এই শক্তিকেই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে।’

ভারতের ভূমিকা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভারত চারটি কারণে বাংলাদেশে তার ঘনিষ্ঠ মিত্র সরকার রাখতে চায়। এগুলো হলো- বাংলাদেশে ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি, এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবেলা, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের মিত্রের অভাব এবং ইতোমধ্যে ভারতের যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিনিয়োগ হয়েছে তা রক্ষা করা।’

আলোচনা অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের অভাব। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়নি এবং তা ব্যক্তি নির্ভর। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সহায়ক না হয়ে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে দেশের মানুষ নিরাপত্তাহীনতা, অধিকারহীনতায় ভুগছেন। এ সমস্যার প্রতিকারের উপায় অনুসন্ধান করা জরুরি এবং তা করতে হবে তরুণদের।’