হারুন অর রশিদ জানালেন ভেটকি মাছ যশোরে চাষের ক্ষেত্রে একেবারেই নতুন। তিনি সাতক্ষীরার মুনশীগঞ্জ, কয়রা সহ কয়েকটি নোনা পানি এলাকা থেকে ৩৫টাকা প্রতি পোনা পিচ দরে ক্রয় করে দুই মাস আগে যশোরে আনেন। এরপর মিঠা পানির সাথে এ্যাডজাস্ট করে তিনি সেই পোনা ৪০বিঘার ঘেরে ছাড়েন। এখানে এখন ১৭,০০০ ভেটকি পোনা মজুদ রয়েছে। আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের মার্চ থেকে এপ্রিলের যে কোন সময়ে এই ভেটকি মাছ বাজারে তোলা হবে। ধ্রানা করা হচ্ছে প্রতি কেজি ভেটকি মাছের বাজার দর হবে সর্বনি¤œ ৪০০টাকা। প্রতিটি মাছের ওজন দাড়াবে দেড় কেজি থেকে দই কেজি পর্যন্ত। ছাড়ার সময় এসব পোনার সাইজ ছিল দুই থেকে তিন ইঞ্চি। বিভিন্ন স্থানে মাছের ফার্ম ভিজিট করে তার ভেটকি মাছ চাষের আগ্রহ হয়। আগ্রহ বাস্তবে রুপ দিয়েছেন বলে তার মনে প্রশান্তির ছায়া। হারুন অর রশিদ বললেন ভেটকি মাছের প্রধান খাদ্য হচ্ছে অবাঞ্চিত মাছ। এই ৪০বিঘার জলাশয়ে ভেটকির সাথে ট্রায়াল হিসেবে ৫০,০০০ পিচ ট্যাংরা ও ২০,০০০ পিচ পায়রা মাছ ছাড়া হয়েছে। বিদেশে এবং দেশের বাজারে ভেটকির ব্যাপক চাহিদা। তাছাড়া প্রতি বিঘায় অন্তত: ৩০০পিচ বাজারে ভেটকি মাছ চাষ সম্ভব। ভেটকি চাষের জন্য পানির গভীরতা হতে হবে ছয় থেকে আট ফুট। অর্থাৎ এটি গভীর পানির মাছ।
এবছর ৩০বিঘা জলাশয়ে হারুন অর রশিদের নয় লাখ পাবদা রয়েছে। তিন মাস আগে এই পাবদা পোনা ছাড়া হয়। সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরে তা বাজারে তোলা হবে। সে সময় মাছের ওজন হবে ২০ থেকে ২৫ পিচ মাছে এক কেজি। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে পাবদা পোনা সংগ্রহ তার। আশা রয়েছে আগামী মৎস্য সিজনে তিনি ৫০ লাখ পাবদা চাষ করবেন।
দেশী মাছ শোল ছাড়া আছে ছয় বিঘার জলাশয়ে। ৫,০০০ পিচ শোল পোনা বিল থেকে সংগ্রহ করে তিনি এক মাস আগে সংরক্ষন ও চাষ শুরু করেন। এক বছরে ৮০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের একেকটি শোল মাছ হলে তবেই বাজারে উঠানো হবে। পাশাপাশি তার দুই মাস আগে ছাড়া ৩০,০০০ পিচ দেশী শিং মাছের পোনা ছাড়া রয়েছে। আগামী বছরের মার্চ থেকে এপ্রিলের মধ্যে এই শিং বাজারে তোলা হবে বলে তার টার্গেট। ১০ থেকে ১৫টি মাছে তখন এক কেজি ওজন হবে। দেড় মাস আগে তিনি পাঁচ লাখ মনোসেক্স তেলাপিয়া ছেড়েছেন জলাশয়ে। এখন প্রতি কেজিতে সে মাছের পরিমান হবে ২০ থেকে ২৫পিচ। প্রতি কেজিতে চার পিচ ওজন হলেই তা বাজারে তোলার ইচ্ছে তার। আর সেটা এই আসন্ন অক্টোবরেই। মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষে তার খরচ দাড়াবে ৮০ লাখ টাকা। আর তা বিক্রি হবে সর্ব নি¤œ এক কোটি ২০ লাখ টাকা। অর্থাৎ এই মাছের আয় দাড়াবে প্রায় ৪০ লাখ টাকা। ঘেরের শামুক মাছ চাষে একটি সমস্যা। এ সমস্যা দুর করতে তিনি কিছু ব্লাক কার্প পোনা চাষ করছেন। এক বছরে এই ব্লাক কার্পের ওজন দাড়াবে প্রতিটি সর্ব নি¤œ তিন কেজি।
বাংলাদেশের অতি সুস্বাদু একটি মাছ গুলশা। যে কথা না বললেই নয়, ২০১৬ সালে হারুন অর রশিদ গুলশা মাছ চাষ শুরু করেন। ট্যাংরা জাতীয় সুস্বাদু এই মাছ বর্তমানে ১৬ বিঘার জলাশয়ে মজুদ রয়েছে। এর পরিমান আট লাখ। বিগত এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে এই গুলশা পোনা ছাড়া হয়েছে। বাজারে তোলা হবে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। তখন মাছের ওজন হবে ১৫ থেকে ২০ পিচে এক কেজি। আগামী সিজনে তিনি ২০ লাখ গুলশা চাষ করবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন। পাশাপাশি তিনি আরো জানালেন ছোট খামারিরা এই গুলশা চাষ করে আত্ম নির্ভরশীল ও লাভজনক মাছ চাষী হতে পারেন। সেক্ষেত্রে এক বিঘা আয়তনের জলাশয়েও গুলশা চাষ সম্ভব। তিনি ময়মনসিংহের আদম দিঘী থেকে গুলশা পোনা সংগ্রহ করেছেন।
ভাই ভাই মৎস্য খামারের প্রোপাইটর হারুন অর রশিদের জন্ম ১৯৭৬ সালের ৫ জানুয়ারি। তার পিতা হাশেম আলী এখনো জীবিত আছেন তবে মা আয়শা খানম পরপারে চলে গেছেন। তার স্ত্রী শাহানারা ইয়াসমিন। বড় পুত্র শাফায়াত হোসেন সোহান এবছর ইন্টার মিডিয়েট পাশ করেছে। আর ছোটটি সিজানুর ইসলাম যশোর জিলা স্কুলে পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্র। দুই ভাই খেলাধূলা করছে জোরছে তবু তাদের স্বাস্থ্য কমছে না এই নিয়ে তারা স্বামী-স্ত্রী মধুর টেনশনে। তবে সেটা একেবারেই পারিবারিক মধুর চিত্র। নইলে মাছ চাষে সফলতায় এই মৎস্য খামারের প্রোপাইটর হারুন অর রশিদ ২০১৪ সালে রাষ্ট্রীয় মৎস্য পুরষ্কার মনোসেক্স তেলাপিয়া বিভাগে অর্জন করেছেন। যেখানে তার ফার্মের জন্ম ২০০৪ সালে। স্কুল জীবন থেকেই তিনি পোনা মাছ চাষে নেমেছেন। বলা যায় পারিবারিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবেই তিনি মাছ চাষ শুরু করেছেন। ২০১৪ সালের আগে পরে আরো নয়টি মৎস্য পুরষ্কার তার ভান্ডারে জমা পড়েছে এর মধ্যে রয়েছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযু্িক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের দারুন কার্যকর এক পুরষ্কার। তবে আদর্শ মাছ চাষী হওয়া বা পুরষ্কার নয় হারুন অর রশিদের ইচ্ছে মাছের বিলুপ্ত প্রজাতি সংরক্ষন ও ব্যবসা। সে লক্ষেই তিনি চলেছেন। ২০০ বিঘার মাছের ঘেরের ৭০ বিঘা জমি তার ক্রয়কৃত। বাকিটা লীজে নেওয়া। বড় জলাশয় পাঁচটি। ছোট জলাশয় নয়টি। সবচেয়ে বড়টির আয়তন ৫০ বিঘা। গভীর নলকূপ পাঁচটি। সোলার প্লান্ট এর মাধ্যমে মটর দিয়ে পানি উঠানো হচ্ছে। এছাড়া স্যালো রয়েছে নয়টি। এই ঘেরের জন্য জনবল ১৩ জন। আরো মজার তথ্য এই পাড়ে সব্জী তরিতরকারি চাষ হয়। ছাগল আছে ১৬টি। ফার্মে গরুর সংখ্যা নয়। এটাও তার জন্য আশাপ্রদ।