‘সুসস্পর্কের কারণে দুই দেশের জনগণই লাভবান হচ্ছে’

ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আমাদের এ সম্পর্ক বিশ্বের অন্যান্য অংশের জন্য একটা রোল মডেল হিসেবে গণ্য হবে। আমরা দুই প্রতিবেশী দেশ একটা সুসম্পর্ক বজায় রেখেছি। এ সুসম্পর্ক আমাদের দৃঢ় আস্থার সঙ্গে পারস্পারিক সমৃদ্ধের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে। যাতে দুই দেশের জনগণই লাভবান হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দিল্লী থেকে আজ সোমবার বিকেলে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর গ্রিড থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার আন্তঃবিদ্যুৎ সংযোগ গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্বোধন করেন। এ সময় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতার অংশ হিসেবে আজ সোমবার বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে ভারত থেকে আরো ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়।

বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে, এ উপলক্ষে দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে ভেড়ামারায় নবনির্মিত ৫০০ মেগাওয়াট এইচভিডিসি ব্যাক টু ব্যাক স্টেশন সেকেন্ড ব্লকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

এ ছাড়া বংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেললাইন প্রকল্পের বাংলাদেশ অংশের নির্মাণকাজও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

একই অনুষ্ঠানে দুই প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল সংযোগ পুনর্বাসন প্রকল্পেরও নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন।

ভিডিও কনফারেন্সে দুই প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ও ছিলেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদিকে আমাদের উন্নয়নে সমর্থনদানের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমানে ভারত থেকে আমরা ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছি, ভারত থেকে আরো তিন হাজার মেগাওয়াট আমদানি করার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা গত সাড়ে ৯ বছরে তিন হাজার থেকে ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। ধন্যবাদ জানাই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে যে তিনি বলেছেন আমাদের আরো এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিবেন। আশাকরি নরেন্দ্র মোদি এতে সম্মতি দেবেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য আমাদের আরো অনেক বিদ্যুৎ প্রয়োজন। এজন্য আমরা আঞ্চলিক সহযোগিতা কাঠামোর অধীনে ২০৪১ সালের মধ্যে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা করছি। আমি আশা করি এ লক্ষ্য অর্জনে ভারত আমাদের পাশে থাকবে।’

বাসস জানিয়েছে, নতুন ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের মধ্যে ৩০০ মেগাওয়াট আসবে ভারতের সরকারি খাত ‘ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট’ থেকে। ২০০ মেগাওয়াট আসবে সে দেশের বেসরকারি খাত ‘পাওয়ার ট্রেডিং করপোরেশন’ থেকে।

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের পরিমাণ ৬৬০ মেগাওয়াটের মধ্যে ৫০০ মেগাওয়াট পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় যুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে কুমিল্লায় বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত হয়েছে।

প্রায় ৫১ কিলোমিটার দীর্ঘ কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল সংযোগ পুনর্বাসন প্রকল্পে ৫৪৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা খরচ হবে।

প্রকল্পের অধীনে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল রুটে রেলওয়ে ব্রিজ, ব্রিজ ও স্টেশন বিল্ডিং, প্লাটফর্ম, রেল লাইন ও অন্যান্য রেল অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কার করা হবে।

আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প এবং কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল পুনর্বাসন প্রকল্পের খরচ ভারতের এক বিলিয়ন ডলার লাইন অব ক্রেডিটের অংশ থেকে মিটানো হচ্ছে।