সুষ্ঠু নির্বাচনে জাতিসংঘের সহায়তা কামনা

বাংলাদেশে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় সেজন্য জাতিসংঘের সহায়তা চেয়েছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে ৩৫ তলায় সংস্থাটির রাজনীতিবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মিরোস্লাভ জেনকার সঙ্গে বৈঠকে এ সহায়তা চাওয়া হয়। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এ বৈঠকে অংশ নেয়। এ সময় তারা বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে সরকারের নানা তৎপরতার বিষয়ে জাতিসংঘকে অবহিত করেন। এছাড়াও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তি, তার অসুস্থতা, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ সার্বিক বিষয় বৈঠকে তুলে ধরেন। দেশের সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে জাতিসংঘের পদক্ষেপ আশা করেন বিএনপির প্রতিনিধি দলের নেতারা। এছাড়া বিএনপি ট্রাম্প প্রশাসনের সমর্থন আদায়ের চেষ্টাও করছে বলে জানা গেছে। এলক্ষ্যে দলটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্টও নিয়োগ দিয়েছে।

বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টা থেকে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠক হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল এবং জাতিসংঘের চারজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে নেই। কাজেই বিএনপি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এ দফায় জাতিসংঘ মহাসচিবের কোনো বৈঠক হচ্ছে না বলে জানা গেছে।

বৈঠক শেষে জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতিসংঘের মহাসচিবের আমন্ত্রণে আমরা এখানে এসেছি। বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আমাদের মধ্যে কথা হয়েছে। দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়নের বিষয়গুলোও জানানো হয়েছে। আমরা কথা বলেছি, তারাও কথা বলেছেন।’ আলোচনা ফসপ্রসূ হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ঢাকায় ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে নালিশ পার্টি বলে উল্লেখ করেছেন- এ সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হলে ফখরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। আপনারা লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছেন, তাদের আয়োজনে ওয়াশিংটনে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রাতঃরাশে যোগ দিচ্ছেন- এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এমন আরও অনেক মিটিং আছে, সেগুলোতেও যোগ দেব। লবিস্ট নিয়োগ সংক্রান্ত প্রশ্নে একটু উষ্মা প্রকাশ করেন কিন্তু সরাসরি কোনো জবাব দেননি ফখরুল ইসলাম।

বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী যোগ দেবেন। সেখানে বাংলাদেশের নির্বাচনসহ বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে তাদের আলোচনা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী যাওয়ার আগেই জাতিসংঘকে বাংলাদেশ সম্পর্কে ব্রিফ করা ছিল এ বৈঠকের অন্যতম উদ্দেশ্যে, যাতে সংস্থাটি সব বিষয়ে অবগত থাকে।

বৈঠক সূত্র জানায়, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের করণীয় আছে বলে মনে করে বিএনপি। এ সংক্রান্ত বক্তব্য উপস্থাপন করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। এ ব্যাপারে জাতিসংঘ অন্যান্য পক্ষের সঙ্গেও কথা বলবে বলে জানিয়েছে বিএনপিকে। বৈঠকে বিএনপি একটি লিখিত বক্তব্য দিয়েছে। এর সঙ্গে বিভিন্ন ইংরেজি দৈনিকের নিউজ এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি সংবলিত কিছু কাগজপত্র দিয়েছে।

জানা গেছে, নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, গুম, খুনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। জাতিসংঘের অনেক নির্দেশ অমান্য হচ্ছে তা জানানো হয়। বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আইনের শাসন নেই। মানবাধিকার পরিস্থিতি কেমন তা জাতিসংঘ খুব ভালোভাবেই অবহিত।

জবাবে জাতিসংঘ জানিয়েছে, মানবাধিকার নিয়ে তাদের যে কমিটি কাজ করে, তাদের রিপোর্টেও বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি উঠে এসেছে। এছাড়া পত্রিকায় যেসব খবর প্রকাশিত হচ্ছে, সেসব বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন তারা।

জানা গেছে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবন্দি থাকার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। এ সময় বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তিনি গুরুতর অসুস্থ, তাকে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। মিথ্যা ও সাজানো মামলায় তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। তার মুক্তি প্রক্রিয়া বিলম্ব করা হচ্ছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ করেন। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি কোনো ঘটনা ছাড়াই হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের এজাহারও দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে বুধবার নিউইয়র্ক পৌঁছেছেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার সঙ্গে নিউইয়র্ক গেছেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল। এ বৈঠকে অংশ নিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির লন্ডন থেকে নিউইয়র্কে পৌঁছান।