বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীকে ফেরাতে কানাডার সঙ্গে আলোচনা চলছে

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কানাডা সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার দাবিতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী বরাবর অনলাইন স্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচির উদ্বোধনীতে তিনি এ কথা বলেন।

কানাডার আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান না থাকায় নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জটিলতা আছে জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, মৃত্যুদণ্ডের আইন শিথিল করে নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা রয়েছে সে দেশের সরকারের।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কানাডার একটা আইন আছে। তাদের আইনটা হচ্ছে, কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান সে দেশের আইনে নেই। যে কারণে এই আইনটিকে শিথিল করে নূর চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে, কানাডায় একটা মামলাও বাংলাদেশ সরকার করেছে এবং সেখানে আলাপ-আলোচনা আমাদের সরকারের সঙ্গে অব্যাহত রয়েছে।’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমণ্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল।

পৃথিবীর এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবি ও সুকান্ত, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা ও সাংবাদিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনি, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।

১৯৯৬ সালের ১৪ নভেম্বর খুনিদের বিচারের হাতে ন্যস্ত করতে পার্লামেন্টে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করা হয়। ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এ মামলায় ২০ জনকে অভিযুক্ত করে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে এবং একই বছরের ১২ মার্চ ছয় আসামির উপস্থিতিতে আদালতে বিচার শুরু হয়। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর মামলার রায়ে বিচারক কাজী গোলাম রসুল ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি পাঁচ আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। তাঁরা হলেন সেনাবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), সাবেক মেজর বজলুল হুদা, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহরিয়ার রশিদ খান এবং এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার)। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও দণ্ডিত ১২ খুনির মধ্যে সাতজন পলাতক। তাঁদের মধ্যে একজন জিম্বাবুয়েতে মারা যান। বাকি ছয়জনের মধ্যে একাধিক ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় অবস্থান করছেন।