নৈরাজ্য করলে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না : ডিএমপি কমিশনার

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে কেউ যদি নৈরাজ্য তৈরির চেষ্টা করে, তাহলে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘এই রায়কে ঘিরে সবাই উত্তেজনার মধ্যে আছে। দেশে বিচার ব্যবস্থা একটি চলমান প্রক্রিয়া। অন্য সব মামলার রায় যেভাবে হয়ে থাকে, এটি তার ব্যতিক্রম কিছু নয়। এটি আদালতের স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। সুতরাং এ মামলার রায়কে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের নিরাপত্তার হুমকি অথবা নৈরাজ্য সৃষ্টির সুযোগ নেই। কোনো আশঙ্কাও নেই।’

‘তদুপরি আমরা দেশবাসীর নিরাপত্তার জন্য ঢাকা শহরজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা নিয়েছি। আমি বলতে চাই, কেউ যদি আইনি প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করে, জনগণের জান ও মালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার, নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করে, তাহলে বরদাশত করা হবে না ইনশাআল্লাহ। আমি আপনাদের জানাতে চাই, রাষ্ট্রের সম্পদ রক্ষার রাষ্ট্রের যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে। কেউ যদি নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করে, তাহলে তাকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।’

‘আমি বলতে চাই, যদি কেউ অতীতে মতো নৈরাজ্য, আইনশৃঙ্খলা অবনতির চেষ্টা করে, জ্বালাও-পোড়াওয়ের অপচেষ্টা করে অত্যন্ত কঠোরভাবে তাদের দমন করা হবে। এবং প্রত্যেককে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া রয়েছে। ঢাকাবাসীর উদ্দেশে বলব, আপনারা যার যার কাজে মন দেন। আপনাদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের,’ যোগ করেন আছাদুজ্জামান মিয়া।

বর্বরোচিত ও নৃশংস ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হচ্ছে আজ বুধবার। এর মধ্য দিয়ে ১৪ বছরের অপেক্ষার অবসান হচ্ছে। রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে ২১ আগস্টের ওই ঘটনায় আনা পৃথক মামলায় একই সঙ্গে বিচার অনুষ্ঠিত হয়।

বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের গাড়ি আজ সকাল পৌনে ১০টার দিকে আদালত চত্বরে প্রবেশ করতে দেখেছেন সেখানে কর্তব্যরত গণমাধ্যমকর্মীরা। এই রায়কে ঘিরে আদালত চত্বরে বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে কঠোর নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। সকাল ১০টার দিকে আদালত চত্বরে আসেন ডিএমপি কমিশনার।

২১ আগস্টের ঘটনায় পৃথক মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫২ জন। এর মধ্যে তিনজন আসামির অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাঁদের মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তিন আসামি হলেন জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও তাঁর সহযোগী শরীফ সাহেদুল আলম বিপুল। এখন ৪৯ আসামির বিচার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জঙ্গি তাজউদ্দিনসহ এখনো ১৮ জন পলাতক। বিএনপি নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছেন।

এর মধ্যে ওই ঘটনায় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ষড়যন্ত্র, ঘটনায় সহায়তাসহ বিভিন্ন অভিযোগে একটি মামলা যাতে বর্তমানে আসামি সংখ্যা মোট ৪৯ জন। একই ঘটনায় ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনে (সংশোধনী-২০০২) অপর একটি মামলায় আসামি সংখ্যা ৩৮ জন।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান।

তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তাঁর শ্রবণশক্তিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়।