সংসদে তোপের মুখে ড. কামাল

স্বাধীনতাবিরোধী, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং একুশে আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করায় রোববার সংসদে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য ও বিএনএফ চেয়ারম্যান এস এম আবুল কালাম আজাদ। এই বিষয়টি নিয়ে প্রস্তাব আকারে চলতি অধিবেশনে একদিন আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন তারা। এ সময় অধিবেশনে সভাপতি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।

অধিবেশনে মাগরিবের নামাজের বিরতি ও প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে তোফায়েল আহমেদ পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে বলেন, ড. কামাল হোসেন নিজেকে সংবিধান প্রণেতা বলে দাবি করেন। অনেকে তাকে সংবিধান প্রণেতা বলে থাকেন। আমি নিজেও তৎকালীন গণপরিষদের সদস্য ছিলাম। এখানে উপস্থিত আমির হোসেন আমু ও আমিসহ অনেকেরই সেই সংবিধান প্রণয়নে ভ‚মিকা ছিল। এই ড. কামাল, যিনি নিজেকে সংবিধান প্রণেতা দাবি করেন তিনি কি করে সংবিধান পরিপন্থী দাবি তোলেন? তাদের দাবি সাংবিধানিক নয়। যারা সংবিধানবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত, যারা একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত, যারা বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত, গ্রেনেড হামলার দায়ে যেই দলের নেতাদের ফাঁসির রায় হয়েছে, কারও কারও যাবজ্জীবন দন্ড হয়েছে, যাকে একটি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে অভিহিত করা হয়; সেই নেতার যাবজ্জীবন দন্ড হয়েছে, তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে ড. কামাল কীভাবে ঐক্য করেন?

তিনি বলেন, আমরা এটা নিয়ে সংসদে একদিন সময় নিয়ে বিস্তারিত এবং তথ্যমূলক আলোচনা করতে চাই। এটা একটা অশুভ ঘটনা হতে চলেছে। আমরা স্পিকারের অনুমতি নিয়ে যে কোন একদিন এটা নিয়ে আলোচনা করতে চাই, দেশের মানুষকে অনেক কিছু জানাতে চাই। এরজন্য প্রয়োজনীয় হোমওয়ার্ক করতে চাই। স্পিকার অনুমতি দিলে আমরা ভালো আলোচনা করবো।

তোফায়েল আহমেদ তার বক্তব্যের শুরুতে বলেন, ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে চার মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ নির্ধারিত হয়। এর ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমাদের সংবিধান প্রণয়ন হয়। বঙ্গবন্ধুর ছেড়ে দেয়া আসনে এই ড. কামাল বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এর আগে বিষয়টির অবতারণা করে পয়েন্ট অব অর্ডারে বিএনএফ চেয়ারম্যান এস এম আবুল কালাম আজাদ ফ্লোর নিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ড. কামাল হোসেন সংবিধান প্রণয়ন করেছেন। তিনি নিজেকে সংবিধান প্রণেতা দাবি করেন। কিন্তু সংবিধানের মুখবন্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম রাখা হয়নি। এতোদিনে আমরা বুঝতে পারলাম কেন সংবিধানের মুখবন্ধে জাতির জনকের নাম রাখা হয়নি। ড. কামাল হোসেন মুক্তিযুদ্ধে ছিলেন না, তিনি পাকিস্তানপন্থী ছিলেন। এ কারণেই তিনি সংবিধানের মুখবন্ধে বঙ্গবন্ধুর নাম রাখেননি উদ্দেশ্যেমূলকভাবেই। এটা তার অসততা, অসৎ উদ্দেশ্যে ছিল। এই অসততার জন্য ড. কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রীর ১০ বছরের সাফল্য নিয়ে আলোচনার জন্যও নোটিশ দেবেন তোফায়েল
পয়েন্ট অব অর্ডারে তোফায়েল আহমেদ স্পিকারের উদ্দেশে বলেন, আমি আরেকটি বিষয়ে এই অধিবেশনে আলোচনার জন্য নোটিশ দেব। গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে অভ‚তপূর্ব উন্নয়ন ঘটিয়ে দেশকে বিশ্ব দরবারে অনন্য স্থানে তুলে ধরেছেন। এই বিষয়টি নিয়েও আমরা আলোচনা করতে চাই।

সরকারি চাকরিতে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের সন্তানদের না নেয়ার দাবি
এদিকে কার্যপ্রণালী বিধির ৭১ বিধিতে আনা এক জরুরি মনোযোগ আকর্ষণ নোটিশে সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পী বলেন, রাজাকার, আল বদর, আল শামস আমাদের হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। অসংখ্য মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট করেছে। রক্তেভেজা এই স্বাধীন দেশে সেই মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের সন্তানদের সরকারি চাকরি হতে পারে না। সরকারি চাকরিতে তাদের নিষিদ্ধ করার দাবি জানান তিনি।