‘কামালদের চিঠি পেলে মনোভাব’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংলাপের বিষয়ে ড. কামাল হোসেনদের কোনো চিঠি আমি পাইনি। পাওয়ার পর মনোভাব জানাব।

সোমবার গণভবনে সৌদি আরব সফর শেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপের দাবি ও সরকারকে চিঠি দেয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব জানতে চাইলে তিনি একথা বলেন।

গত ১৬ থেকে ১৯ অক্টোবর সৌদি আরব সফর করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি সৌদি সরকারের সঙ্গে ৫টি বাণিজ্যিক সমঝোতা স্মারক চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী তার সফরের সারাংশ তুলে ধরেন। এ সময় তিনি জানান, বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগের নবধারা সূচিত হবে বলে আমি আশা করি।

পরে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন। এর মধ্যে সম্প্রতি বিরোধী রাজনৈতিক জোটের ঐক্যকে কিভাবে দেখছেন— এমন এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশে সবার রাজনৈতিক স্বাধীনতা রয়েছে। তাতে যে কেউ ঐক্য করতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, সেটাকে আমরা স্বাগত জানাই। তারা যদি রাজনৈতিক সাফল্য পায়, তাতে অসুবিধে কী? তবে একটু লক্ষ্য রাখা দরকার, কারা কারা এক হচ্ছে? কার কি ধরনের ভূমিকা এগুলো দেখতে হবে। এ গাছের ছাল ও গাছের বাকল সব মিলে যে একটা জোট তৈরি হয়েছে। তারা ভালো কাজ করুক এটাই চাই। বাংলাদেশের মানুষ তাদের কিভাবে দেখল সেটা বড় কথা।’

এ সময় তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে কোনো সংশয় নেই। সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে যথা সময়ে নির্বাচন হবে।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি মেনে নেবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা একবার ৪ দফা দিয়েছে। আবার ৭ দফা দিল। আমি অপেক্ষা করে আছি দফাটা কতদূর যায়? এরপর আমি আমার বক্তব্য দেব।’

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখাই বড় লক্ষ্য

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহারে বাংলাদেশের মানুষের জন্য নতুন কি থাকছে— এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করছি। গত দুই নির্বাচনের আগে যে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, সেগুলো বাস্তবায়ন করেছি। সামনের দিকে আমরা যে উন্নয়ন করে যাচ্ছি, সেটার গতিধারা অব্যাহত রাখব। সেজন্য একটা ডেল্টা প্ল্যান দিয়েছি। দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশ উন্নত করে তোলার যে লক্ষ্য দিয়েছি, সেটা করতে সচেষ্ট হব।

রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে সৌদি সরকারের সঙ্গে কথা হয়েছে কিনা? এ বিষয়ে তাদের মনোভাব কি? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গারা ফেরত যাক, এটা সবাই চায়। রোহিঙ্গারা নিজভূমে ফিরে যাক, এটা সৌদি আরবও চায়। এজন্য যত সহযোগিতা প্রয়োজন, তারা করবেন বলে অঙ্গিকার করেছেন।’

নির্বাচনকালীন সরকারের আকার নিয়ে দ্বিধা

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের চলমান মন্ত্রিসভা সব দল থেকে নিয়ে করেছি। নির্বাচনকালীন সরকারও তাই হয়ে থাকে। এখন এটাকে ছোট করব, না এভাবেই থাকবে, সেটাই প্রশ্ন। আমি এ নিয়ে আমাদের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলেছি। সংসদীয় গণতন্ত্রের বিভিন্ন দেশের সঙ্গেও কথা বলেছি, তারাও বলেছেন, তাদের মন্ত্রিসভা এভাবেই থাকে। তারাও পরিবর্তন করে না।

তিনি বলেন, যে বড় বড় প্রজেক্ট আমরা নিয়েছি, এখন ছোট করে একজনকে কয়েকটা মন্ত্রণালয় দিলে কাজগুলো সেভাবে হবে না। মন্ত্রিরা কিন্তু তার প্রজেক্টগুলো বাস্তবায়নে অনেক পরিশ্রম করছেন। এখন মন্ত্রিসভা ছোট করলে উন্নয়নে বাধা হবে কিনা, সেটাই বড় বিষয়। দেখা যাক কি হয়! বিরোধী দল ডিমান্ড করলে করব, না হয় এভাবেই থাকবে।

নেতাদের পেটালেও দুর্ঘটনা থামবে না

নিরাপদ সড়কের জন্য শুধুমাত্র চালকদের দোষারোপ নয়, সবার সচেতনতা জরুরি বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, অসচেতনভাবে চললে সড়ক দুর্ঘটনারোধ সম্ভব না। আমাদের নেতা যারা আছেন সড়ক পরিবহনের সঙ্গে, তাদের ধরে পেটালেও তো এ দুর্ঘটনারোধ সম্ভব হবে না। এজন্য সবার সচেতনা লাগবে।

কামালদের চিঠি পেলে মনোভাব

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপের দাবি ও সরকারকে চিঠি দেয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সংলাপের কোনো চিঠি আমি পাইনি। পাইলে মনোভাবের কথা জানাব।’

এ সময় তিনি বলেন, ‘ড. কামাল যাদের সঙ্গে ঐক্য করেছেন, তারা যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মদদদাতা, মানি লন্ডারিংসহ দুর্নীতিবাজ, এতিমের অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। এসব লোকদের সঙ্গে তাদের ঐক্য। তাদের জোটে তো আমি রাজনীতি খুঁজে পাচ্ছি না। আমি তো দেখছি একটা স্বার্থান্বেষী গ্রুপ এক হয়েছে। আমার কিছু বলার নেই। বাংলাদেশের মানুষ তাদের চাইলে চাইবে। আমার আপত্তি নেই।’

যার হাতে সৃষ্টি তারই আপত্তি

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ড. কামাল হোসেনকে একটা প্রশ্ন করেন। তিনি তো এই সংবিধান প্রণেতা। তাহলে তিনিই তো বাহাত্তরের সংবিধান সৃষ্টি করেছেন। তাহলে তিনি সেটার কোনো কোনো অনুচ্ছেদ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কিভাবে? যার হাতে সৃষ্টি, তিনিই এখন আপত্তি করেন কিভাবে?

শক্তি আ’লীগের আছে, সরকারও রাখে

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যথাসময়ে নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এখানে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নাই। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন, তারা স্বাধীনভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে সংশয় যারা সৃষ্টি করছে, তাদের উদ্দেশ্যটা কি? উদ্দেশ্যটা হলো, বাংলাদেশে যেন গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা না থাকে। এতে কিছু লোকের সুযোগ হবে। এটাই তো? কিন্তু, আমরা চাই বাংলাদেশের সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হোক, এটা হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

তিনি বলেন, আর ষড়ডন্ত্র বাংলাদেশের চিরাচরিত বিষয়। প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র চলছে, চলবে। এসব ষড়ডন্ত্র মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে পারছি। কারণ একটাই, জনগণের শক্তি। আর আমি এই শক্তিতে বিশ্বাস করি। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস আমার উপর আছে, আমি মনে করি। কাজেই সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আমরা সক্ষম হব। যেকোনো ষড়যন্ত্র মেকাবেলার শক্তি আওয়ামী লীগের আছে, এ সরকারও রাখে।

সন্ত্রাস রুখবে জনগণ

শেখ হাসিনা বলেন, দেশে নানা খেলা চলছে। দেখি কোন জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সিলেট মাজার থেকে নির্বাচনী প্রচারে নামবে, এটা ভালো কথা। কারণ, তারা নির্বাচনে আসছে। এর বাইরে যদি কেউ আবার অগ্নি সন্ত্রাস করতে চায়, বোমাবাজি করতে চায়, সরকারের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় করব। আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের জনগণও এটা রুখে দাঁড়াবে। আমি জনগণের কাছে সেই আহ্বান জানাব, তারা যেন সকলে মিলে রুখে দাঁড়ান।

মাটিতে যাদের যায়গা নাই, তারাই ছুটে বেড়ায়

অনেক কূটনীতিক আগামী নির্বাচন উপলক্ষে নাক গলাচ্ছে। এটা জেনেভো কনভেনশন লঙ্ঘন। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন কিনা? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো; যাদের মাটিতে জায়গা নাই, তারা পরগাছার মতো এখানে ওখানে ছুটে বেড়ায়। উন্নয়ন তারা দেখে না। বিদেশিদের কাছে নালিশ করে, বিরূপ চিত্র তুলে ধরে বিদেশিদের কথা বলতে প্ররোচিত করে। এজন্যই তারা কথা বলে। আগে এই নালিশ বন্ধ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।