ঐক্যফ্রন্টের ১৩ দফা নালিশ ইসিতে

বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির ছেলের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সভা হয়েছে দাবি করে নির্বাচন কমিশনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

সেই সঙ্গে ১৩ দফা দাবি তুলে ধরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে আলাদা চিঠি দিয়েছেন জোটের সবচেয়ে বড় দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে বিএনপির প্যাডে লেখা ওই চিঠি বৃহস্পতিবার ইসির সচিবের দপ্তরে পৌঁছে দেন দলের যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।

পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ক্ষমতাসীনরা এমন আচরণ করছে, মনে হচ্ছে ভোট থেকে সরে যেতে বাধ্য করার জন্যই তারা তড়িঘড়ি করছে। আমরা অবিলম্বে সার্বিক বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সিইসির নির্দেশনা চেয়েছি, যাতে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকে।”

নোতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, অন্য এলাকার লোকজনকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ, ‘দলকানা’ লোকদের পদায়ন, সার্কিট হাউজে ইসি সচিব ও মুখ্যসচিবের কথিত ‘রুদ্ধদ্বার’ বৈঠকের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে বিএনপির ওই ১৩ দফার মধ্যে।

এছাড়া জনপ্রশাসন ও পুলিশের ‘দলবাজ’ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার, ‘পুলিশের তথ্য অনুযায়ী’ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ না দেওয়া, গণমাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিজ্ঞাপন ও সরকারের উন্নয়নের প্রচার বন্ধ করার দাবি রয়েছে সেখানে।

রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন ‘বঙ্গভবনে’ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী রাষ্ট্রপতি পুত্রের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সভা ও আপ্যায়ন অনুষ্ঠান হয়েছে অভিযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ব্রিফ করার বিষয়ে ইসিতে নালিশ দেওয়ার পর এবার বঙ্গভবনের বিষয়ে অভিযোগ করল কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত এই জোট।

বিএনপি নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, “নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগের সচিব চট্টগ্রামের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পুলিশ সুপারদের ডেকে গত ১৬ নভেম্বর বৈঠক করেছেন।

“পরে ২০ নভেম্বর চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার, তার এলাকার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের ডেকে কিছু সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। এসব ঘটনা নির্বাচন আইনের লঙ্ঘন হয়েছে।”

কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার দাবি

জনপ্রশান সচিব, ইসি সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ, চট্টগ্রাম ও খুলনার বিভাগীয় কমিশনার; চট্টগ্রাম, ভোলা, কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, ঝিনাইদহ, খুলনা, কুষ্টিয়া, নড়াইল, ময়মনসিংহ, জয়পুরহাট, নওগাঁ, রাজশাহী ও সিলেটের জেলা প্রশাসকদের (রিটার্নিং অফিসার) প্রত্যাহার চেয়েছে বিএনপি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম তার চিঠিতে বলেছেন, এই কর্মকর্তারা ‘নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী’ হওয়ায় তাদের প্রত্যাহার করা দরকার।

র‌্যাবের ডিজি ও ডিএমপি কমিশনারসহ পুলিশ প্রশাসনের ৭০ জন কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে তাদের ভোটের দায়িত্ব থেকে বিরত রাখতে বলা হয়েছে চিঠিতে।

পাবনা, সিরাগঞ্জ, বগুড়া, নাটোর, নওগাঁ, চাপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, যশোর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনা, ভোলা, বরিশাল, সিলেট, শেরপুর, ময়নসিংহ, মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার পুলিশ সুপারের নাম রয়েছে ওই তালিকায়।

আলাল বলেন, “আমরা ঢালাও অভিযোগ করি না। আজকে লিখিতভাবে সব তথ্য প্রমাণসহ দিয়ে গেলাম।… ভবিষ্যতে যাতে এসব কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি না হয়, সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।”

বিএনপির ঢালাও অভিযোগ আমলে নেওয়া হবে না- ইসি সচিবের এম বক্তব্যের পর বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট আলাদা চিঠিতে নাম ধরে ধরে এই অভিযোগ দিল। তবে এ বিষয়ে কমিশনের কোনো বক্তব্য এখনও সাংবাদিকদের জানানো হয়নি।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ৩০ ডিসেম্বর ভোট হবে। তার আগে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত।