নরসিংদীতে আ.লীগের দু-গ্রুপের সংঘর্ষে নিখোঁজ ২ জনের লাশ উদ্ধার

অবশেষে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলের বাঁশগাড়ী ও নিলক্ষা ইউনিয়নে আ’লীগের দু-গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত নিখোঁজ কাউছার (৩২) ও আঃ হাই (৩০) নামে ২ জনের গলিত লাশ উদ্ধার করেছে রায়পুরা থানা পুলিশ। তারা সিরাজুল হক সমর্থিত বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার বিকালে নিখোঁজ নিহত দুই জনের লাশ নিলক্ষা ইউনিয়নের গোপিনাথপুর সংলগ্ন মেঘনা নদীতে লিয়াকত আলীর মাছের ঘেরের ভিতর থেকে পাওয়া গেছে বলে পুলিশ জানায়।

এলাকাবাসী জানায়, গত শুক্রবার চরাঞ্চলের বাঁশগাড়ী ইউনিয়নে আ’লীগের দু-গ্রুপ উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও বাশগাড়ী ইউপির ৬ বারের চেয়ারম্যান মরহুম সিরাজুল হক এবং বাশগাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম হাফিজুর রহমান সাহেদ সরকার সমর্থিত দুই গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে সংঘর্ষ হয়। এ সময় দুই ইউনিয়নে সংঘর্ষে নিহত ৪ জনসহ অর্ধশত আহত হয় এবং আরো নিখোঁজ দুই জনের লাশ উদ্ধার হওয়ায়। ফলে উক্ত ঘটনায় ৬ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের সিরাজুল হক সমর্থিত কাউছার ও আঃ হাইকে তুলে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ গুম করে রাখে বলে নিহত পরিবারের দাবী।

এদিকে সাহেদ সরকার সর্মথক এসএসসি পরীক্ষার্থী তোফায়েল আহম্মেদ রানা (১৭) নিহত হওয়ার ঘটনায় বাশগাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল হক সহ ৪৭ জনের নাম ও অঞ্চাত ১৫/২০ জনের নামে মামলা করেছে নিহতের পিতা আব্দুল্লাহ্ ফকির।

উল্লেখ্য গত ৩ মে র্দৃবৃত্তদের গুলিতে নিহত হয় বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের ৬ বারের চেয়ারম্যান সিরাজুল হক। উপ-নির্বাচনে নিহত সিরাজুল হক এর ছেলে আশরাফুল হক চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিল। দল প্রধান মরহুম সিরাজুল হক দৃর্বৃত্তদরে হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার ৪০ দিনপূর্বে সাহেদ সরকার স্ট্রোক করে মারা গেলেও দু পক্ষের সংষর্ঘ এখনও দফায় দফায় ঘটে। ফলে ঊভয় গ্রুপে পাল্টাপাল্টি টেটাযুদ্ধা ও গুলিবিনিময়সহ হামলা মামলা চলছে।

নিহত কাউছারের বড় ভাই ইউপি সদস্য গয়েছ আলী বলেন, আমার ভাই নিখোঁজ হওয়ার পরদিন আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক তার টেঁটাবিদ্ধ লাশ দেখে পুলিশ কে জানালেও ৬ দিনপর আমার ভাইয়ের লাশের সন্ধান পাওয়া যায়।

নিহত আঃ হাই এর ছোট ভাই হান্নান বলেন, আমার ভাই একজন সচিবের গাড়ির ড্রাইভার সে বৃহস্পতিবার বাড়িতে আসার পর শুক্রবার থেকে সংঘর্ষের সময় নিখোঁজ। পরে ফেসবুকে তার লাশের ছবি দেখতে পাই। গত শুক্রবার সাহেদ সরকারের লোকজন বাড়িতে ফিরলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘঠিত সংঘষের সময় আমার ভাই নিখোঁজ হয়। এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে পাশের ইউনিয়ন নিলক্ষায় যেখানে আরো কয়েকজন নিহত হন সেখানে আমার ভাইসহ ২ জনের লাশ গুম হয়।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, আধিপদ্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চরাঞ্চলের বাঁশগাড়ি, নিলক্ষা, মির্জাচর, চরমধুয়া ও পাড়াতলীতে র্দীঘ দিন ধরে এই সংঘর্ষ চলে আসছে। সিরাজুল হক নিহত হওয়ার পর প্রয়াত দুই চেয়ারম্যানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে এলাকা ছাড়া হতে হয় সাহেদ সরকার সমর্থকদের। ঘটনার দিন দুই জনের লাশ পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও সংঘর্ষ চলাকালীন সময় সোবহানপুর মেঘনা ঘাট থেকে ৯ টি আগ্নেয়াঅস্ত্রসহ ১৩ জনকে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে রায়পুরা থানায় অস্ত্র আইনে দুটি মামলা দায়ের করে।

এই বিষয়ে রায়পুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহসিনুল কাদের বলেন, লাশ দুটি নিলক্ষার গোপীনাথপুর এলাকা সংলগ্ন মেঘনা নদী থেকে লিয়াকত আলীর মাছের ঘের থেকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।

এদিকে উপরোক্ত এ ঘটনা আওয়ামী লীগের দায় নয় বলে সংবাদিক সম্মেলন করেছে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগ। গত ১৯ নভেম্বর জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরো (বীরপ্রতীক) এমপি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূইয়া প্রমুখ।