নওয়াপাড়ায় নৌযান শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার

দাবি মেনে নেওয়ায় যশোরের নওয়াপাড়ায় নৌযান শ্রমিকদের ৬০ ঘন্টা কর্মবিরতির পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে কাজে যোগ দিয়েছে শ্রমিকেরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনায় অভ্যান্তরিণ নৌ-পরিবহন মালিক সমিতির বিভাগীয় কার্যালয়ে সংশ্লিষ্টি ইউনিয়নের নের্তৃবৃন্দের সাথে বৈঠক শেষে এ কর্ম বিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়।

খুলনা বিভাগীয় অভ্যান্তরিণ নৌ-পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ওহিদুজ্জামান খান পল্টুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, নৌ পরিবহন মালিক সমিতির যুগ্ম মহাসচিব হাফিজুর রহমান চন্দন, নৌযান ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক চৌধূরি আশিকুল আলম পটল, কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি বাহারুল ইসলাম বাহার, লঞ্চ লেবার খুলনা শাখার এসাসিয়েশন খুলনা শাখার সভাপতি রফিকুল ইসলাম,সাধারণ সম্পাদক আকবর আলী, যুগ্ম সম্পাদক হাসান মাষ্টার, ফারুক মাষ্টার, নওয়াপাড়া নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সদস্য সচিব নিয়ামুল ইসলাম রিকো, নওয়াপাড়া সার ও খাদ্য ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি আব্দুল গণি সরদার, সাধারণ সম্পাদক শাহ জালাল হোসেন, যশোর জেলা ট্রাক ও ট্রাংকলোরি শ্রামক ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক রবিন অধিকারী ব্যাচা, নওয়াপাড়া হ্যান্ডলিংক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপিত ফাল্গুন মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক কারুল ইসলাম সরদার, নওয়াপাড়া শ্রমজীবি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন বিশ্বাস, নওয়াপাড়া অভ্যান্তরিন নৌ- বন্দর কর্মকর্তার প্রতিনিধি সহ অনেক নের্তৃবৃন্দ।

নৌযান ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি বারুল ইসলাম জানান, আমাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এম ভি রাইসা সীমান্ত জাহাজে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত দুইজন দুর্বৃত্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। লাইটারেজ ইউনিয়নের নামে চাদা আদায় হবেনা মর্মে মটর শ্রমিক ও হ্যান্ডলিংক শ্রমিক ইউনিয়নের নের্তৃবৃন্দ দায়-দায়িত্ব নিয়েছেন। এ ছাড়া নৌ বন্দরের অন্যান্য সমস্যা সমাধানের জন্য নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। যে কারনে আমরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে নৌযানের লোড আন লোডের কাজ শুরু হয়েছে এবং স্বাভাবিক ভাবে নৌযান চলাচল করছে।

এদিকে নওয়াপাড়ায় নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারনে শিল্প-বাণিজ্য নগরী নওয়াপাড়ায় ব্যবসা বাণিজ্যে মারাত্মক প্রভাব পড়েছিল। ব্যাংক লেনদেন ভাটা পড়েছিল। ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির ছিল। চারশতাধিক ঘাটে লোড আন লোডের কাজ বন্ধ থাকায় ১৫ হাজার শ্রমিকের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুনরায় কাজ শুরু হলে হাদের মুখে হাসি ফুটে উঠে।

প্রসঙ্গত,গত ৩০ নভেম্বর সন্ধ্যায় নওয়াপাড়ার ভাঙ্গাগেট এলাকায় অবস্থিত পরশ অটো রাইস মিলের নিজস্ব ঘাটে অবস্থানরত এমভি রাইসা সিমান্ত-২ জাহাজে ডাকাতি সংঘটিত হয়। ডাকাতেরা জাহাজের একজন শ্রমিকে ছুরিকাহত করে নগদ টাকা মোবাইল ফোনসহ মালামাল লুটে নেয়। অব্যাহতভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে তারা দাবি করেন। এরপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার থেকে ১৩ দফা দাবি আদায়ের লক্ষে শ্রমিকেরা এ কর্মবিরতি পালন করে আসছে। এছাড়া অপরিকল্পিতভাবে নদী ড্রেজিং করায় জাহাজ চলাচলে বিঘ্নসৃষ্টি, নদী দখলের কারণে জলাশয় সংকীর্ণ হওয়া, অবৈধভাবে লাইটারেজ ইউনিানের নামে চাঁদাবাজি, ঘাটে জেটি ও পানি ব্যবস্থাপনা করে জাহাজ সঠিক জায়গায় ভেড়ানো, ঘাটে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় নদীর ওপর পাড়ে জাহাজ ভেড়ালে হাজার টাকা চাঁদা প্রদান, ঘাটে লোড আনলোড কাজে সিঁড়ির ব্যবস্থা করা, খুলনা থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষের সিরিয়াল নির্ধারণ, অভয়নগর থানা ভবনের বিপরীত পাশে নদীর মধ্যে নিমজ্জিত একটি মন্দির অপসারণ, নৌ-নিরাপত্তা জোরদারসহ ১৩ দফা দাবি আদায়ের জন্য এই কর্মবিরতি পালন শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি বাহারুল ইসলাম বাহার জানান, আগামী তিনদিনের মধ্যে এসব দাবি মানা না হলে খুলনা নৌবন্দর ও মোংলা সমুদ্র বন্দরসহ দেশের সকল বন্দরে একযোগে কর্মবিরতি পালন করা হবে।