অভয়নগরে ভিজিএফ’র চাল আত্মসাৎ, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় ঘেরাও

যশোরের অভয়নগর উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের(ইউপি) চেয়ারম্যান বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে দুস্থ নারীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া ভালনারেবল গ্রুপ ডেভলপমেন্ট(ভিজিডি) কর্মসূচির ৭ হাজার ৮০০ কেজি চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ জনগণ সোমবার উপজেলার ভাটপাড়ায় অবস্থিত ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় ঘেরাও করে রাখেন। পরে তাঁরা ইউপি কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।

ঘটনার পর থেকে চেয়ারম্যান পলাতক রয়েছেন। ঘটনা তদন্তে একটি তদন্ত দল সোমবার বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদে যান। মঙ্গলবার(১৪/০১/১৯) তদন্ত দল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।

ইউনিয়ন পরিষদ সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ২৬০ জন দুস্থ নারীকে দুই বছর মেয়াদি প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে ভিজিডির চাল দিচ্ছে। গত ৫ ডিসেম্বর তাঁদের ডিসেম্বর মাসের চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই চাল উপকারভোগী নারীদের মধ্যে গত ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বিতরণ করার কথা ছিল। চেয়ারম্যান বাবুল আক্তার গত ১০ ডিসেম্বর বরাদ্দের ৭ হাজার ৮০০ কেজি চাল উত্তোলন করেন। তিনি ওই চাল উপকারভোগীদের মধ্যে বিতরণ না করে কালোবাজারে বিক্রি করে দেন। উপকারভোগী নারীরা প্রায় প্রতি দিনই ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে চালের জন্য গিয়ে খালি হাতে ফিরে আসতে থাকেন। কয়েকদিন আগে চেয়ারম্যান চৌকিদারে মিন্টু দাসকে দিয়ে কয়েকজন উপকারভোগী নারীকে ডেকে এনে ৫০০ টাকা করে দিয়ে কার্ডে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ টাকা নিতে চাননি।

বিষয়টি জানাজানি হলে সোমবার সকাল ১০ টার দিকে পাঁচ শতাধিক মানুষ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় ঘেরাও করেন। তাঁরা দুপুর ১২টা পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় ঘেরাও করে রাখেন। তাঁদের সাথে কয়েকজন ইউপি সদস্য ও উপকারভোগী নারীও ছিলেন। বিষয়টি টের পেয়ে চেয়ারম্যান আগেই সেখান থেকে পালিয়ে যান। এ সময় বিক্ষুদ্ধ জনগণ চৌকিদারে মিন্টু দাসকে ধরে পিটুনি দেন এবং তাঁকে কিছুক্ষণ দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন।
এরপর দুপুর ১২ টায় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সোলায়মান বিশ্বাস প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন।

সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মল্লিক শওকত হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুজ্জামান কুদ্দুস, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক অর্জুন সেন, বাঘুটিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি এম এম আজিম উদ্দীন, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য গোলাম হোসেন, ওসমান শেখ, আব্বাস বিশ্বাস, হাফিজুর রহমান, আবু হোসেন, আবু মুছা, রোজিনা খাতুন ও রেবেকা খানম। তাঁরা আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। অন্যথায় ইউপি কার্যালয়ের সামনে গণসমাবেশ করা হবে বলে সমাবেশে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

ভাটপাড়া গ্রামের উপকারভোগী রিনা দাস বলেন, ডিসেম্বর মাসের চাল পাওয়ার জন্য কয়েক বার পরিষদে গিয়েছি। চেয়ারম্যান বলেছেন নির্বাচনের কারণে চাল আসতে দেরি হচ্ছে। চাল আসলে পাবেন। আজ সকালে চেয়ারম্যান পলান দিয়েছেন।

অপর উপকারভোগী পাইকপাড়া গ্রামের তাসলিমা বেগম বলেন, চেয়ারম্যান আমাকে চৌকিদার দিয়ে পরিষদে ডেকে আনেন। তিনি আমার কার্ড নিয়ে ৫০০ টাকা ধরিয়ে দেন। আমাকে কার্ডে সই করতে বলেন। আমি টাকাও নেইনি। সইও করিনি।

এদিকে ঘটনা তদন্ত করতে সোমবার দুপুরে বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যান উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা রিনা মজুমদার, উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ও ইউনিয়নের তদারকি কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রিজিবুল ইসলাম এবং বিআরডিবির প্রকল্প কর্মকর্তা আমিনুর রহমান।

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা রিনা মজুমদার বলেন, তদন্তের সময় ৪৮ জন উপকারভোগী নারী উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা ডিসেম্বর মাসের চাল পাননি। অন্য উপকারভোগীরাও চাল পাননি। অথচ গত ১৫ ডিসেম্বর চাল বিতরণের শেষ সময়মীমা ছিল। এ সময় চেয়ারম্যান অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি চাল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। ইউএনও ছুটিতে আছেন। মঙ্গলবার তিনি যোগদান করবেন। তাঁর নিকট তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে।

এ ব্যাপার কথা বলার জন্য চেয়ারম্যান বাবুল আক্তারের মুঠোফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।