মাদক কারবারিদের সুস্থ জীবনে ফেরার সুযোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী

মাদক সংশ্লিষ্ট যারা ‘সুস্থ জীবনে’ ফিরতে চায়, তাদের সুযোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে যাওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধুমাত্র তাদের (অপরাধী) বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিলেই যে তারা ভালো হয়ে যাবে তা না। বরং তাদেরকে সমাজের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারাটাও কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’

রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এই নির্দেশনা আসে। টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তর পরিদর্শনের অংশ হিসেবে এই বৈঠক করেন তিনি। এর আগে প্রথমে প্রতিরক্ষা এবং পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেন তিনি।

কক্সবাজারে পুলিশের ‘তালিকাভুক্ত’ একদল মাদক চোরাকারবারির আত্মসমর্পণে রাজি হওয়ার খবর এসেছে গণমাধ্যমে।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সুন্দরবনের দস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরা এবং সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে পুর্নবাসনে সহায়তার কথাও তুলে ধরেন।

গতবছর মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে কথিত বন্দুকযুদ্ধে। এই অভিযান নিয়ে মানবাধিকারকর্মীদের সমলোচনাও শুনতে হয়েছে সরকারকে। তবে অভিযান চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী।

গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়ের পর নতুন সরকার গঠন হলে বিশেষ করে ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। এরপর কক্সবাজারের চিহ্নিত মাদক পাচারকারীদের একটি অংশ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে আত্মসমর্পণ করতে নিরাপত্তা হেফাজতে এসেছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

পুনর্বাসনের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্যথা তারা আবার পুরনো জীবনে ফিরে যায়। বলেন, যারা সংসারে ফিরে আসতে চাইবে, তাদেরকেও সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে।

মাদকাসক্তদের নিরাময় কেন্দ্রের সেবা বাড়ানোরও তাগিদ দেন শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি মাদকের বিরুদ্ধে জন সচেতনতা তৈরিরও তাগিদ দেন।

জঙ্গিবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি চালানো সচেতনতামূলক কর্মর্সূচির সাফল্যের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

মাদক, জঙ্গিবাদের মত দুর্নীতির বিরদ্ধে সরকারের শক্ত অবস্থানের কথাও বৈঠতে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে

সরকারি কর্মীদের দুর্নীতিমুক্ত হয়ে কাজ করারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তাদের বেতন-ভাতা ও সুবিধা বাড়ানোর পর দুর্নীতি কমা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতিও একটা কালো ব্যধি। এটা সমাজের উন্নয়ন যথেষ্ঠ ব্যহত করে। সে ব্যাপারে যথেষ্ঠ সচেতন হতে হবে এবং দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।’

দুর্নীতির বিস্তারের জন্য ৭৫ পরবর্তী সরকারগুলোকে দায়ী করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে দেশেই মিলিটারি ডিক্টেটররা ক্ষমতায় আসে, তারা প্রথমেই সমাজটাকে ধ্বংস করে দেয়। দুর্নীতিটাকে তারা নীতি হিসেবে নেয় এবং সুযোগও সৃষ্টি করে দেয়। ঋণখেলাপি থেকে শুরু করে যা কিছু বাংলাদেশে আমরা দেখি, তার গোড়াপত্তন কিন্তু ৭৫ এর পরে যারা ক্ষমতায় এসেছে তারাই সৃষ্টি করে গেছে।’

উপজেলা পর্যায়ে সরকারি চাকুরেদের আবাসন সংকট নিরসন করা হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লোকবল অনুযায়ী যানবাহন, জলযান ও পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করার কথাও জানান তিনি। এজন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে পরিকল্পনা মাফিক চাহিদাপত্র তৈরির কথাও বলেন তিনি।

যানজট নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রণালয়কে আরো তৎপর আর পথচারীদের আরও সচেতন হওয়ারও তাগিদ দেন সরকার প্রধান। বলেন, ‘অর্থনীতির আকার যতো বাড়ছে, ততোই বাড়ছে রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা। প্রাফিক সমস্যা এখন বড় সমস্যা। দুর্ঘটনার জন্য চালকের পাশাপাশি, পথচারী ও নাগরিকরাও দায়ী। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও মানুষ কেন অস্বাভাবিক আচরণ করে, তা বুঝি না। যানজট নিরসনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।’

বৈঠকে সূচনা বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। জননিরাপত্তা বিভাগ ও সুরক্ষা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানরাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।