শ্রীলঙ্কায় মসজিদে হামলা, উদ্বিগ্ন মুসলিমরা

শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় সিরিজ বোমা বিস্ফোরণে ব্যাপক প্রাণহানির মধ্যেই মসজিদ ও মুসলিমদের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলার ঘটনা ঘটেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স খবর দিয়েছে, রোববার সকাল পৌনে ৯টার দিকে কলম্বোর তিনটি গির্জায় ইস্টার সানডেতে প্রার্থনারতদের ওপর প্রথমে সন্ত্রাসীরা বোমা হামলা করে।

এরপর ২০ মিনিট পরে শহরের তিনটি পাঁচ তারকা হোটেলে একই ধরনের হামলা চালায়। আর দুপুরে আরও দুটি স্থানে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে।

এসব হামলার পর দেশটিতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। বিশেষ করে মুসলিমদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

রয়টার্স বলছে, সন্ত্রাসী হামলার জেরে শ্রীলঙ্কায় নতুন করে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইতোমধ্যে পুলিশ জানিয়েছে, রোববার রাতে রাজধানীর উত্তরাঞ্চলের একটি মসজিদে পেট্রলবোমা নিয়ে দুর্বৃত্তরা হামলা করেছে।

পুত্তালুম জেলার ওই মসজিদে হামলার পর পশ্চিমাঞ্চলের বান্দারাগামা এলাকায় মুসলিম মালিকানাধীন দুটি দোকান আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যদিও এসব ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।

তবে শ্রীলঙ্কার মসুলিম সম্প্রদায় ভীষণ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।

দ্য অল সিলন জমিয়াতুল ওলামা (এসিজেইউ) এই সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছে।

এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি মুফতি এমআইএম রিজভী বলেছেন, ‘আমাদের খ্রিস্টান ভাই-বোনেরা ইস্টার সানডেতে প্রার্থনা করছিলেন। সেখানে ঘৃণ্য হামলা করা হয়েছে। এটি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।’

শ্রীলঙ্কার মুসলিমদের পক্ষে তিনি শোকাগ্রস্ত খ্রিস্টানদের প্রতি সমবেদনা জানান। সবাইকে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানান।

একইসঙ্গে মুফতি রিজভী সব সম্প্রদায়ের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

রোববারের ভয়াবহ হামলার দায় এখন পর্যন্ত কেউ স্বীকার করেনি। এ ব্যাপারে সরকারও স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। হামলায় সোমবার দুপুর পর্যন্ত ২৯০ জন নিহত ও ৫০০ জন আহতের খবর দিয়েছেন কলম্বো পুলিশের মুখপাত্র রুয়ান গুনাসেকারা।

হামলার পরপরই দেশটির কর্তৃপক্ষ বড় ধরনের নিরাপত্তা অভিযান শুরু করেছে। এই অভিযানে হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন ২৪ জনকে আটক করেছে।

হামলার ভয়াবহতায় শ্রীলঙ্কার মানুষ হতবিহ্বল হয়ে গেছে। দেশজুড়ে এখন শোকাবহ বিরাজ করছে।

সোমবার সকালে দেশটির রাজধানী কলম্বের রাস্তাঘাট ছিল প্রায় জনশূন্য। সড়কে যানবাহন ছিল খুবই কম। অধিকাংশ দোকানপাটই ছিল বন্ধ।

গুরুত্বপূর্ণ হোটেল ও স্থাপনার বাইরে সেনা সদস্যদের সশস্ত্র অবস্থায় অবস্থান করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রাজধানীতে ভারি অস্ত্রে সজ্জিত সেনা ও পুলিশি টহল দিচ্ছে।

সরকারি সূত্র বলছে, হামলার সময় প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা বিদেশে অবস্থান করছিলেন। তিনি দেশে ফিরে সোমবার তিনি জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সভা করবেন। এই সভায় প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেও অংশ নেবেন।

সেনাবাহিনীর মুখপাত্রের সূত্র জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের ফেরার পরিবেশ তৈরি করতেই সোমবার সকালে কলম্বোর বিমানবন্দরে সতর্ক অবস্থান নেয়া হয়। সে সময়েই প্রেসিডেন্টের যে গেট দিয়ে বের হবার কথা, সেখানে শক্তিশালী পাইপ বোমের সন্ধান পায়।

এরপর বিমানবাহিনীর সদস্যরা সেটি সফলভাবে নিষ্ক্রিয় করে।

২০১৩ সালে তামিল বিদ্রোহীদের সঙ্গে শ্রীলঙ্কান সরকারের দীর্ঘ ১০ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান হয়। এরপর শ্রীলঙ্কায় এ ধরনের বড় কোনো হামলার ঘটনা এই প্রথম ঘটল।

শ্রীলঙ্কার জনসংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখ (২২ মিলিয়ন)। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে খ্রিস্টান, মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের সবমিলে ৮ থেকে ১২ শতাংশ মানুষ রয়েছেন।