র‌্যাংকিংয়ে ঢাবি না থাকার কারণ জানালেন বিএনপি নেতা ড. মঈন খান

সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিংয়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম না থাকার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।

রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সম্প্রতি লন্ডনভিত্তিক টাইমস হায়ার এডুকেশন পরিচালিত র‌্যাংকিং ব্যবস্থা এশিয়ার ৪১৭ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত আমাদের সবার গর্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থান করে নিতে পারেনি।

কারণ হিসেবে বিএনপির এ নেতা বলেন, কোর্স কারিকুলাম বা সিলেবাসসমূহ অনেক ডিপার্টমেন্টেই উন্নত বিশ্বের নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হালনাগাদ করা হয় না।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো থেকে ছাপা হওয়া নামি প্রকাশকের পাঠ্যবইয়ের বদলে অখ্যাত ভারতীয় বা অনুন্নত বিভিন্ন দেশের প্রকাশকের পাঠ্যবইগুলো বেছে নেয়া হয় ক্লাসরুমে পাঠদানের জন্য।

ঢাবিতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব আজ চরম আকার ধারণ করেছে। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাকে মূল্যায়ন না করে নিছক দলীয় রাজনৈতিক কর্মী অর্থাৎ ছাত্রলীগের কর্মীকে নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে ভোটার তৈরির চেষ্টা করা হয়, যাতে শিক্ষক রাজনীতিতে প্রভাব বজায় রাখা সম্ভব হয়।

এ ছাড়া দ্রুতগতি সম্পন্ন ইন্টারনেটসহ সমৃদ্ধ লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগার না থাকাকেও র‌্যাংকিংয়ের অন্তরায় হিসেবে দায়ী করেন মঈন খান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান পদ্ধতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আজও কেবল পাঠ্যবই থেকে স্কুলের বাচ্চাদের যেভাবে পড়ানো হয়ে থাকে, সে রকমই একমুখী লেকচারভিত্তিক পদ্ধতিই অনুসরণ করা হয়।

পরীক্ষা পদ্ধতিরও সমালোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ ছাত্র।

তিনি বলেন, শিক্ষকের দেয়া লেকচারের ওপর নেয়া ক্লাস নোট অনুসরণ করে কিংবা বড়জোর পাঠ্যবই থেকে মুখস্থ করে পাস করা যায়, এমন প্রশ্নপত্রই তৈরি করা হচ্ছে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা নিয়ে মঈন খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হবার কথা শিক্ষা ও গবেষণার স্থান। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কার্যক্রম অপ্রতুল যা আমরা সবাই জানি। গবেষণা তহবিলের অপ্রতুলতার কথাও বহুল আলোচিত।

‘রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকের যোগ্যতা যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয় তবে তাকে দিয়ে মানসম্মত গবেষণা করানো কতটুকু সম্ভব তার উত্তর সবারই জানা,’ যোগ করেন তিনি।

এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের পরীক্ষা নেয়া এবং খাতা দেখার মত কাজের জন্য বাড়তি সময় দেয়ার কারণেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা মৌলিক গবেষণায় অংশগ্রহণের জন্য পর্যাপ্ত সময় বের করতে পারেন না বলে মনে করেন বিএনপির এ নেতা।

ড. মঈন খান আরও বলেন, যে কোনো মানসম্মত মৌলিক গবেষণা প্রকাশের মাধ্যম হল আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত ও স্বীকৃত একাডেমিক জার্নালসমূহ। সেসব জার্নালে মৌলিক গবেষণাপত্রগুলো কঠোরতম পিয়ার রিভিউর নানা ধাপ পেরিয়ে ছাপানো হয়ে থাকে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে নিয়োগ বা পদোন্নতির জন্য গবেষণাপত্র কোথায় কোন জার্নালে প্রকাশ হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে কোনো বিশেষ মর্যাদা বা ইনসেনটিভ প্রদান করা হয় না।

‘যে কোনো জার্নালে বা পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণাপত্রকে একই পাল্লায় মাপা হয়। ফলে যে জার্নালে মৌলিক গবেষণাপত্র ছাপাতে বেশ কষ্ট স্বীকার করা লাগে এবং কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন পড়ে সেই সমস্ত জার্নালের পেছনে না ছুটে খুব সহজেই ছাপা যায় এমন জার্নালে গবেষণাপত্রের নামে কিছু একটা ছেপে নিয়োগ ও পদোন্নতি বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলে।’

তিনি আরও বলেন, বিশ্বায়নের এই যুগে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা সংস্থাগুলোর মধ্যে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের আওতায় জ্ঞান আদান-প্রদানের প্রয়োজনীয়তা সর্বজনস্বীকৃত। এতে করে উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণাগারে লব্ধ জ্ঞান অনুন্নত বিশ্বের গবেষকরা সহজে জানতে পারেন এবং তার ভিত্তিতে নিজেদের পরবর্তী গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম মান্ধাতা আমলেই রয়ে গেছে। মূলত কাগজেপত্রের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে।

‘বিশ্বমানের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে এমন কোনো উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জ্ঞানভিত্তিক সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পরিলক্ষিত হয় না। এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রৃাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপন করা উচিত এমন সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যাদের বৈশ্বিক পর্যায়ের র‌্যাঙ্কিং উল্লেখযোগ্যভাবে উঁচুমানের এবং গবেষণা কার্যক্রমে বিশ্বব্যাপী সুনাম রয়েছে।’

তিনি জানান, বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ২৮৩টি এক্সচেঞ্জ চুক্তি বলবৎ রয়েছে দেশ বিদেশের নানা বিশ্ববিদ্যালয় বা সংস্থার সঙ্গে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি বিনষ্ট হয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, একসময় অনেক বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী পড়তে এলেও আমার জানামতে এই মুহূর্তে একজনও বিদেশি শিক্ষাথী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত নাই। আমার জানামতে ভাষা ইন্সটিটিউটে পূর্ণকালীন ও খণ্ডকালীন মিলিয়ে হাতেগানা কয়েকজন শিক্ষক রয়েছেন। অন্য কোথাও কোনো বিভাগে বিদেশি শিক্ষক বা গবেষকের দেখা বলতে গেলে মেলেই না।