জনবল সংকটে দেশসেরা চৌগাছা মডেল হাসপাতাল

চিকিৎসা সেবায় ১২ বার দেশসেরা পুরস্কার পাওয়া যশোরের চৌগাছা মডেল হাসপাতালে জনবল সংকট দেখা দিয়েছে। বর্তমানে অর্ধেক জনবল দিয়ে চলছে এই হাসপাতালের কার্যক্রম। ফলে মানসম্মত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগিরা।

হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট চিকিৎসকের পদ রয়েছে ২১টি। খাতাকলমে রয়েছেন ১১ জন। যদিও এরমধ্যে একজন সংযুক্তিতে রয়েছেন ঢাকায়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সেলিনা বেগম পদোন্নতি পেয়ে গত ১১ এপ্রিল ঝিনাইদহে সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদান করার পর থেকে পদটি শূন্য ছিল। গত ২২ মে এই পদে যোগদান করেন ডা. মাসুদ রানা।

এছাড়া উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনে গত ৭ এপ্রিল তিন বছরের জন্য বাইরে গেছেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আওরঙ্গজেব। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ডা. নাহিদ সিরাজ। হাসপাতালে এই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি অ্যানেসথেসিয়া ও শিশু বিশেষজ্ঞসহ ১০ জন মেডিক্যাল অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে।

এছাড়া চারজন সিনিয়র স্টাফ নার্স, প্রধান সহকারী, ক্যাশিয়ার, অফিস সহকারী, এমএলএসএস, ওয়ার্ড বয় ও আয়া এসব পদের মধ্যে ৩১টি রয়েছে শূন্য। বর্তমানে জোড়াতালি দিয়ে চলছে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম।

হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, বিগত দিনে চৌগাছা মডেল হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সাবেক চিকিৎসক ইমদাদুল হকের চেষ্টায় অন্তঃসত্ত্বাদের উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেন। মা ও প্রসূতিসেবায় অবদান রাখার ফলে ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এটি উপজেলা পর্যায়ে একটানা দেশসেরা হাসপাতাল হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ২০১৬ সালেও হাসপাতালটি অর্জন করে জাতীয় পুরস্কার। সর্বশেষ স্বাস্থ্যসেবায় সারাদেশে প্রথম স্থান অর্জন করে গত ৭ এপ্রিল পেয়েছে ‘হেল্থ মিনিস্টার ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড-২০১৮’। ওইদিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার গ্রহণ করেন তৎকালীন প্রতিষ্ঠান প্রধান সেলিনা বেগম।

দীর্ঘদিন গাইনি বিশেষজ্ঞ না থাকায় মেডিক্যাল অফিসার ডা. সুব্রত কুমার বাগচিকে দিয়ে প্রসূতিদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হতো। তিনিই করতেন সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার। সম্প্রতি হাবিবা সিদ্দিকা ফোয়ারা নামে একজন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) যোগদান করেছেন।

চৌগাছা উপজেলার কয়ারপাড়া গ্রামের আবুল কাশেম, হাকিমপুর গ্রামের আমেনা বেগমসহ অনেকেই জানান, এখানে জরুরি মুহূর্তে সেবা পাওয়া কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুপুর আড়াইটার পর অনেককেই খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে সামান্য সমস্যায় রোগীদের ছুটতে হচ্ছে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালসহ বেসরকারি বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। দেশসেরা হাসপাতালে সেইরকম চিকিৎসাসেবা নেই বলে তারা মন্তব্য করেন।

হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাসুদ রানা বলেন, ‘চলতি মাসে আমি এই হাসপাতালে যোগদান করেছি। অর্ধেক ফিজিশিয়ান নিয়েই আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। মোট লোকবল ১৪১ জন। এরমধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৭৯জন, ফাঁকা রয়েছে ৬২ জন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই লোকবলে কোয়ালিটি সার্ভিস দেওয়া সম্ভব নয়। রোগীদের সন্তুষ্টির জন্যে অবশ্যই শূন্যপদে লোক নিযোগ করতে হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শূন্য পদে লোকবল নিয়োগে অনলাইনে সফট কপি ও হার্ডকপি উভয় প্রক্রিয়ায় আবেদন করা হয়েছে।’

জানতে চাইলে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেন, ‘দেশে ডাক্তার ও হাসপাতালের সংখ্যার অনুপাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচজন করে ডাক্তার ভাগে পড়ে। সেই অনুপাতে চৌগাছায় বেশিই আছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘৩৯তম বিসিএসের পদায়ন খুব শিগগির সম্পন্ন হবে। এতে সাড়ে চার হাজার চিকিৎসকের পদায়ন হলে আশা করা যায় চিকিৎসক সংকট থাকবে না। চলতি মাসে (জুন) এ সমস্যার সমাধান হবে।’