ডিআইজি মিজানের ভাগ্নে এসআই মাহমুদুলকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ

দুদকের মামলায় পুলিশের বরখাস্ত হওয়া ডিআইজি মিজানের ভাগ্নে এসআই মাহমুদুলকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এর আগে সোমবার দুপুরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে তাকে গ্রেফতার করে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আগাম জামিন চেয়ে মিজানুরের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার বিকালে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

রমনা অঞ্চলের পুলিশের সংশ্লিষ্ট ডিসির প্রতি এই নির্দেশ দেন আদালত।

শুনানিতে আদালত বলেছেন, ডিআইজি মিজানুর রহমানের কার্যক্রম ও বক্তব্য পুলিশের সুনাম এবং ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে।

এর আগে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় আগাম জামিন চাইতে হাইকোর্টে হাজির হন ডিআইজি মিজান।

সোমবার বেলা সোয়া তিনটার দিকে কোর্টে হাজির হন ডিআইজি মিজান। আবেদনটি শুনানির জন্য উঠলে তার আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন মেহদী বলেন, আমাদের সিনিয়র আইনজীবী এম আমিন উদ্দিন ডিআইজি মিজানের পক্ষে শুনানি করবেন, তাই সময় চাচ্ছি।

পরে বেলা পৌনে চারটার দিকে মমতাজ উদ্দিন মেহদী নিজেই শুনানি করেন। এ সময় ডিআইজি মিজান আদালতে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

শুনানিতে আদালতে বলেন, মিজান খুবই সৎ একজন পুলিশ অফিসার এবং তিনি সুনামের সঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমন করেছেন। পুলিশ বাহিনীতে গৌরবজ্জল ভূমিকা রয়েছে তার। তিনি শান্তিরক্ষা মিশনেও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।

আইনজীবী বলেন, মামলায় সম্পদের তথ্য গোপন যে অসঙ্গতির কথা বলা হয়েছে, সেটা আমি অসঙ্গতি বলে মনে করি না। এটা বিরাট কিছু না।

এ সময় বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, সে (মিজান) পুলিশের ভাবমূর্তি পুরোপুরি নষ্ট করেছে। আমরা টিভিতে দেখেছি, (দুদকের একজন পরিচালককে) ঘুষ দেওয়ার ব্যাপারে সে ডেসপারেট বক্তব্য দিয়েছে। এ সময় জামিন নাকচ করে হাইকোর্ট আদালতে উপস্থিত মিজানকে গ্রেফতারে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে ঢাকার মহানগর বিশেষ জজ আদালতে হাজির করতে বলা হয়। এ সময় উপস্থিত সব আইনজীবী ইয়েস ইয়েস বলে আদালতের আদেশের প্রতি সমর্থন জানান।

বিকাল চারটায় আদালতের কাযক্রম শেষ হলে ডিআইজি মিজানের পাশে পুলিশের একজন কনস্টেবল তার পাশে এসে বসেন। এ সময় বিপুল সংখ্যক মিডিয়াকর্মী ও উৎসুক মানুষ আদালত প্রাঙ্গনে ভিড় করেন।

পরে বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে একটি জিপ গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১১৭২২) করে পুলিশের একটি টিম ডিআইজি মিজানকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। শুনানিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান উপস্থিত ছিলেন।

আদেশের পর খুরশীদ আলম খান বলেন, ডিআইজি মিজানের আগাম জামিন আবেদন আদালত খারিজ দিয়েছেন এবং আদালত মন্তব্য করে বলেছেন, ডিআইজি মিজান পুরো পুলিশ প্রশাসনের ইমেজ নষ্ট করেছে। কাজেই তাকে ডিএমপিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে মেট্রোপলিটন-৩ এর স্পেশাল জজ ঢাকা কোর্টে উপস্থাপন করা হবে।

তিনি বলেন, এটি একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। আমার জানা মতে, এতবড় বড় অফিসারকে গ্রেফতারের ঘটনা আমি আর দেখিনি। আদালত সুক্ষ্মভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে একটি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে উনি হাজতে চলে যাবেন। আইন অনুযায়ী যা হবার তাই হবে।

গত ২৪ জুন ৩ কোটি ৭ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগে মিজানুরের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় মিজানুর রহমান, তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না, ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান ও ভাগনে পুলিশের কোতোয়ালি থানার এসআই মো. মাহমুদুল হাসানকে আসামি করা হয়।