ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করবে তালশাঁস ও ওলকচু

‘ডায়াবেটিস (বহুমূত্র রোগ)’। এমন কোনো বয়সের মানুষ নেই যারা এই মারাত্মক রোগে ভুগছেন না। দেশে ও দেশের বাইরে হু হু করে বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা।

অনিয়মতান্ত্রিক জীবনধারা, অনিয়মিত ও অপরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাসসহ নানা কারণে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। তবে জেনেটিক বা বংশগত কারণেও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি একেবারেই কম নয়।

ব্যয়বহুল চিকিৎসার কারণে নিু আয়ের ডায়াবেটিস রোগীদের ভুগতে হয় ধুকে ধুকে। যে কারণে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা একের পর এক উদ্ভাবনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের পন্থা।

তবে দেশেই এবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে দারুণ এক সাফল্য অর্জন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শেখ শাহিনুর রহমান। তিনি দেশে উৎপাদিত ওলকচু ও তালশাঁস থেকে উদ্ভাবন করেছেন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার এক কার্যকর পদ্ধতি। ওলকচু ও তালশাঁস দেশে উৎপাদিত হওয়ায় নিু আয়ের ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও তা দারুণ সুসংবাদ বটে। তালশাস ও ওলকচু যে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম, সম্প্রতি সেই প্রমাণ দিয়েছেন সহকারী অধ্যাপক শেখ শাহিনুর রহমান।

শেখ শাহিনুর রহমান জানান, তাল ও ওলকচু ডায়াবেটিস প্রতিরোধে যাদুকরী গুণসম্পন্ন। ডায়াবেটিসের মাত্রা যদি খুব বেশি না হয় তাহলে তাল এবং ওলকচু তা নিয়ন্ত্রণ করে স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসতে সক্ষম। এমনকি ডায়াবেটিস উচ্চ মাত্রায় পৌঁছালেও তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে তাল এবং ওলকচু। তিনি আরও বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু খাবার কচি তালের শাস, পাকা তালের রস এবং অংকুরিত তালের আঁটির ভেতরের সাদা শাঁস। তবে এই খাবরের প্রতি ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। অধিকাংশ ডায়াবেটিস রোগী মনে করেন, এ খাদ্য মিষ্টি জাতীয় হওয়ায় তা খেলে ডায়াবেটিস বাড়বে। তাদের এই ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে জানান, শেখ শাহিনুর রহমান।

তিনি জানান, পাকা তালের রস নিয়ন্ত্রণে সক্ষম না হলেও ডায়াবেটিসের মাত্রা স্থিতাবস্থায় রাখে। তবে কচি তালের শাঁস ও অংকুরিক তালের শাঁস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অধিক সক্ষম। এছাড়া মাটির নিচে উৎপাদিত সবজি ওলকচু খাওয়া নিয়ে ডায়াবেটিক রোগীর মধ্যে ভীতি কাজ করে। কিন্তু ওলকচু মাটির নিচে উৎপাদিত হলেও এতে অ্যান্টি ডায়াবেটিস রোল আছে। যেগুলো ডায়াবেটিস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শাহিনুর রহমান তার গবেষণায় প্রমাণ করেছেন, এগুলো মানবদেহের ডায়াবেটিস বাড়ায় না বরং কমিয়ে আনে।

তিনি গবেষণায় পেয়েছেন, পাকা তালের রস, কচি তালের শাঁস, অংকুরিত তালের আঁটির ভেতরের সাদা অংশ এবং ওলকচুতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে। এ উপাদান (ফাইটোকেমিক্যাল) দুটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি এ দুটি উপাদান পরিমিত মাত্রায় প্রয়োগ করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব বলেও তিনি জানান। তার এই দুর্লভ গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শেখ শাহিনুর রহমানকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করেছে।