জ্বরে আক্রান্ত কেউ এলেই ডেঙ্গু রোগী বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে: শেখ সেলিম

sk salim

গণমাধ্যমে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তদের যে সংখ্যা প্রকাশ করা হচ্ছে তা নাকচ করে দিয়ে এর কঠোর সমালোচনা করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম।

মঙ্গলবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগী বাড়ার ঘটনা সত্য নয়। এখানে সমস্যা হচ্ছে যে কোনও জ্বরে আক্রান্ত রোগী এলেই ডেঙ্গু রোগী বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এসময় সাংবাদিকদের সঠিক তথ্য প্রকাশের আহ্বান জানান তিনি।

এক সপ্তাহের মধ্যে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে কমিটির সভাপতি বলেন, ‘বৈঠকে আমরা সবদিকে অ্যাড্রেস করেছি। আশা করছি ঠিক হয়ে যাবে। উইথইন এ উইক এটি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’

অবশ্য এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘এখনও তো ওষুধ এসে পৌঁছেনি। স্প্রেও করা হয়নি। সিটি করপোরেশন জানিয়েছে সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ওষুধ চলে আসবে, তারপর ওনারা ওটা স্প্রে করবে। এজন্য একটু সময় লাগবে।’

কমিটির সভাপতি শেখ সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছাড়াও কমিটির সদস্য তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, মনসুর রহমান ও আব্দুল আজিজ অংশ নেন।

বৈঠক শেষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে কমিটির সভাপতি বলেন, এডিস মশা মারার দায়িত্ব তো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। তবে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়লে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পড়ে যায় চিকিৎসাসেবা দেওয়ার। আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় খুব সুন্দরভাবে বিষয়টি দেখভাল করছে। গোটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ব্যতিব্যস্ত রয়েছে। উপজেলা থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রী সরাসরি ডেঙ্গু পরিস্থিতি মনিটরিং করছেন।

শেখ সেলিম বলেন, ডেঙ্গু রোগ শনাক্তকরণ কিটের কোনও সঙ্কট নেই। আরও কিট আসছে। এর দাম আরও কমে যাবে।

তিনি জানান, ভবিষ্যতে ডেঙ্গু জ্বরের যাতে বিস্তার না ঘটে সেটার ওপর কমিটি জোর দিয়েছে। এজন্য কিছু কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা বিষয়টি মনিটর করবে। আমরা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে বলেছি। সামনে কোরবানির ঈদ আছে। কোরবানির বর্জ্য অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার ও সিটি করপোরেশন মিলে দ্রুত বর্জ্য সরানোর পদক্ষেপ নেবে। ডেঙ্গু মশার লার্ভা যাতে না হয় সেই ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আমরা জনসেচেতনতার ওপর জোর দিয়েছি। আমার বাড়ি আমি পরিষ্কার করবো। এই ব্যবস্থা করতে হবে। প্রত্যেকে যদি নিজের বাড়ি পরিষ্কার করে তাহলে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটবে না।

শেখ সেলিম বলেন, ফ্লাইওভার হচ্ছে, মেট্রো রেল হচ্ছে, এসব নির্মাণ কাজের সময় পানি জমে মশার লার্ভা জন্ম নিচ্ছে। এতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কী করবে? তাই ডেঙ্গুরোধে স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রত্যেক মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব পালন করতে বলেছি।

অবিলম্বে মশা মারার ওষুধ আমদানি যাতে হয় সেজন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এসময় হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী বাড়ার অভিযোগ বিষয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকার সমালোচনা করেন কমিটির সভাপতি। তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগী বাড়ার ঘটনা সত্য নয়। এখানে সমস্যা হচ্ছে যে কোনও জ্বরে আক্রান্ত রোগী এলেই ডেঙ্গু বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কেউ সাধারণ জ্বর নিয়ে হাসপাতালে এসেছে, বলা হচ্ছে ডেঙ্গু জ্বর। বৈঠকে আলোচিত একটি ঘটনার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, একটি হাসপাতালে ৮ জন রোগী এসেছে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে তার মধ্যে মাত্র একজন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত কিন্তু ওই আটজনেরই ডেঙ্গু জ্বর বানিয়ে দেওয়া হলো। সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানাবো যেটা সঠিক সেটা লিখুন। সরকারের কোনও গাফিলতি থাকলে তা তুলে ধরতে পারেন। কিন্তু মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াবেন না।

টেলিভিশন সাংবাদিকতার সমালোচনা করে শেখ সেলিম বলেন, ‘বিশ্বের এমন কোনও দেশ আছে রোগীর রুমে গিয়ে লাইভ টেলিকাস্ট করে? এটাকে কি সাংবাদিকতা বলে? আমি নিজেও তো সাংবাদিকতা করেছি। স্বাধীনতা মানে আমি যা খুশি তাই করতে পারি না। এতে জনমনে আতঙ্ক হয়।’

বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিদেশ সফর নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি বলে জানান কমিটির সভাপতি। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উনি কেন গেছেন, সেটা আমাদের এখানের আলোচনার বিষয় নয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি ছাড়া কোনও মন্ত্রী দেশত্যাগ করতে পারেন না। উনি নিশ্চয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে গেছেন। ব্যক্তিগত সফরে গেছেন না কী জন্য গেছেন এটা উনার আর প্রধানমন্ত্রীর বিষয়। প্রধানমন্ত্রী চাইলে যে কোনও মন্ত্রীকে বিদেশ পাঠাতে পারেন। আর বিদেশ সফরে গেলে অপরাধটা বা কী? আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকতে বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছিল। ওই সময় একটি বিদেশ সফর ছিল, আমার যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমি যাইনি, আমার স্টেট মিনিস্টারকে পাঠিয়েছিলাম।’

তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে মহামারি বলে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। মহামারি কাকে বলে? ০.৬% মানুষ মারা গেলে মহামারি হয়? আমাদের এখানে ডেঙ্গুতে কত লোক মারা গেছে? প্রত্যেক দিন তো হার্ট অ্যাটাকে ৩৫০ জন মারা যাচ্ছে। তাহলে এটাকে কি মহামারি বলে? এভাবে টিভিতে লাইভ দেখিয়ে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে।

তিনি অভিযোগ করেন, বেসরকারি হাসপাতাল ভুল চিকিৎসা দিয়ে অনেক রোগীকে শেষ করে দিয়ে সরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। এখানে আইসিউতে ঢোকানো হয়। তারপর বলা হয় সরকারি হাসপাতালে মারা গেছে। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন