দুয়েকটা বিচারে আইনের শাসনের উদাহরণ দেওয়াটা ধোঁকা: মওদুদ

দুয়েকটি মামলার বিচারকে ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার’ উদাহরণ হিসেবে প্রচার করে ক্ষমতাসীনরা জনগণকে ধোঁকা দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফেনীর নুসরাত হত্যা মামলার রায়ের প্রতি ইঙ্গিত করে শুক্রবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।

সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, “দুয়েকটা বিচার হলে বলা হয় যে, এই যে দেখেন, আইনের শাসন- এই যে নুসরাতের ব্যাপারেই- আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। আজকে বিচার ব্যবস্থা থেকে ন্যায়বিচার শব্দটি উধাও হয়ে গেছে, ‘ইট ইজ নট দেয়ার’। ন্যায়বিচার বলতে যেটা বুঝায় সেটা বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় আর নাই।

“দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা যেখানে তারা দেখিয়ে বলেন যে, বাংলাদেশে এখন দেখেন ন্যায় বিচার যে আছে, আইনের শাসন আছে- এটাই প্রমাণ করে। এগুলো মানুষকে ধোঁকা দেয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। বাংলাদেশে আইনের শাসন কী জিনিস বা বিচার বিভাগ যে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নয় তা বাংলাদেশের সকল মানুষ জানে।”

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়ার বিচারে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, “একটা বানোয়াট মামলায়- যেখানে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায়- কোনোখানেই তার দস্তখত ছিল না, তিনি জড়িত ছিলেন না, সেখানে তাকে প্রথম পাঁচ বছরের সাজা দেওয়া হল, পরে সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করা হলো। ঠিক আছে, কিন্তু তিনি জামিন পাবেন না কেন?

এবিষয়ে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত নারী অসুস্থ হলে তাকে জামিন দেওয়ার বিষয়ে আইন থাকার কথা তুলে সুপ্রিম কোর্টে জ্যেষ্ঠ এ আইনজীবী বলেন, “কালকেও আমি একজনকে জামিন করিয়েছি, সে যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত। তার বিরুদ্ধে কোনো এভিডেন্স নাই, তার জামিন দিয়েছেন আদালত। সে দুই মাসেও জেলে থাকেনি।

“বেগম খালেদা জিয়ারও সাত দিনের বেশি থাকার কথা নয়। কিন্তু আজকে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে আদালতগুলোর বিচারকরা স্বাধীন ও মুক্তভাবে কাজ করতে পারছে না। যে কারণে এক বছর আট মাস হতে চললো আমাদের নেত্রী অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে কারাবন্দি আছেন।”

খালেদা জিয়া ‘প্যারোলে’ নয় জনগণের আন্দোলনের মাধ্যমেই মুক্ত হয়ে আসবেন বলে মন্তব্য করেন মওদুদ।

‘মন্ত্রী-এমপির সম্পদের হিসাব নিন’

মওদুদ আহমদ বলেন, “দুর্নীতি দমন কমিশনকে বলতে চাই, সরকার তো এটা করবে না। আপনাদের যদি সাহস থাকে, সত্যিকার অর্থে আইন অনুযায়ী আপনারা হলেন একটি স্বতন্ত্র নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। আপনারা সকল এমপির সম্পদের হিসাব, সকল মন্ত্রীর সম্পদের হিসাব চান।”

‘‘ দেখবেন যে, আসল জিনিস তখন বেরিয়ে আসবে কে কত অর্থ এই সরকারের শাসন আমলে সঞ্চয় করেছে, মানুষের টাকায় তারা ধনী হয়েছে। বাংলাদেশ এখন সারা পৃথিবীর মধ্যে এক নম্বর দেশ এখন যে দেশ অতি দ্রুত ধনী হওয়া যায়। এখানে দ্রুত কুইক মানি করা যায়, বেআইনিভাবে বিনা ট্যাক্সে টাকা অর্জন করা যায়। তার সুযোগ-সুবিধার গত ১০ বছরে এই সরকারের আমলে পেয়েছে।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, “এলাকায় টিনের বাড়ির মধ্যে হঠাৎ করে বড় বড় বাড়ি উঠেছে। সেগুলো কার জিজ্ঞাসা করলে বলবে, ছাত্রলীগ কিংবা যুবলীগ, আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগের কোনো নেতার বাড়ি।

“১০ বছর আগে এদের খাবারের পয়সা ছিলো না। এখন এতো সম্পদ হয়ে গেছে তাদের সারা দেশে।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে প্রধান স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে জাগপার প্রয়াত সভানেত্রী রেহানা প্রধানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই স্মরণ সভা হয়।

সংগঠনের সভাপতি আবু মোজাফফর হোসেন মো. আনাছের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ জামাল উদ্দিনের পরিচালনায় এই স্মরণসভায় কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় পার্টি(কাজী জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দারা, জাগপার সভানেত্রী ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান, সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আসাদুর রহমান খান, কেন্দ্রীয় নেতা হাসমতউল্লাহ, ইকবাল হোসেন, আরিফ হোসেন ফিরোজ, এনায়েত আহমেদ হালিম, ফাইজুর রহমান, আরিফুল হক তুহিন, রাকিবুল ইসলাম রুবেল, মো. হেলাল বক্তব্য দেন।