খালেদার মুক্তির জন্য দেন-দরবারের দরকার নেই: মওদুদ

সরকারের বাধায় খালেদা জিয়ার জামিন হচ্ছে না অভিযোগ করে তার ‘মুক্তির একমাত্র পথ রাজপথ’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ।

শুক্রবার বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে দেখে আসার পর স্বজনদের অভিপ্রায়ের প্রতি ইঙ্গিত করে শনিবার আইনজীবীদের এক সমাবেশে তিনি বলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আমাদের কারও কাছে দেন-দরবার করার দরকার নাই। বেগম জিয়াকে জামিন দেবে না, কারণ সরকার চায় না। সেজন্য জামিন হচ্ছে না।”

“আমরা বলতে চাই, হয় আইনের মাধ্যমে তার জামিন হবে, তার মুক্তি হবে। আর সেটা হবে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে আজ এক বছর ৮ মাস পার হয়ে গেছে তার জামিন হয় না। আপনারা সবাই আইনজীবী, আপনারা জানেন এটা পাঁচ-সাত, দুই-তিন সাপ্তাহের বেশি তার জেলখানায় থাকার কথা নয়, তার জামিন হয়ে যাওয়ার কথা। সেটা হচ্ছে না রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে।”

মওদুদ বলেন, “তার মুক্তির একমাত্র পথ রাজপথ। যদি রাজপথে আমরা আন্দোলন করি, আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে পারব, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পারব।”

জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়ার মুক্তি, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এই আইনজীবী সমাবেশ হয়।

সমাবেশের উদ্বোধন করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।

চলমান ‘শুদ্ধি অভিযান’ সম্পর্কে সাবেক মন্ত্রী মওদুদ আহমদ বলেন, “ঢাকা শহরে পুলিশ-প্রশাসনের নাকের ডগায় একশ পঞ্চাশটা ক্লাবে ক্যাসিনো চলছে। এখন তারা বলেন, আমরা জানিনা। এটা অসম্ভব তারা জানতেন না। অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন যে, এটা অসম্ভব সরকার এটা জানত না। এটা বিশ্বাস করার বিষয় না। সুতরাং তারা এটা জানতেন। এতদিন পান নাই তারা ধরা পড়ে গেছেন। এখন শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে।

“আমরা বলতে চাই, অভিযানে কোনো কাজ হবে না। কারণ এসব লোক দেখানো অভিযানে সত্যিকার অর্থে দুর্নীতি এই সরকারের পক্ষে দূর করা সম্ভবপর হবে না। কারণ তাদের সকল পর্যায়ে দুর্নীতি এমন গভীরভাবে প্রবেশ করেছে যে এখান থেকে তাদের মুক্ত হওয়া বা উঠে আসা তাদের পক্ষে সম্ভবপর হবে না। আজকে এই ছাত্রলীগ-যুবলীগ এবং তাদের নিজেদের দুর্নীতির ভারে এই সরকারের পতন হবে, পতন হতে বাধ্য।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় করা চুক্তিরও সমালোচনা করেন মওদুদ।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, “কোনো দলীয় রাজনীতি নয়, অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সুযোগ পাওয়ার জন্য জামিন পাওয়া তার অধিকার। সত্যি কথা বলতে- সঠিক বিভাগ থাকলে এটা নিয়ে এতো বক্তৃতা-বিবৃতি-আন্দোলনের দরকার হত না।

“আমি যতদুর জানি, পাকিস্তানের নওয়াজ শরীফ অসুস্থ থাকার জন্য তাকে জামিন দেওয়া হয়েছে। জামিন দেওয়া মানে মুক্তি নয়। একজন বয়স্ক মহিলা, যিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, চিকিৎসার জন্য তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া যাবে না- এটা অত্যন্ত অমানবিক।”

সংগঠনের সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকারের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব এবিএম রফিকুল হক তালুকদার রাজার পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নাল আবেদনী, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, এম এ রকিব, গোলাম মোস্তফা, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ।