জাতীয় মুক্তিমঞ্চ ইস্যুতে মতবিরোধকে কেন্দ্র করে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন চার প্রভাবশালী নেতা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলটির নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে সবুজ সংকেতও দিয়েছেন এসব নেতাকে। যে কোনো সময় আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিএনপিতে ফিরিয়ে নেয়া হবে।
সূত্র জানায়, এলডিপির শীর্ষ নেতার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে গত ২৬ জুন পদত্যাগ করা জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ও সাবেক এমপি আবদুল করিম আব্বাসী, সাবেক এমপি আবদুল্লাহ ও সাবেক এমপি আবদুল গণি ছাড়াও দলটির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বিএনপিতে ফিরছেন।
এসব নেতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির হাইকমান্ড তাদের বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে। এর মধ্যে শাহাদাত হোসেন সেলিমের বিগত দিনের কার্যক্রমে আগে থেকেই বিএনপির হাইকমান্ড তার ওপর সন্তুষ্ট ছিলেন।
কর্মীবান্ধব আর টেলিভিশন টকশো ব্যক্তিত্ব হিসেবে ইতিমধ্যে তিনি তার অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এলডিপির ওই চার নেতা বাদেও দলটির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদকে বিএনপির পক্ষ থেকে ন্যূনতম বার্তা দেয়া হলে তিনিও যে কোনো সময় দলত্যাগ করতে পারেন।
গত জুনে এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ জাতীয় মুক্তিমঞ্চ নামে আলাদা প্লাটফরম ঘোষণা দেন। দলটির নেতাকর্মীরা জানান, এলডিপিতে যারা সিনিয়র নেতা তারা অধিকাংশই বিএনপি থেকে এসেছেন।
তাই মুক্তিমঞ্চ থেকে যখন জিয়া পরিবার আর বিএনপিকে নিয়ে সমালোচনা করা হয়, তা নেতারা ভালোভাবে গ্রহণ করবেন না- এটাই স্বাভাবিক।
এ ছাড়া ২০ দলীয় জোটে এলডিপি একটি শরিক দল হয়েও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন বেঙ্গলকে বাগিয়ে তাকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ের অপরিচিতদের দলে ভেড়ানোসহ আরও বিভিন্ন কারণে দলের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। আর এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় দলটির প্রতিষ্ঠাতা নেতা শাহাদাত হোসেন সেলিমের সঙ্গে এলডিপির হাইকমান্ডের দূরত্ব সৃষ্টি হয়।
তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে দলটির সর্বশেষ জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে। কমিটিতে সেলিমকে জায়গা দেয়া হয়নি।
ছাত্রদলের হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ করা শাহাদাত হোসেন সেলিম চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, পরে আহ্বায়কের দায়িত্বও পালন করেন। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদকও ছিলেন।
অন্যদিকে রাজনৈতিকভাবে মূল্যায়ন না করার কারণে অলি আহমদের জাতীয় মুক্তিমঞ্চ গঠনের আগের দিন দলের হেভিওয়েট তিনজন সাবেক এমপি পদত্যাগ করেন।
এর মধ্যে আবদুল করিম আব্বাসী নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে ২৫ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি তিনবারের এমপি। আবদুল গণিও বিএনপির মনোনয়নে তিনবারের এমপি ছিলেন।
বিএনপিতে ফেরা প্রসঙ্গে শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেছেন, আমি এলডিপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। দলের নামকরণ থেকে শুরু করে গঠনতন্ত্র-ঘোষণাপত্র তৈরি করার সঙ্গে ছিলাম। নীতিনির্ধারকদের একজন হিসেবে দীর্ঘ ১৩ বছর দল করছি। অর্থ ও শ্রম দিয়েছি। ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করেছি। নির্বাচনের পরে রাজনৈতিক সংকট যাচ্ছিল। তখন কর্নেল (অব.) অলি আহমদ জাতীয় মুক্তি মঞ্চ গঠন করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ২০ দলীয় জোটের মধ্যে থেকে জাতীয় মুক্তি মঞ্চ আমাদের কাছে পরিষ্কার ছিল না। অলি আহমদ একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে হঠাৎ জামায়াতের পক্ষে স্ট্যান্ড নেয়াটা আমরা ভালো চোখে দেখিনি।
তিনি বলেন, দলের পক্ষ থেকে অনেকেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আজকেও (বৃহস্পতিবার) একজন উপদেষ্টা যোগাযোগ করেছেন। তিনি অলি আহমদ সাহেবের কাছে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন। আমাকে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পণ করবেন। যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে সেটার অবসান করতে চান। কিন্তু আমি আসলে একজন নিষ্ঠুর হৃদয়হীন ব্যক্তির নেতৃত্বে আর রাজনীতি করবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
শাহাদাত হোসেন সেলিম আরও বলেন, বিএনপির জন্মলগ্ন থেকে আমি এর রাজনীতিতে জড়িত ছিলাম। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ছিলাম। জীবনের অনেক সময় বিএনপির জন্য ব্যয় করেছি। মনেপ্রাণে বিএনপির রাজনীতি ধারণ করি। খালেদা জিয়া আমার নেত্রী। তারেক রহমান এদেশের রাজনীতির যোগ্য উত্তরসূরী। আমার অবস্থান সবসময় জাতীয়তাবাদী শক্তির পক্ষে থাকবে। বিএনপির পক্ষ থেকে যদি আমাকে দলে আহ্বান জানায়, সেটা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। শিগগির বিষয়টি আমি আপনাদের জানাবো। এলডিপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়েই একটা সিদ্ধান্ত নেব।