জমকালো আয়োজনে পর্দা উঠলো এসএ গেমসের

সব ভেন্যু এখনো প্রস্তুত হয়নি। সূচি নিয়েও আক্ষেপ আছে বিভিন্ন দেশের। সর্বোপরি মাঠের বাইরে অগোছালো অবস্থা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি আয়োজকরা। তবে মাঠের বাইরে এসব চিত্রের মোটেও প্রতিফলন ঘটেনি সাউথ এশিয়ান গেমসের (এসএ) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে।

হিমালয়ের দেশ নেপালের ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি তুলে ধরার মধ্য দিয়ে উপভোগ্য এক অনুষ্ঠান উপহার দেয় আয়োজকরা। কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে জমকালো এই আয়োজনের মধ্যদিয়েই পর্দা ওঠে ১৩তম সাউথ এশিয়ান গেমসের। গত আসরে জোড়া স্বর্ণ জয়ী সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলার হাতে থাকার কথা ছিল বাংলাদেশের পতাকা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে মার্চপাস্টে বাংলাদেশ আসলেও শিলার হাতে সে পতাকা ছিল না। অন্যান্য ক্রীড়াবিদদের মতো ছোট পতাকা নিয়ে মাঠে প্রবেশ করেন শিলা।

পতাকা বাহক ছিল না ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও মালদ্বীপের বহরেও। আয়োজকের বাড়তি সুবিধা নিয়ে মার্চপাস্টে পতাকা বাহকসহ প্রবেশ করে নেপাল। নেপালের স্থানীয় সময় বিকাল ৫টায় দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে উদ্বোধন হয় সাউথ এশিয়ান গেমসের ১৩তম আসরের। নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী বান্দারি এসএ গেমসের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উড়াল দেয় শান্তির প্রতীক পায়রা, ছুটে যায় বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী ‘ব্ল্যাকবাক’ হরিণ। যা এবারের গেমসের লোগো ও মাসকট। অতীতের মতো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আয়োজক দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি তুলে ধরা হয় নানাভাবে। ছিল লেজার শো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আয়োজকরা চেষ্টা করছে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর কৃষ্টি-কালচারকে ফুটিয়ে তোলার।

১ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ১০ই ডিসেম্বর পর্যন্ত কাঠমান্ডু, পোখারা ও জনকপুরে হবে এবারের আসর। যেখানে অংশ নিচ্ছেন ৭টি দেশের ৩২৫০ অ্যাথলেট।

যার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ৫৯৫, নেপালের ৬৪৮, ভারতের ৪৬১, পাকিস্তানের ৪১৩, মালদ্বীপের ৩৩২, ভুটানের ১৪২ ও শ্রীলঙ্কার ৬২২ জন অ্যাথলেট রয়েছেন। ১ হাজার ১১৯ পদকের জন্য লড়বেন তারা। তার মধ্যে স্বর্ণ ৩১৭, রৌপ্য ৩১৭ ও ব্রোঞ্জ পদক ৪৭৯টি।

১৯৮৪ ও ’৯৯ সালের পর তৃতীয়বারের মতো ‘দক্ষিণ এশীয় অলিম্পিক’ খ্যাত এসএ গেমস অনুষ্ঠিত হচ্ছে নেপালে। তবে এবারের আয়োজনে আগের দুই আসরকেও ছাপিয়ে যেতে চায় কাঠমান্ডু।

গতকাল ঘড়ির কাঁটা যখন পাঁচটা ছুঁই ছুঁই, ঠিক তখনই দশরথ রঙ্গশালায় প্রবেশ করেন নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী বান্দারি। এরপরই প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। আয়োজক কমিটি তাদেরকে ফুলেল শুভেচ্ছায় স্বাগত জানান স্টেডিয়ামে। এদের প্রবেশের পরই নেপালের জাতীয় সংগীত শুরু হয়। সাত দেশের ক্রীড়াবিদদের অংশগ্রহণে মার্চপাস্ট পর্যবেক্ষণ করেন নেপালের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী।

নেপাল অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট জীবন রাম শ্রেষ্ঠা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরুর ঘোষণা দেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিলের সদস্য সচিব রমেশ কুমার সিলওয়াল অংশগ্রহণকারী সকল দেশের অ্যাথলেটদের ধন্যবাদ জানান। ক্রীড়ামন্ত্রী জগত বাহাদুর বিশ্বকর্তা সুনার বক্তব্যের পরই উদ্বোধনী ভাষণ দেন নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী বান্দারি। এরপর সাবেক চার তারকা অ্যাথলেট ‘মশাল ব্যাটন’ নিয়ে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন। শেষে মশাল প্রজ্জ্বলন করেন এসএ গেমসে চারবারের সোনাজয়ী সাবেক তায়কোয়ান্ডোকা দীপক বিষ্ঠা। ক্রীড়াবিদদের পক্ষ থেকে শপথ বাক্য পাঠ করান তারকা ক্রিকেটার পরেশ খড়কা এবং কোচদের পক্ষ থেকে রেফারি দীপক থাপা।

আগের ১২টি আসরের ১২টিতেই দাপটের সঙ্গে মেডেল তালিকার শীর্ষে ছিল ভারত। এবার তারা ১০টি ডিসিপ্লিনে অংশ নিচ্ছে না। পাকিস্তানও তাই। অন্যদিকে সার্কভুক্ত হওয়ার পর নবম আসর থেকে টানা চার আসরে অংশ নেয় আফগানিস্তান। আসরে এবার আফগানিস্তান নেই। ভারত ও পাকিস্তান এসএ গেমসকে গুরুত্ব কম দেয়ার কারণে শীর্ষে থেকে আসর শেষ করার আশা করছে আয়োজক নেপাল। আগের আসরগুলোতে বাংলাদেশের অর্জন ছিল সামান্য। তাদের সর্বোচ্চ সাফল্য তৃতীয় স্থান অর্জন। সেটা ২০১০ সালের ঘরের মাঠে ১৮টি স্বর্ণ জিতে। ভারতের গৌহাটি ও শিলংয়ে অনুষ্ঠিত এসএ গেমসের সর্বশেষ আসরটি ছিল বাংলাদেশের জন্য হতাশাজনক। মাত্র ৪টি স্বর্ণ জিতেছিল।