পেট্রোল পাম্প বন্ধে ৩ বিভাগে অচলাবস্থা

পেট্রোল পাম্প বন্ধে তেলের অভাবে রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর বিভাগ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তেল বিক্রির কমিশন বৃদ্ধিসহ ১৫ দফা দাবিতে বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক লরি মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ দ্বিতীয় দিনের মত ধর্মঘট পালন করছে।

রোববার সকাল থেকে শুরু হওয়া ধর্মঘট সোমবারও অব্যাহত থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা। এছাড়া কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা বাড়ির জেনারেটরের তেল নিতে আসা গ্রাহকদেরকেও পড়তে হয়েছে বিপাকে।

বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক লরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ও জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতির ডাকে গতকাল থেকে ২৬ জেলায় অনির্দিষ্টকালের এই কর্মবিরতির কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক লরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি এম এ মোমিন দুলাল বলেন, তাদের ১৫ দফা দাবি পূরণ করতে সরকারকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছিল। কিন্তু জ্বালানি মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় তারা ধর্মঘটে যেতে ‘বাধ্য হয়েছেন’।

তাদের ১৫ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- জ্বালানি তেল বিক্রিতে কমপক্ষে সাড়ে ৭ শতাংশ কমিশন দেয়া, জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা কমিশন এজেন্ট নাকি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান- বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করা, প্রিমিয়াম পরিশোধ সাপেক্ষে ট্যাংকলরি শ্রমিকদের জন্য ৫ লাখ টাকার দুর্ঘটনা বীমা, ট্যাংকলরির ভাড়া বৃদ্ধি, পেট্রোল পাম্পের জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণের নিয়ম বাতিল, পেট্রোল পাম্পের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স নেয়ার নিয়ম বাতিল।
পেট্রোল পাম্পে অতিরিক্ত পাবলিক টয়লেট করা, জেনারেল স্টোর ও ক্লিনার নিয়োগের বিধান বাতিল করা, সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক পেট্রোল পাম্পের প্রবেশ দ্বারের ভূমির জন্য ইজারা নেয়ার নিয়ম বাতিল, ট্রেড লাইসেন্স ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া অন্য দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নেয়ার নিয়ম বাতিল, আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংক ৫ বছর অন্তর বাধ্যতামূলকভাবে ক্যালিব্রেশনের নিয়ম বাতিল, ট্যাংকলরি চলাচলে পুলিশি হয়রানি বন্ধ করা, সুনির্দিষ্ট দপ্তর ছাড়া ডিলার বা এজেন্টদের অযথা হয়রানি বন্ধ করা, নতুন কোনো পেট্রোল পাম্প নির্মাণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় জ্বালানী তেল মালিক সমিতির ছাড়পত্রের বিধান চালু করা, পেট্রোল পাম্পের পাশে যে কোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে জেলা প্রশাসকের অনাপত্তিপত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা এবং বিভিন্ন জেলায় ট্যাংকলরি থেকে চাঁদা গ্রহণ বন্ধ করা।

ধর্মঘটের কারণে গতকাল সকাল থেকে ৩ বিভাগের কোনো পেট্রোল পাম্প থেকে জ্বালানি তেল বিক্রি করা হচ্ছে না। জ্বালানি তেল না পাওয়ার কারণে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে মোটরসাইকেল চালকরা পড়েছেন বিপাকে। যারা ধর্মঘটের খবরে আগাম জ্বালানি তেল সংগ্রহ করেছিলেন তারাই কেবল এখন মোটরসাইকেল চালাতে পারছেন। বাকিরা বিপাকে পড়েছেন।

সোমবার রংপুরের বেশ কয়েকটি পাম্পে গিয়ে দেখা গেছে, কোনো পেট্রোল পাম্পে জ্বালানি তেল ডিজেল, পেট্রল, অকটেন বিক্রয় হচ্ছে না। তেল নিতে গিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে সবাইকে। এতে চরম বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন তারা। এছাড়া সামনে বোরো মৌসূমে তেল বিক্রয় বন্ধ থাকলে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হয়েছে কৃষকদের।

রেজা নামে এক বাইক চালক বলেন, ধর্মঘটের বিষয়টি জানতান। ভেবেছিলাম আজ হয়তো সব ঠিক হয়ে গেছে। তাই বাইক নিয়ে তেল নিতে এসেছিলাম। কিন্তু এসে দেখি তেল দেয়া হচ্ছে না। এখন গাড়ি ঠেলে আমাকে ফিরতে হবে। পাম্প মালিকরা এটা ঠিক করে নাই।

সেখানে আসা আরেক মোটরসাইকেল আরোহী সাজ্জাদ বলেন, গত দুইদিন ধরে গাড়ি বের করিনি। এছাড়া ধর্মঘটের খবরটিও জানতাম না। সকালে এসে দেখি দড়ি দিয়ে ঘিরে রেখেছে, তেল বিক্রি বন্ধ। খোলা বাজারেও তেল মিলছে না। রেজা ও সাজ্জাদের মতো অনেকেই পাম্পে তেল নিতে গিয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

রংপুরের মতো খুলনা ও রাজশাহী বিভাগেও ধর্মঘট চলছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে মানুষকে।