কারাগারে খালেদা জিয়া রাজার হালেই রয়েছেন: প্রধানমন্ত্রী

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সন্ত্রাসের ‘গডমাদার’ মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আর যেন কোনো সুদখোর, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, জঙ্গিবাদী, অগ্নিসন্ত্রাসী, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যাকারী ও এতিমের টাকা আত্মসাৎকারীরা ক্ষমতায় আসতে না পারে। সেদিকে দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।

বিএনপি-জামায়াত জোটের কঠোর সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জিয়াউর রহমান, তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ও পুত্র তারেক রহমানসহ পুরো পরিবারই খুনি পরিবার। আর খালেদা জিয়া হচ্ছেন সন্ত্রাসের ‘গডমাদার’। যিনি ঠাণ্ডামাথায় হরতাল-অবরোধের নামে শত শত জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করতে পারেন, এর থেকে বড় সন্ত্রাস আর কী হতে পারে? তার (খালেদা জিয়া) মতো বড় সন্ত্রাসী আর কে হতে পারেন।

বুধবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রায় ৩ বছর পর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় কমিটির বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা এ সব কথা বলেন। বৈঠকে বিগত ৩ বছরে দলের বাজেট ও জাতীয় কাউন্সিলের বাজেট উপস্থাপন ও তা সর্বসম্মতিতে পাস করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় কমিটির এই সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

প্রতিবছর জাতীয় কমিটির সভা করার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে প্রায় ৩ বছর পর এই সভাটি অনুষ্ঠিত হল। সভায় আওয়ামী লীগের আয়-ব্যয়ের হিসাব অনুমোদন ছাড়াও আসন্ন কেন্দ্রীয় ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলনের সম্ভাব্য বাজেটেরও অনুমোদন নেয়া হয়।

আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে আদালতের রায়ে খালেদা জিয়া কারাগারে রয়েছেন। কারাগারে তিনি রাজার হালেই রয়েছেন। পৃথিবীর কোনো ইতিহাস নেই যে, আদালত কর্তৃক কোনো সাজাপ্রাপ্ত আসামির সেবা করার জন্য একজন কাজের বুয়া দেয়া হয়। কিন্তু খালেদা জিয়ার জন্য একজন কাজের বুয়াও তার সেবার জন্য কারাভোগ করছেন। আমরা তা দিয়েছি, কারণ আমাদের কোনো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নতুন নয়, অনেক পুরনো। ক্ষমতায় থাকতে ১৯৯১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খালেদা জিয়ার ’নি রিপ্লেস’ (হাঁটু প্রতিস্থাপন) করা হয়। পরবর্তীকালে ক্ষমতায় থাকতে সৌদি আরবেও তার দেহে একাধিকবার অস্ত্রোপচার করা হয়। ওই সময় তিনি ওমরা হজ ও মার্কেট করতে হুইল চেয়ারে করে চলতেন, আর ওই হুইল চেয়ার ফালু (মোসাদ্দেক আলী ফালু) ঠেলে নিয়ে যেতেন, তা সবাই দেখেছে। কাজেই এখন তার হুইল চেয়ারে চলাফেরা নতুন কিছু নয়।

তিনি বলেন, ঠাণ্ডামাথায় হরতাল-অবরোধ দিয়ে খালেদা জিয়া জীবন্ত শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করিয়েছেন। সেই অবরোধ-হরতাল এখনও তোলেননি। তার হুকুমে কত মায়ের কোল খালি হয়েছে, কত বোন বিধবা হয়েছে, কত পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। সে (খালেদা জিয়া) তো জেলে আছেন, বেশ ভালো আছেন। কিন্তু তার জন্য কারও কারও মায়াকান্নাও দেখি। কিন্তু তার জন্য মায়াকান্নার আগে অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার হওয়া পরিবারগুলোর দিকে একবার সবার তাকিয়ে দেখা উচিত। বিএনপি-জামায়াতের ভয়াল অগ্নিসন্ত্রাস, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, নাশকতা, প্রায় ৫শ’ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার কথা মানুষ এত তাড়াতাড়ি ভুলে যায় কীভাবে?

সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, অনেকে এই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাস্তবে কী হয়েছে? নির্বাচনের আগে বিএনপি আন্তর্জাতিক সব জরিপ ও দেশের জনগণের মনের কথা আগেই বুঝতে পেরেছে যে, নির্বাচনে তাদের জয়ের কোনো সম্ভাবনাই নেই। কারণ দেশের জনগণ তাদের দুঃশাসন ও মানুষ হত্যার কথা ভোলেনি। তাই বিএনপি জেতার জন্য নির্বাচন করেনি, নির্বাচনকে অর্থ বানানোর বাণিজ্য হিসেবে নিয়েছিল। তারা একেকটি আসনে ৩/৪ জন করে মনোনয়ন দিয়েছিল। কখনও লন্ডনে থাকা একজনকে খুশি করে, আবার পল্টনে থাকা নেতাদের খুশি করে কেউ মনোনয়ন পেয়েছেন, আবার কেউ অনেক বেশি অর্থ দিলেই তা পরিবর্তন করা হয়েছে। যে যত বেশি অর্থ দিতে পেরেছে, সে মনোনয়ন পেয়েছে। একেক আসনে একাধিক প্রার্থী দিয়েছে, কারণ তারা জানেই যে জিততে পারবে না। তাই এই নির্বাচন নিয়ে তাদের মুখে কোনো কথা মানায় না।

বিএনপি-জামায়াত জোট কখনই গণতন্ত্র ও জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় টানা প্রায় তিন বছর ধরে তাদের অগ্নিসন্ত্রাস ও ভয়াল নাশকতার কথা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে তারা আসেনি। যারা জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে, নাশকতা চালায় তাদের জনগণ ভোট দেবে কেন? এটা বুঝতে পেরেই তারা নির্বাচনে না এসে গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে চেয়েছিল, কারণ তারা জনগণের শক্তি, সমর্থন ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। কারণ এই দলটির (বিএনপি) জন্ম জনগণের মধ্যে থেকে হয়নি, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক স্বৈরাচারের উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে এই দলটির জন্ম। তারা জানত নির্বাচনে গেলে তারা জিতবে না, সে জন্যই জনগণকে তারা পুড়িয়ে হত্যা করেছে।

বাংলাদেশ উন্নয়নে সারা বিশ্বের সামনে বিস্ময় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেই দেশের উন্নতি হয়, দেশ সবদিক থেকে এগিয়ে যায়। এটাকে অনেকেই কিছু বলতে পারে। কিন্তু আমার প্রশ্ন- তারা (বিএনপি) অনেক কিছু করলে দারিদ্র্যের হার কমেনি কেন? প্রবৃদ্ধির হার বাড়েনি কেন? আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়নি কেন। একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই দেশের উন্নতি হয়েছে। আজকে আমরা ৮ দশমিক ১৩ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। খালেদা জিয়ার রেখে যাওয়া ৪১ ভাগ দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আমরা ২১ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি, এই হার আমরা আরও নামিয়ে আনব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে যাবে। সারা বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোলমডেল। জাতির পিতার আদর্শ ও নীতি নিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করে যাচ্ছি। কারণ আওয়ামী লীগ সবন সময়ই জনগণের কল্যাণে ও দেশের উন্নয়নে কাজ করে। বিএনপির আমলে বাংলাদেশ যে দুর্নীতি, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী, অর্থ পাচারকারীর দেশ হিসেবে পরিচয় পেয়েছিল, আমরা সেই পরিচয় পাল্টে দিয়েছি। বাংলাদেশকে উন্নয়নের বিস্ময় বলে এখন আন্তর্জাতিকভাবেও সবাই স্বীকৃতি দিচ্ছে।

দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে আরও এগিয়ে নিতে অনেক পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি। ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে কোথায় নিয়ে যাব, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশ উন্নত সমৃদ্ধ হবে। ২১০০ সাল পর্যন্ত একশ’ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনার ডেল্টা প্লান আমরা ঘোষণা দিয়েছি। আমরা মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী জাতি।