সমাবেশের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন ভারতীয়রা। ধর্মভিত্তিক ও মুসলিমবিদ্বেষী নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাতিলের দাবিতে বৃহস্পতিবারও দেশজুড়ে প্রতিবাদ চলছে।
এর আগে দাঙ্গা, সহিংসতা ও সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে ছয় বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে সাম্প্রতিক বিক্ষোভে পুলিশের বর্বরতা ও নির্মমতা আলোচনায় উঠে এসেছে।
ভারতের দুটি বড় টেলিকম প্রতিষ্ঠান বলছে, বৃহস্পতিবার সরকারের নির্দেশে নয়াদিল্লির বেশ কয়েকটি অংশের টেলিকম সেবা তারা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।
নতুন আইনে প্রতিবেশী তিন দেশ থেকে যাওয়া অমুসলমানরা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন। এতে মুসলমানদের বাদ দেয়ায় ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে গঠন ও দেশের বাইরে অস্থিতিশীলতা উসকে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে।
গত কয়েক দিনের বিক্ষোভে বহুলোক আহত, কয়েকশ বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার এবং যানবাহনে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। বেশ কয়েকটি অঞ্চলে জনসমাবেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।
উত্তরপ্রদেশ, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, বিহারের কয়েকটি অংশ, নয়াদিল্লি, হায়দরাবাদ, ব্যাঙ্গালুরু ও চেন্নাইয়ে কারফিউ আরোপ করা হয়েছে।
দিল্লি পুলিশের মুখপাত্র এমএস রাধোয়া বলেন, ১৪৪ ধারা জারি করা হয়নি– এমন অঞ্চলে সমাবেশ করতে হলে লোকজনের উচিত আগে অনুমোদন নেয়া। এ ছাড়া কাউকে জমায়েত হতে দেয়া হবে না।
পুলিশের প্রধান কার্যালয়ের পাশেরটিসহ ১৪টি মেট্রো স্টেশন ও মেগাসিটির দিকে যাওয়া বেশ কয়েকটি সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
ভোডাফোন ও এয়ারটেল ঘোষণা দিয়েছে, শহরের বেশ কয়েকটি অংশের মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন তারা। পরে মোবাইল অপারেটর জিও একই পথ অবলম্বন করে নিয়েছে।
ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করার দিক থেকে বিশ্বের নেতৃত্ব দিচ্ছে ভারত। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তরপ্রদেশ ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ সীমিত করে দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই নয়াদিল্লি ও হায়দরাবাদে সড়কে নেমে পড়েছেন বিক্ষোভকারীরা। টেলিভিশনের ছবিতে দেখা গেছে, প্ল্যাকার্ড বহনকারী বিক্ষোভকারীদের টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের দিল্লির সভাপতি খাওয়ালপ্রিত খোর তার টুইটার ছবি পোস্ট করেছেন, যাতে দেখা যাচ্ছে– ঐতিহাসিক লালকেল্লায় বিক্ষোভকারীদের আটক করে ১৪টি বাসে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, কিন্তু দলে দলে লোকজন রাস্তায় নেমে এসেছেন।
ব্যাঙ্গালুরুতে আটকদের মধ্যে বিখ্যাত ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ রয়েছেন। আর উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য বিহারে বেশ কয়েকটি রেলস্টেশন ও জাতীয় মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন প্রতিবাদকারীরা।
রাজনৈতিক সহিংসতার কেন্দ্রভূমি কলকাতায় ১৭টি বামপন্থী দল সমাবেশের ডাক দিয়েছে।
দেশটির অর্থনৈতিক ও বিনোদন জগতের রাজধানী মুম্বাইয়ে বলিউড তারকাদের বৃহস্পতিবার দুপুরে শিক্ষার্থী ও তরুণ পেশাজীবীদের বিক্ষোভে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে।
অভিনেতা ও পরিচালক ফারহান আখতার বুধবার এক টুইটে বলেন, কেবল সামাজিকমাধ্যমে বিক্ষোভের সময় শেষ হয়ে গেছে।
গত সপ্তাহে ভারতের উত্তরাঞ্চলে আইনটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে সেখানে ছয়জন নিহত হয়েছেন। রোববার রাতে দিল্লির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের নৃশংসতা সেই বিক্ষোভে নতুন করে ইন্ধন জুগিয়েছে।
হিন্দুস্থান টাইমসের খবর বলছে, গত পাঁচ দিনে সাড়ে চারশর বেশি কাঁদানে গ্যাসের সেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এতে এক শিক্ষার্থী দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন বলে খবরে জানা গেছে।
বুধবার মুসলিমপ্রধান দিল্লির কয়েকটি অঞ্চলে বিক্ষোভকারীরা যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন এবং পুলিশের দিকে পাথর নিক্ষেপ করেছেন।
জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও সহিংসতায় বৈশ্বিক সংস্থাটি উদ্বিগ্ন।
২০২৪ সালের মধ্যে সব ধরনের অনুপ্রবেশ বন্ধে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি ও নাগরিক সংশোধনী আইনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে– ভারতের ২০ কোটি মুসলমানকে কোণঠাসা করে রাখা।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, মুসলমানদের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর বিদ্বেষ থেকেই আইনে তাদের বাদ দেয়া হয়েছে। ভারতের জনসংখ্যার এই ১৪ শতাংশকে একঘরে রাখতে ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) কয়েক দফা উদ্যোগের মধ্যে এই আইনটি সাম্প্রতিকতম।
নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে লোকজনকে দলে দলে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে রাজনীতিবিদ যুগেন্দ্র যাদব বলেন, এখনই যদি দেশের হয়ে লড়াই না করি, তবে আর কবে?
রোববারে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। লাইব্রেরিতে ঢুকে সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে। পড়া অবস্থা থেকে শিক্ষার্থীদের তুলে নেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নাম ধরে ধরে ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করার পাশাপাশি ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করারও অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে।