মণিরামপুরে তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়াতে খাঁচায় মৌ চাষ

তেল জাতীয় ফসলের (সরিষা ও তিল) উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে যশোরের মণিরামপুরে কৃষক পর্যায়ে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় কৃত্রিম মধু চাষ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে আদর্শ বীজের ডিলার তৈরিতে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ১৪ জন নির্বাচিত কৃষককে বিনামূল্যে মৌবক্স প্রদান করা হয়েছে। মৌমাছি সংগ্রহ করে কৃষকরা বাসা বাড়িতে বা ছাদে মৌবক্স বসিয়ে কৃত্রিম উপায়ে মধু উৎপাদন শুরু করেছে। এরফলে একদিকে যেমন ফসলের উৎপাদন বাড়ছে আবার পরিবারের চাহিদা মেটাতে মধু পাচ্ছেন কৃষকরা। আবার এই কৃষকদের দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন অনেকেই।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ডাল, তেল ও পেঁয়াজের বীজ উৎপাদক, সংরক্ষণ ও বিপণন (এসএমই) প্রকল্পের আওতায় দেশীয়ভাবে বীজের উৎপাদন বাড়াতে আদর্শ কৃষক তৈরিতে উপজেলার ১৪ ইউনিয়নে একজন করে কৃষক নির্বাচন করেছে অফিস। মৌমাছির মাধ্যমে পরাগায়নের ফলে সরিষার উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং একইসাথে মধু উৎপাদন সম্ভব বলে গতবছর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে একজন করে কৃষককে সরকারি খরচে উন্নতমানের একটি করে মৌবক্স দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, নির্বাচিত কৃষকদের প্রয়োজনীয় সার এবং বীজও বিনামূল্যে সরবরাহ করছে অফিস।

এমন একজন কৃষক উপজেলার মশ্মিমনগর ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম। তিনি নিজের দোকানের ছাদে মৌবক্স বসিয়েছেন। ইতিমধ্যে দুই বার মধু সংগ্রহ করতে পেরে খুশি সিরাজুল।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, গতবছর মৌবক্স পেয়েছি। তখন মৌমাছি সংগ্রহ করতে না পারায় মধু উৎপাদন করতে পারিনি। এবার কালিগঞ্জ এলাকার এক আত্মীয়র মাধ্যমে তিন হাজার টাকা খরচে আটটি মৌচাক এনে বক্সে বসিয়েছি। ফসল ও মধু বেশি পেতে নিজের এক একর জমিতে সরিষা ও এক একর জমিতে মসুর চাষ করেছি।

এছাড়া আশপাশে অনেকেই সরিষার চাষ করেছেন। গত দুই মাসে দুই বার মধু সংগ্রহ করেছি। প্রথমবার অল্প মধু পেলেও পরেরবার পেয়েছি দেড় কেজি। এখন মৌমাছির সংখ্য অনেক। এবার মধুর পরিমান বাড়বে।

তিনি বলেন, আমি একজন সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী। এলাকার অনেকেই আমার পরামর্শে চাষাবাদ করেন। এই পদ্ধতিতে নামমাত্র খরচায় কৃত্রিমভাবে মধু পাওয়া যায়। তাছাড়া ফসলের পরিমানও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে মৌ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন অনেকেই।

সিরাজুল ইসলামের মত আরেক আদর্শ বীজ উৎপাদনকারী চাষি রোহিতা ইউনিয়নের কোদলাপাড়া গ্রামের ইসমাইল হোসেন। তিনি বাড়ির মুরগির খোপের ওপর মৌবক্স স্থাপন করেছেন। তিনিও তিন হাজার টাকা ব্যয়ে পাঁচটি মৌচাক বসিয়েছেন। একমাসে একবার মধু সংগ্রহ করেছেন তিনি।

মশ্মিমনগর ইউনিয়নের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান বলেন, মৌমাছি আশপাশের তিন কিলোমিটার দূরত্ব থেকে মধু সংগ্রহ করতে পারে। বক্সগুলো বেশ উন্নত ও দামি। সেইক্ষেত্রে ফসলের ক্ষেতে না বসিয়ে কৃষকরা নিরাপদ স্থানে বক্সগুলো স্থাপন করেছেন। প্রতিবক্সে ২০টি মৌচাক স্থাপন করা যায়। সেটা করতে পারলে প্রতিবার ৮-১০ কেজি মধু পাওয়া সম্ভব।

মণিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার বলেন, দেশীয়ভাবে বীজের উৎপাদন বাড়াতে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে একজন করে কৃষক বাছাই করা হয়েছে। তিনি ডাল ও তেল জাতীয় বীজ উৎপাদন করবেন। সরিষার উৎপাদন বাড়াতে বেশিবেশি পরাগায়নের প্রয়োজন। আর পরাগায়ন বাড়াতে কৃষকদের মৌবক্স দেওয়া হয়েছে। যেখানে তারা মৌচাষ করে বেশি ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি খাঁটি মধু পাচ্ছেন। এই কৃষকদের দেখাদেখি এলাকার অন্যরা উদ্যোগি হচ্ছেন।