ধানে লোকসান, মণিরামপুরে ভুট্টা চাষ বেড়েছে দ্বিগুণ

গত আমন মৌসুমে ধান চাষ করে লোকসানের শিকার হয়েছেন মণিরামপুরের কৃষকরা। উৎপাদন খরচ থেকে মণপ্রতি ধানের বাজার দর অনেক কম থাকায় কৃষকরা এই ক্ষতির শিকার হন। লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে বোরো চাষ ছেড়ে এবার ভুট্টা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন এই অঞ্চলের কৃষকেরা।

সেই ক্ষেত পরিচর্যায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন ভুট্টাচাষিরা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃর্ণ মাঠজুড়ে বাতাসে দুলছে ভুট্টার ক্ষেত। গতবারের তুলনায় এবার মণিরামপুরে দ্বিগুণের বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। ধানের চেয়ে ভুট্টার ফলন বেশি, খরচ কম, রোগবালাইও নেই এবং অধিক লাভজনক হওয়ায় এই চাষে ঝুঁকছেন এখানকার চাষিরা।

এবছর উপজেলার ২৬৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে মণিরামপুর সদর ইউনিয়নের দেবীদাসপুর, পৌর এলাকার জুড়ানপুর, রোহিতা, খেদাপাড়া, কাশিমনগর ও হরিহরনগর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে।

গত বছর উপজেলায় ১১৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছিল। তার আগের বছর চাষ হয়েছিল মাত্র ৫০ হেক্টর জমিতে।

vutta newsপ্রয়োজনীয় পরামর্শ ছাড়াও সরকারি খরচে বীজ এবং সার পাওয়ায় ভুট্টা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন কৃষকরা। এবারও ৮০০ কৃষককে বিনামূল্যে ভুট্টার বীজ ও সার দিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস। এছাড়া খরচের তুলনায় ধানের বাজার দর কম হওয়ায় ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন কৃষকেরা। আবার ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বোরো চাষ বাদ রেখে এই চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে কৃষি অফিস।
জুড়ানপুর গ্রামের চাষি বীপ্রদাস মোড়ল গত ৩-৪ বছর ধরে ভুট্টার চাষ করছেন। এবছর সার ও বীজ ফ্রি পেয়ে চাষ করেছেন দুই বিঘা জমিতে। গত বছর চাষ করেছিলেন দেড় বিঘাতে। তিনি বলেন, একবিঘা জমিতে আমন চাষ করলে ১৫-১৬ মণ ধান পাওয়া যায়। বোরো চাষ করলে সর্বোচ্চ ২৫ মণ ধান হয়। আর ভুট্টার বিঘাপ্রতি ফলন ৪০ মণ। তাছাড়া ধানে খরচের তুলনায় বাজারে দাম কম। কিন্তু একবিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করলে সব খরচ বাদ দিয়ে বিঘাপ্রতি ৮-১০ হাজার টাকা লাভ থাকে।

মণিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার বলেন, বহুবিধ ব্যবহার থাকায় দেশে ভুট্টার চাহিদা অনেক। মানুষের খাবারের পাশাপাশি ভুট্টা থেকে গো, মাছ ও হাঁস মুরগির খাদ্য তৈরী হয়। ভুট্টার চাষ অত্যন্ত লাভজনক। এক বিঘা জমি থেকে ক্ষেতভেদে ১৫-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হয়। এছাড়া ভুট্টা যেমন খরা সহ্য করতে পারে তেমনই জলাবদ্ধতাও সহ্য করতে পারে। ভুট্টা চাষে ঝুঁকি কম। বিক্রির জন্য কৃষককে কোন চিন্তা করতে হয় না। পাইকাররা বাড়ি থেকে কিনে নিয়ে যায়। বর্তমানে ধানের বাজার প্রতিমণ সাড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা হলেও ভুট্টার দাম ৯০০ টাকা। সরকারী সহয়তা অব্যহত থাকলে আগামীতে ভুট্টা চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদী এই কর্মকর্তা।