কোচিং সেন্টারের বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ইউএনও!

সরকার যখন কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছেন ঠিক তখনই যশোরের মণিরামপুরে ঘটেছে তার উল্টো। মণিরামপুর বাজারের ‘একাউন্টিং কোচিং সেন্টার’ নামে একটি কোচিং সেন্টারের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ শরিফী। এই সংক্রান্ত একটি ছবি ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপরই বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকসহ উপজেলা জুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সরকারের আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইউএনও নিজেই কোচিং বাণিজ্যকে প্রভাবিত করছেন বলে মন্তব্য অনেকের।

জানা যায়, পৌরশহরের দক্ষিণ মাথায় অবস্থিত ‘একাউন্টিং কোচিং সেন্টার’ নামে একটি কোচিং সেন্টার স্কুল- কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। আসন্ন এসএসসি পরীক্ষায় ওই প্রতিষ্ঠানের ৬৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নেওয়ার কথা। শিক্ষার্থীদের বিদায় উপলক্ষে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মুহিবুল্লাহ মুহিব। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন ইউএনও আহসান উল্লাহ শরিফী। প্রধান অতিথির বক্তব্যের একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন মন্তব্য শুরু হয়।

অনুষ্ঠানের ছবি ছেড়ে হারুন-অর-রশীদ নামে এক ব্যক্তি তার আইডিতে উল্লেখ করেন, কোচিং সেন্টার বন্ধের জন্য সরকার সচেষ্ট। কিন্তু মণিরামপুরে…….।

এরপরপরই ওই আইডিতে মোঃ শাহ্ জালাল নামের একটি আইডি থেকে মন্তব্য আসে,‘মণিরামপুরের ইউএনও বর্তমান বিতর্কিত একজন লোক। ওনি নিজেই কোন আইন মানেন না।’

মোঃ বদরুল ইসলাম নামের একটি আইডি থেকে মন্তব্য আসে, যশোর জেলায় সবচেয়ে বেশি কোচিং বাণিজ্য মণিরামপুরে। শুধু দিনেই নয় রাতেও শুরু হয়েছে এই বাণিজ্য। যার ফলে তৈরি হচ্ছে মেধাহীন জাতি।
মাধ্যমিক স্তরের এক স্কুল শিক্ষক বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেন, কোচিং সেন্টারের বিদায় অনুষ্ঠানে ইউএনও স্যার যান কি করে!
এদিকে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা উপলক্ষে সরকারিভাবে ২৫ জানুয়ারি থেকে সকল কোচিং সেন্টার বন্ধের ঘোষণা আসে। কিন্তু একাউন্টিং কোচিং সেন্টারে ২৭ জানুয়ারি (সোমবার) পর্যন্ত কোচিং চালানো হয়। যদিও গত বছর পাবলিক পরীক্ষার সময় এই কোচিং সেন্টারে এসিল্যান্ড সাইয়েমা হাসান অভিযান চালিয়ে পরিচালককে জরিমানা করেন। একইসাথে তিনি কোচিং সেন্টারটি বন্ধ করে দেন।
কোচিং সেন্টারটির পরিচালক মুহিবুল্লাহ মুহিব বলেন, এই কোচিং সেন্টার থেকে এবার ৬৩ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী বিদায় নিয়েছে। আজ সোমবার তাদের বিদায় অনুষ্ঠান ছিল। ইউএনও’র সাথে আলোচনা করেই উনাকে প্রধান অতিথি করা হয়েছে।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে ২৩০-২৩৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে বলে জানান তিনি।

এই বিষয়ে উপজেলা দুর্নীতি পতিরোধ কমিটির (দুদক) সম্পাদক আব্বাস উদ্দিন বলেন, ইউএনও কিভাবে কোচিং সেন্টারের বিদায় অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন তা আমার বোধগম্য নয়।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, এসএসসি পরীক্ষা উপলক্ষে কোচিং বন্ধের ব্যাপারে মৌখিক আদেশ থাকলেও লিখিত আদেশ পাইনি।

ইউএনও’র কোচিং সেন্টারের বিদায় অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘ বোঝেনইতো…’।

জানতে চাইলে ইউএনও আহসান উল্লাহ শরিফী বলেন, মূলত কোচিং এর ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের অনুৎসাহিত করতে আমি ওই কোচিং সেন্টারের বিদায় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছি।’

যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ বলেন, ‘এটা তো ঠিক হয় নাই।’