উন্নয়ন সহযোগীদের কম শর্ত আরোপের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

hasina
ফাইল ছবি

দেশের উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি একে আরও টেকসই করার জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে এই ব্যাপারে বেশি শর্তারোপ না করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশের আরও উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি এবং আমরা আশা করি, আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরাও আমাদের খুব বেশি শর্ত না দিয়ে এ সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবেন। যে অগ্রযাত্রা আমরা শুরু করেছি সেটাকে যেন আরও ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারি।

বুধবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম বিডিএফ-২০২০’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যে কাজগুলো শুরু করেছি সে কাজগুলোকে আমরা সাসটেইনেবল করতে চাই। আর সেটা করতে গেলে আর্থিক সঙ্গতি দরকার। আর সে ক্ষেত্রে আমি মনে করি, আমাদের যারা উন্নয়ন সহযোগী আছেন তারাও এগিয়ে আসবেন। সহযোগিতা করবেন।’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘একটা বিষয়ে কেউ যখন সাকসেসফুল হয় সেখানে সাহায্য করতে তো কারো দ্বিধা থাকে না বরং আগ্রহ আরও বেশি হয়। সেটা আমরা দেখি, কাজেই সেটাই হবে বলে আমরা মনে করি।’

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সরকারের উন্নয়ন চাহিদার সঙ্গে যাতে উন্নয়ন সহযোগীরা সম্পৃক্ত হতে পারে, সে জন্যই দুই দিনব্যাপী এই বিডিএফ সভার আয়োজন করেছে। যেখানে সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়ার পাশাপাশি উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারের অগ্রাধিকার খাতগুলো তুলে ধরা হবে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বৈঠকের উদ্বোধনী পর্বে সভাপতিত্ব করেন। বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ সেফার, জাইকার সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট জুনিচি ইয়ামাদা এবং এডিবির ভাইস-প্রেসিডেন্ট শিক্সিন চেন বক্তৃতা করেন।

ইউএন রেসিডেন্ট কোয়ার্ডিনেটর এবং লোকাল কনসালটেটিভ গ্রুপের কো-চেয়ার মিয়া সেপোও বক্তৃতা করেন এবং ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ স্বাগত বক্তৃতা করেন।

ইআরডি সূত্র জানায়, বিশ্ব ব্যাংক, এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি), জাইকা, ইউএসএইড, ইউকে এইড, ভারত, চীনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন।

মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিদেশি কূটনিতিক, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

২০১০ সাল থেকে বিডিএফের সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার চতুর্থবারের মতো এই সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫-এর পর আমাদের অনেক চড়াই-উৎরাই পেরোতে হয়েছে, কখনও গণতন্ত্র ধারাবাহিকভাবে চলতে পারেনি, সামরিক স্বৈরশাসন বলবৎ ছিল। ফলে দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সাধিত হয়নি।

দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন শুরু হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা মাথায় রাখতে হবে কোনো রাজনৈতিক কমিটমেন্ট ছাড়া কখনও কোনো দেশ উন্নতি করতে পারে না। আর সেটা আজকে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একেবারে প্রমাণিত সত্য।’

তিনি বলেন, একটি দেশকে গড়ে তোলার জন্য সেখানে যেমন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রয়োজন থাকে, কমিটমেন্ট থাকা দরকার তেমনি একটি পরিকল্পনা থাকা দরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের যদি একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকে যে, দেশটাকে কীভাবে তারা গড়তে চায় তাহলেই সে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হতে পারে। আর আমরা সে কাজটাই করেছিলাম।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্র নিয়ে আলোচনা করায় আলোচকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের এখানেই থেমে থাকলে চলবে না। ভবিষ্যতের দিকে আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যে লক্ষ্য স্থির করেছি তাতে একজন মানুষও গৃহহারা থাকবে না, কেউ না খেয়ে কষ্ট পাবে না, বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না, নিরক্ষর থাকবে না, প্রতিটি মানুষ সুন্দর জীবন পাবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব থেকে বড় কথা হল দেশটাকে গড়ে তুলতে হবে। জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করে গেছেন এবং তার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব। আমরা সেই কর্মপরিকল্পনা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।’