জায়গা সংকটে বাঘারপাড়ার পুলেরহাট সব্জি মোকাম

বাঘারপাড়া উপজেলার পুলেরহাট। যশোরে বিষমুক্ত সব্জির পাইকারী মোকাম এটি। শহরতলি থেকে মাগুরামুখী ১৭ কিলোমিটার দুরে এর অবস্থান। গত ২০ বছর ধরে সপ্তাহের মঙ্গল ও শুক্রবার এখানে হাট বসে। প্রায় কোটি টাকার সব্জি বেচাকেনা হয়। টাটকা ও মানসম্মত সব্জির জন্য দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা এ হাটে ভীড় জমায়। সারা বছরই হাটটিতে শাক সব্জি ও মৌসুমী ফলে জমজমাট থাকে। ভোর হলেই এখানকার কৃষকেরা নছিমন, ভ্যান গাড়ি ও মাথায় করে টাটকা সব্জি নিয়ে আসে এ হাটে। সকাল ৭টা থেকে শুরু হয় হাট, চলে বেলা ১১টা পর্যন্ত।
এদিকে হাটের জায়গা সংকটের কারণে বর্তমানে মহাসড়কেই সব্জি বেচাকেনা চলছে।

গত শুক্রবার সরেজমিনে হাটটি ঘুরে দেখা গেছে বিচিত্র ধরনের বিষমুক্ত সব্জির সমারহ। সেক্স ফেরোমন, লিউর, হলুদ ফাঁদ ও জৈব বালাইনাশক পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে এখানকার চাষীরা বিষমুক্ত শিম, বাধাকপি, ফুলকপি, বেগুন, টমেটো, শাকসহ বিভিন্ন সবজি বিক্রি করতে এসেছেন।
বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেল হাটে শীতকালীন সব সব্জির দাম কমতে শুরু করেছে। তবে হাট এখন লাউ ও কচুরলতির দখলে। অন্য সব্জির থেকে এর দাম তুলনামূলক বেশী।

পাইকার আবু সাঈদ জানান, গত ১০ বছর আমি সব্জির ব্যবসা করি। প্রতি হাটে এক থেকে দেড় লাখ টাকার কচুর লতি কিনে পিকআপ যোগে কারওয়ান বাজারে নিয়ে বিক্রি করি। এতে আমার ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ হয়। আজ প্রতি কেজি ৩৫ টাকা দরে ১৫০মণ কচুরলতি কিনেছি।

লাউ কিনছিলেন ফরিদপুরের সব্জি ব্যবসায়ী শরিফুল। তিনি জানান, শীতকালীন সব্জির মধ্যে লাউয়ের দাম এখন বেশ চড়া। ঢাকায় এর চাহিদা বেশী হওয়ায় আমরা সেখানেই বেশী দামে বিক্রি করি’। আকারভেদে ১’শ লাউ পাইকারী ৩৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা দরে কিনেছেন বলে জানান।

খানপুর গ্রামের কৃষক রিপন খান, ২০ শতক জমিতে তার লাউ চাষ রয়েছে। সপ্তাহে দু’দিন ১০০ লাউ মেলে তার ক্ষেতে। আবহাওয়ার কারনে এবার এ অঞ্চলে লাউয়ের ফলন কম হওয়ায় বেশি দাম পাচ্ছেন।

এদিকে ধানে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে এ বছর সব্জি চাষে ঝুঁকেছে বলে জানিয়েছে এখানকার চাষীরা। যে কারণে হাটে এবার প্রচুর সব্জির আমদানী। ক্রেতা ও পাইকারদের উপচে পড়া ভিড়ে বর্তমানে জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। তাই হাটের জায়গার পাশাপাশি বাধ্য হয়ে ঝুঁকির সাথে যশোর-মাগুরা মহাড়কেই চলছে সব্জির কেনাবেচা। যে কারণে মাঝে মাঝে কিছুটা যানজট সৃষ্টিতে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যানবাহনের চালক, যাত্রী ও শিক্ষার্থীদের।

এ ব্যাপারে বর্তমান হাটের ইজারাদার সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলা বলেন, এবার ২০ লক্ষ টাকায় হাটটি কিনেছি। এ অঞ্চলের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজী বিক্রি করতে আসেন এ হাটে। সপ্তাহে দু’দিন বসে হাট।
প্রায় কোটি টাকার সবজী বিক্রি হয় সপ্তাহে দু’দিন-উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাটের নির্ধারিত জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে মহাসড়কের ওপর সবজী নিয়ে বসতে হয় বিক্রেতাদের। এ বিষয়ে সরকারের নজর দেওয়া উচিৎ বলে তিনি জানান।

তবে সব্জি বিক্রেতারা দাবী করে জানান, হাট ইজারার টাকায় সরকারিভাবে জমি অধিগ্রহন করে হাটের জায়গা বাড়ানো দরকার। কারণ দীর্ঘদিনের পুরাতন হাট এটি। যাতায়াত ব্যবসা ভালো থাকায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারদের সমাগম ঘটে এখানে। অন্য হাটের তুলনায় এখানে সব্জির দাম একটু বেশি পাওয়া যায়।