প্রশ্নের মুখে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা

জরুরি বৈঠকের পর সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের মুখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, জনগণের ওপর সব দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া হয়নি। জনগণই সব ক্ষমতার মালিক এজন্য জনগণের ওপর আস্থা রাখেন তারা।

গতকাল মঙ্গলবার মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে এ বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে ফ্রন্টের নেতারা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। এসব নানা প্রশ্নের জবাব দেন তারা। রাজনৈতিক দলের যে সভাুসমাবেশ, তা এই জোটের দেখা যায় না। শুধু সচেতনতা তৈরি করে যাচ্ছেন। জনগণের ওপরেই কেন সব দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছেন? রাজনৈতিক দল হিসেবে তো নেতাদেরও মাঠে থাকার কথা।

এ প্রশ্নের জবাবে ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, জনগণের ওপর ভর করেই রাজনীতি। শক্তি জনগণের। তাদের উৎসাহী করতে আমাদের করণীয় অবশ্যই করে যাব। সভা, মিছিল, মিটিং সবই হবে।

তিনি বলেন, জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের লক্ষ্য অর্জন করেছে, পরিবর্তন এনেছে। তার ব্যতিক্রম হবে না। জনগণের মধ্যে একটা ঐকমত্য গড়ে উঠেছে। জনগণ এগিয়ে আসবে। সরকার যা চাইছে, তা করতে পারবে না।

একই প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান বলেন, আমরা জনগণের ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দিইনি। জনগণের ওপর আস্থা রেখেছি। কিন্তু সরকার জনগণের আস্থা কেড়ে নিয়েছে, ভোট কেড়ে নিয়েছে। আমরা জনগণকে দায়িত্ব দিয়েছি। ২০১৮ সাল থেকেই জনগণের কথা বলে আসছে ঐক্যফ্রন্ট। এই জোটের প্রতি মানুষের আশার জায়গা কোনটা? এই প্রশ্নের জবাবে কামাল হোসেন বলেন, জনগণের ওপর আমরা পুরোপুরি ভরসা রাখি। ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণ নিজের পরিবর্তন এনেছে।

মানুষের মুক্তির জন্য ঐক্যফ্রন্ট কী করছে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা মানুষের কাছে যাচ্ছি। আমরা বলে যাচ্ছি? সরকার দায়িত্বহীনভাবে সংবিধানের পরিপন্থী কাজ করে নির্বাচনের প্রক্রিয়াুপদ্ধতিকে ধ্বংস করেছে। এর ফলেই আজকে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ঐক্যফ্রন্ট দুই প্রার্থীকে সমর্থন দিল, কিন্তু সেই নির্বাচনে মাঠে থাকতে তারা ব্যর্থ কি না? এতে সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রকাশ পায় কি না? এ ছাড়া চারটি পথসভার ঘোষণা দিলেও তা হয়নি? তারা ব্যর্থ কি না? এসব প্রশ্নের উত্তরে কামাল হোসেন বলেন, আমাদের কাজগুলোকে জোরদার করতে হবে। জনগণকে নিয়ে পরিবর্তন আনতে আমরা বাধ্য। এভাবে দেশ চলতে পারে না।

এর আগে ড. কামাল হোসেনের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি এডভোকেট মহসীন রশীদ বলেন, সদ্যসমাপ্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার উপর যুবসমাজ ও জনগণ অনাস্থা প্রকাশ করেছে। নির্বাচিত মেয়ররা মাত্র ৫-৭ শতাংশ মানুষের রায় পেয়েছে। বাকি ফলাফল ইভিএমের জাল ভোট। বর্তমান সরকারের আমলে গণতন্ত্র আইনের শাসন ও নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, সরকার চায় ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে না যাক। সরকার ভোটারদের ভয় পায়। তাই সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। জনগণ ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার অর্থ তারা মনে করে তাদের ভোটে এই সরকারের পরিবর্তন হবে না। তাদের জন্য একটা অশনি সংকেত। তিনি আরো বলেন, আগামী ৮ই ফেব্রুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দুই বছর কারাবাসের প্রতিবাদে ও মুক্তির দাবিতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে ঐক্যফ্রন্ট। এদিন বেলা ১১ টা থেকে এ সমাবেশ শুরু হবে। ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন।

এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেছেন, সিটি নির্বাচনে উত্তরে বলেন কিংবা পুরান ঢাকায় বলেন সবখানে মানুষ আমাদের সঙ্গে ছিল। আমরা যখন জনগণের কাছে গিয়েছি তখন হাজার হাজার মানুষ আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছে। আমাদের দু’জন প্রার্থীর সঙ্গে জনগণ একাত্মতা পোষণ করেছে। জনগণ আমাদের সঙ্গে পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সাথে যুক্ত ছিলো। মানুষের জনস্রোতে প্রমাণ হয়েছে আসলে জনগণ কাকে চায়। আসম আবদুর রব বলেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে, জনগণের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ধৈর্য সহকারে রাজনৈতিক দলকে দৃঢ়তার সঙ্গে আন্দোলনে নামতে হবে। অস্থির হলে চলবে না। সময় বলে দেবে কখন কি করতে হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তাই করবে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমরা ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছি। জনগণের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এখন থেকে আমরা রাস্তায়, পথে ঘাটে মিটিং-মিছিল সব ধরনের সভা কর্মসূচি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মানুষ আন্দোলন নিয়ে যে আসার কথা বলছে সেটার প্রতিফলন ঘটবে।

ঐক্যফ্রন্টের স্ট্রিয়ারিং কমিটির বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন বিকল্প ধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তাক আহমদ, নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়কারী শহিদুল্লাহ কায়সার, বিকল্প ধারা বাংলাদেশে মহাসচিব শাহ আহমেদ বাদল, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দপ্তর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু। সূত্র: মানবজমিন