‘কচুরিপানা’ ইস্যু সংসদে নিয়ে গেলেন রওশন এরশাদ

rowsan arshad
ফাইল ছবি

কচুরিপানা নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর বক্তব্য ঘিরে সমালোচনার মধ্যেই বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ জাতীয় সংসদে এই ইস্যু নিয়ে কথা বললেন।

মঙ্গলবার সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সমাপনী বক্তব্য রাখতে গিয়ে ওই প্রসঙ্গ তুলে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন তিনি।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের দেওয়া কচুরিপানা নিয়ে বক্তব্যের সমালোচনা করে রওশন বলেন, ‘কিছু কচুরিপানা নিয়ে এসেছিলাম। প্ল্যানিং মিনিস্টার এখানে নেই। গরুর খাবার কি মানুষ খেতে পারে? ঘাসে তো ভিটামিন আছে। আমরা কি ঘাস খাই?’

তিনি বলেন, আমাদের দেশে কী এখন দুর্ভিক্ষ দেখা দিছে যে কচুরিপানা খেতে হবে। গরুর খাবার কী মানুষ খেতে পারবে নাকি মানুষের খাবার গরু খেতে পারবে।

রওশন এরশাদ এ সময় নানা প্রসঙ্গে বক্তব্য দেন। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সংসদে অনুপস্থিত থাকায় তার সমালোচনা করে রওশন বলেন, শিক্ষামন্ত্রী তো প্রায় বিদেশে থাকেন, তাকে সংসদেও দেখি না। তাহলে কীভাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে?

তিনি বলেন, একজন শিক্ষামন্ত্রী বদলের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থাও যদি পরিবর্তন হয় তাহলে তো অরাজকতা দেখা দেবে। আগে শিক্ষার্থীদের জন্য গাইডবই ছিল, বর্তমানে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কীভাবে গাইড পাবে, শিক্ষকরা কীভাবে তাদের গাইড করবে, এ ধরনের পরিবর্তন হলে শিক্ষাব্যবস্থায় নিশ্চয় অরাজকতা দেখা দেবে। তবে শিক্ষামন্ত্রী না থাকায় তা বলে তো কোনো লাভ নেই। তিনি শিক্ষার প্রকৃত মান বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বক্তব্যের একপর্যায়ে রওশন এরশাদ প্রশ্ন রাখেন, ‘নারীর ক্ষমতায়ন কোথায়?’ এ সময় স্মিত হেসে প্রধানমন্ত্রী আঙুল দিয়ে নিজের, স্পিকার ও বিরোধী দলীয় নেতাকে ইঙ্গিত করেন। সংসদ সদস্যরা এ সময় টেবিল চাপড়ে প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন জানান।

এরপর রওশন এরশাদ বলেন, আমি বলতে চাইছি যে ভাগ্যচক্রে এটা হয়ে গেছে। গুটিকয়েক মহিলাকে নিয়ে নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলা যাবে না। শিক্ষার হার দেখতে হবে। নারীরা কীভাবে নির্যাতিত হচ্ছে এটা দেখতে হবে।

দেশে নারীর ক্ষমতায়ন হয়নি দাবি করে রওশন বলেন, প্রধানমন্ত্রীতো প্রধানমন্ত্রী, তিনি থাকবেন। প্রধানমন্ত্রীকে কেউ সরাতে পারবেন না। আর তিনি নিজে বিরোধী দলীয় নেতা হয়েছেন ভাগ্যক্রমে। সংসদে পুরুষ সদস্য বেশি, নারী কম। গুটি কয়েক নারীকে নিয়ে নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলা যাবে না।

বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, দেশের বড় বড় হাসপাতালে ডাক্তার পাওয়া যায় না, তো কমিউনিটি ক্লিনিকে কোথা থেকে ডাক্তার থাকবে? কোথায়ও ডাক্তার থাকে না, থাকে একজন ঝাড়ুদার ও একজন গার্ড।

তরুণ প্রজন্ম রাতে ঘুমায় না, পড়াশোনা করে না দাবি করে রওশন রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত ফেসবুক বন্ধ রাখার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বর্তমান শিক্ষার্থীরা রাত জেগে ফেসবুক দেখে, তাদের পড়াশোনা হচ্ছে না, সারারাত ফেসবুক দেখে চোখে কালি পড়ে যাচ্ছে। যুব সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

ফলমূল ও শাক-সবজি ফরমালিনমুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে রওশন বলেন, বাজারে সব ফলমূল শাক-সবজি বিষাক্ত, ফরমালিনযুক্ত।

বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়াকে অতিক্রম করে যাবে। অর্থমন্ত্রী কীভাবে এ কথা বললেন, তার ব্যাখ্যা শোনার জন্য তিনি অধীর আগ্রহে আছেন। রওশন বলেন, ব্যাংকে টাকা নেই, অনেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত দেয়নি, টাকা বাইরে নিয়ে গেছে, শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়ে গেছে, সোনা তামা হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে বাংলাদেশ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরকে টপকে যাবে তার একটি ব্যাখ্যা অর্থমন্ত্রীর দেওয়া উচিত।

রওশন অভিযোগ করেন,সিটি করপোরেশন এখন ড্রেন পরিষ্কার করে না। মশার যন্ত্রণা বেড়েছে। কথা বলতে গেলে মুখে মশা ঢোকে যায়। জনগণ ওয়াসা, সিটি করপোরেশনকে কর দেয়। তিনি বলেন, ‘তাহলে ট্যাক্স বন্ধ করে দেব। যদি সেবাই না পেলাম তাহলে কেন দেব?’

বিরোধীদল হিসেবে জাতীয় পার্টির কর্মকাণ্ড তুলে ধরে রওশন এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসেবে সরকারের ভুল ত্রুটি তুলে ধরছে। পাশাপাশি সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে উন্নয়নে সহযোগিতা করছে। যে কারণে দেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়নে জাতীয় পার্টি ভূমিকা কোনো অংশে কম নয়। ইতিহাস একদিন এর মূল্যায়ন করবে।