‘ভালো নেই’ আ.লীগের সাবেক এমপিরা

A. Lig Logo

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে যারা মনোনয়ন পাননি তাদের অনেকেই রাজনীতিতে ভালো নেই।

বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেলেও অনেকের সময় কাটছে বাসায় বসে কিংবা আড্ডা দিয়ে। অনেককে আবার লুডু কিংবা ক্যারাম খেলে দিন পার করছেন। অধিকাংশ সময় বসে সময় পার করলেও দলীয় কার্যক্রমেও দেখা যায় না অনেককেই।

তৃর্ণমূল পর্যায়ে মনোনয়ন বিগত সাবেক এমপিদের মূল্যায়ন অনেকটাই কমে গেছে। যাদের বাড়িতে সকাল-সন্ধ্যা ও গভীররাত পর্যন্ত থাকতো হাজারো কর্মী, সমর্থক কিংবা স্থানীয় নেতা। এখন সে দিকে কেউ উকিও দিচ্ছে না। রাখছেন না কোনো খোঁজখবরও। তাদের এ অবস্থার জন্য বর্তমান এমপি ও তাদের অতীতের কর্মকাণ্ডকেই দুষছেন অনেকে।

বর্তমানরা সাবেকদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখলেই যেন শরীরের ফুটন্ত জল পড়েছে। অসুস্থতার জন্যও অনেকে দলীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন কয়েকজন সাবেক এমপি।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া বেশ কয়েকজন এবার মনোনয়ন পাননি। এ তালিকায় ছিলেন দলের সাবেক দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান। কিন্তু ২১তম জাতীয় কাউন্সিলের তাদের সম্মান দিয়েছেন আওয়ামী লীগ। যুগ্ম সম্পাদক থেকে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। একাদশে বাদ পড়েছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমও। তাকেও সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে যুগ্ম সম্পাদকে পদে পদোন্নতি দিয়েছেন। অন্যদিকে আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হককে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তাকে দলের একই পদে বহাল রাখেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

নেত্রকোনা-৩ আসনে দলের একাদশে মনোনয়ন পেয়েছেন দলের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। সেখানে বাদ পড়েছিলেন সাবেক এমপি ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু অন্যদিকে দলের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম পেয়েছিলেন পিরোজপুর-১ আসনের মনোনয়ন। যেখানে বাদ পড়েছেন সাবেক এমপি একেএমএ আউয়াল (সাইদুর রহমান)। এ আসনের সাবেক এমপি আউয়াল রাজনৈতিক মাঠে অনেকটাই সক্রিয়। সব কমিটিতেই তার কর্মীদের অবস্থান রয়েছে। মাগুরা-১ আসনে দলের মনোনয়ন পাননি সাবেক এমপি এটিএম আবদুল ওয়াহাব। এখানে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শিখরকে মনোনয়ন দেয়া হয়। এ আসনে শিখর আগে থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল। কিন্তু আবদুল ওয়াহাব বর্তমানে রাজনীতিতে নিয়মিত না।

মৌলভীবাজার-৩ আসনে মনোনয়নবি ত হয়েছেন সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলীর স্ত্রী অ্যাডভোকেট সৈয়দা সায়েরা মহসীন। সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার আহমেদকে মনোনয়ন দেয়া হয়। সায়েরা মহসীন স্বামীর মৃত্যুর পর এ আসনের উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন। তিনি বর্তমানে দেশে নেই। মনোনয়ন না পেয়ে তিনি বিদেশে চলে গেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। পাবনা-২ আসনের এমপি খন্দকার আজিজুল হক আরজুর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠায় তিনি এবার বাদ পড়েছেন। সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন আহমেদ ফিরোজ কবীর। কুষ্টিয়া-৪ আসনের সাবেক এমপি আবদুর রউফকে বাদ দিয়ে এবার মনোনয়ন দেয়া হয় মরহুম আবুল হোসেন তরুণের ভাতিজা ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জকে। সাবেক এমপি বর্তমানে অধিকাংশ সময় ঢাকায় থাকেন। মাঝেমধ্যে এলাকায় যান। রাজশাহী-৫ আসনে আবদুল ওয়াদুদের আসনে প্রার্থী করা হয় ডা. মনসুর রহমানকে।

বিতর্কিত এমপি আবদুর রহমান বদির কক্সবাজার-৪ আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন তার স্ত্রী শাহীন আক্তার চৌধুরী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে গোলাম রাব্বানীর বদলে মনোনয়ন পেয়েছিলেন ডা. সামিল উদ্দিন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে গোলাম মোস্তফা বিশ্বাসের বদলে প্রার্থী করা হয় জিয়াউর রহমানকে। নওগাঁ-৫ আসনের এমপি আবদুল মালেককে মনোনয়ন না দিয়ে নিজাম উদ্দিন জলিল জনকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। তিনি দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের ছেলে। খুলনা-৬ আসনে অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ নুরুল হকের পরিবর্তে মনোনয়ন পেয়েছেন আখতারুজ্জামান বাবুকে।

সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের বর্তমান এমপি আবদুল মজিদ মণ্ডলের বদলে তার বাবা আবদুল মোমিন মণ্ডলকে দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে। অন্যদিকে টাঙ্গাইল-৩ আসনে আমানুর রহমান রানার বদলে তার বাবা আতাউর রহমান খানকে মনোনয়ন দেয়া হয়। সূত্রে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েই নিজ দলের অন্য প্রার্থীদের ওপর ক্ষোভ মেটাতে দেখা গেছে। তার বিপক্ষে যারা অবস্থান নিয়েছিল নির্বাচনে তাদের চিহ্নিত করে বিভিন্ন সময় মামলার আসামিও করা হচ্ছে। এ ছাড়া বর্তমান এমপির সমর্থকদের দ্বারা হামলারও শিকার হচ্ছেন সাবেক এমপির সমর্থক, কর্মীরা। এতে নিজ দল ক্ষমতা থেকেও সাবেক এমপিরা নিজ এলাকায় ‘অস্তিত্ব’ সঙ্কটে ভুগছেন। এ কারণে অনেকে নিজ এলাকা থেকে দূরে সরে এসে ঢাকাতেই অবস্থান করছেন।

সাবেক এমপিরা নিজেদের গৃহবন্দিও মনে করছেন। এ বিষয়ে পাবনা-২ আসনের সাবেক এমপি খন্দকার আজিজুল হক আরজু বলেন, আমাকে শতভাগ কোণঠাসা করা হচ্ছে। ওই অর্থে বলতে গেলে নিজ গৃহে প্রবাস। এটাতে আমারই লাভ হচ্ছে। তবে আমার যারা কর্মী ও সমর্থক রয়েছে, তারা প্রতিনিয়ত হামলা ও মামলার শিকার হচ্ছেন। আমি বলেছি, প্রতি উত্তর দিতে হলে মারামারি খুনোখুনি হবে। আমি এটা চাই না। বর্তমান এমপি যা করছে তা করতে থাকুক। মানুষ ভালো-মন্দকে বিচার করতে পারবে। আমি চাই না এই কথাটি পত্রপত্রিকার খোরাক হোক যে, ‘সাবেক সংসদ সদস্যের ক্ষমতা, পেশিশক্তি প্রয়োগ করছে। বর্তমান এমপির কাজে বাধা দিচ্ছে।’ আমি এই দায় নিতে চাই না। দলীয় কর্মসূচির বিষয়ে তিনি আরো বলেন, আমার নিজ দায়িত্বে যা করার তা করছি। সেটি আমার সশরীরে উপস্থিতি থেকে শুরু করে সবদিক থেকে করছি।

যিনি এমপি হয়েছেন তিনি মনে করেন তার কাজ শেষ। আমি এমন কোনো সপ্তাহ নেই, এলাকা যাই না। কুষ্টিয়া-৪ আসনের সাবেক এমপি আবদুর রউফ বলেন, আমি এখন সমাজসেবা নিয়ে ব্যস্ত। অনেক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, এতিমখানাসহ অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠা করেছি। আমি মুলত সেবামূলক কর্মকাণ্ড এটা নিয়েই এলাকাতে আছি। আমি মূলত কারো সাথে বিরোধে জড়াই না। আমার সাথে ব্যাপক নেতাকর্মী থাকে। আমি আমার কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছি এবং চালিয়ে যাব। আমি নির্বাচনী এলাকাতেই আছি। সূত্র: মানবকণ্ঠ