পপ গুরু আজম খানের জন্মদিন আজ

পুরো নাম মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান। সঙ্গীত অঙ্গনে তিনি আজম খান নামেই পরিচিত। ব্যান্ড জগতের মানুষরা বাংলার পপ সঙ্গীতের কিংবদন্তিকে গুরু বলেই সম্বোধন করে থাকেন। এই শিল্পীর জন্মদিন আজ শুক্রবার ২৮ ফেব্রুয়ারি।

বাংলাদেশের এই রক গানের জনকের জন্ম ১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আজিমপুর সরকারি কলোনির ১০ নম্বর কোয়ার্টারে। বাবা আফতাবউদ্দিন আহমেদ, মা জোবেদা খাতুন। বাংলাদেশে স্বাধীনতা পরবর্তী একটি প্রজন্মকে রীতিমতো কাঁপিয়েছেন তিনি। শুধু বাংলাদেশেই নয় গোটা উপ মহাদেশেও আজম খান পেয়েছিলেন অসাধারণ জনপ্রিয়তা। আজম খানকে তাই বলা হয় ‘পপসম্রাট’।

১৯৭১ সালের পর আজম খান ‘উচ্চারণ’ নামে একটি ব্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেন। উচ্চারণের গান সঙ্গীত জগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। সেখানে আজম খানের সাথে তার বন্ধু নিলু আর মনসুর গিটার বাজিয়েছিলেন, সাদেক বাজিয়েছিলেন ড্রাম আর আজম খান প্রধান ভোকাল হিসেবে গান করেন।

১৯৭২ সালে বিটিভিতে একটি গানের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার মাধ্যমে তাদের গান তরুনদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সেই অনুষ্ঠানের ‘এতো সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ ও ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দু’টি সরাসরি প্রচার হলো। ব্যাপক প্রশংসা আর তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দেয় এ দু’টো গান। দেশজুড়ে পরিচিতি পায় তাদের গান।

১৯৭৪ সালের তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে আরেকটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ (রেললাইনের ঐ বস্তিতে) শিরোনামের গানটি গেয়ে হৈ-চৈ ফেলে দেন।

আজম খানের পাড়ার বন্ধু ছিলেন ফিরোজ সাঁই। পরবর্তীকালে তার মাধ্যমে পরিচিত হন ফকির আলমগীর, ফেরদৌস ওয়াহিদ, পিলু মমতাজের সাথে। এক সাথে বেশ কয়েকটা জনপ্রিয় গান করেন তারা। এরই মধ্যে আরেক বন্ধু ইশতিয়াকের পরামর্শে সৃষ্টি করেন একটি এসিড-রক ঘরানার গান ‘জীবনে কিছু পাবোনা এ হে হে!’ বলা হয়, এটি বাংলা গানের ইতিহাসে- প্রথম হার্ডরক!

ব্যক্তিগত জীবনে সহজ সরল জীবন যাপন করতেন তিনি। আজম খান বাংলাদেশের প্রখ্যাত সুরকার আলম খানের ছোটভাই। ১৯৭১ সালে একজন সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঢাকায় সংঘটিত কয়েকটি গেরিলা অভিযানে অংশ নেন আজম খান।

‘পপ সম্রাট আজম খানকে একুশে পদক দেওয়া হোক’ এই দাবি উঠেছিল অনেক দিন আগে থেকেই। প্রয়াত কণ্ঠশিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা আজম খানের ভক্তকুলদের সেই দাবি পূর্ণ হয়েছে। সম্প্রতি মরণোত্তর একুশে পদক পেয়েছেন আজম খান।

এখনো নিজের গাওয়া গানের মাধ্যমে বেঁচে আছেন আজম খান। তার গাওয়া ‘বাংলাদেশ’, ‘রেল লাইনের ঐ বস্তিতে’, ‘ওরে সালেকা, ওরে মালেকা’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘অনামিকা’, ‘অভিমানী’, ‘আসি আসি বলে’ এর মতো অসংখ্য গান এখনো হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায়।