বুধবার (১১ মার্চ) সকাল দশটা। অষ্টম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য জন্মসনদ লাগবে, তাই স্কুলের পাশেই অবস্থিত খেদাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে দুই বন্ধুকে নিয়ে আসে হেলাঞ্চি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র হাদিউজ্জামান। পরিষদে এসে সব কক্ষে তালা ঝুলতে দেখে কাউকে না পেয়ে ফিরে যায় সে।
এরপর দশটা ১৪ মিনিটে জন্মসনদ নিতে সেই পরিষদে আসেন কাশিপুর গ্রামের কলেজছাত্র ফয়সাল হোসেন। তিনিও এসে কাউকে পাননি। সব কক্ষে তালা ঝুলতে দেখেছেন।
সাড়ে দশটার দিকে একই কাজে পরিষদে আসেন কাশিপুর গ্রামের আরো দুই কলেজছাত্র আল-আমিন ও ইমরান। তারাও তিনজন গ্রামপুলিশ ছাড়া কাউকে পাননি। চেয়ারম্যান-সচিবের কক্ষে তালা ঝুলতে দেখেছেন।
সরেজমিন বুধবার সকাল পৌনে দশটা থেকে সাড়ে দশটা পর্যন্ত খেদাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে অবস্থান করে সব কক্ষে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। পরিষদে পাওয়া যায়নি চেয়ারম্যান আব্দুল হক, সচিব মৃণালকান্তি সাহা ও উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্ট কাউকে। সকাল দশটা দশ মিনিটের পরে গ্রাম পুলিশ আবুল হোসেন, সোহরাব হোসেন ও ইসমাইল হোসেনকে পরিষদে আসতে দেখা গেছে।
ওই সময় কয়েকবার চেয়ারম্যান ও সচিবকে ফোন করলেও তারা রিসিভ করেননি। পরে সকাল দশটা ৩৫ মিনিটে ফোন ধরে সচিব মৃণালকান্তি বলেন, ‘আমি মণিরামপুরে একটা কাজে আছি। পরিষদে আসতে ১৫-২০ মিনিট লাগবে।’
তবে, তিনি কী কাজে মণিরামপুরে ছিলেন তা জানা যায়নি।
স্থানীয়রা বলছেন, খেদাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের এমন চিত্র নতুন নয়। সাবেক চেয়ারম্যান সরদার মুজিবর রহমানের মৃত্যুর পর থেকে এই পরিষদের কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। উপ-নির্বাচনে জয়ী হওয়া চেয়ারম্যান আব্দুল হক শপথ গ্রহণের পর থেকে ঠিকমতো পরিষদে আসেন না। শুরুতে তিনি সপ্তাহে তিন দিন পরিষদে বসতেন। এখন তাও বসেন না। আর সচিব মৃণালকান্তি কোনোদিন বেলা ১১টা বা ১২টার আগে আসেন না। চেয়ারম্যান ও সচিবের এমন স্বেচ্ছাচারিতার কারণে খেদাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সেবার কার্যক্রম একেবারেই ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
হেলাঞ্চি গ্রামের রিপন হোসেন বলেন, গত একবছর ধরে পরিষদের অবস্থা বেহাল। কোনো কাজের জন্য পরিষদে যেতে যেতে মানুষের জুতার তলা ক্ষয় হয়ে যায়, কিন্তু কাজ মেটে না।
পরিষদে সেবা নিতে আসা ফয়সাল হোসেন বলেন, ‘জন্মসনদ নিতে এই পর্যন্ত চারবার পরিষদে এসেছি। চেয়ারম্যানকে পেয়েছি দুই দিন। আর আজতো কাউকেই পেলাম না।’
খেদাপাড়া ইউপির সাত নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য তায়জুল ইসলাম মিলন বলেন, ‘বহুদিন ধরে পরিষদে চেয়ারম্যান-সচিব ঠিকমতো আসেন না। আমরা মেম্বাররা নানা প্রয়োজনে পরিষদে গিয়ে কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই চলে আসি। এইজন্য এখন আর পরিষদে যাই না।’
অভিযুক্ত সচিব মৃণালকান্তি সেন বলেন, ‘আমার বাসা মণিরামপুরে। অফিসের কোনো কাজ থাকলে সেটা আমি নিশ্চয় পরিষদে এসে আবার মণিরামপুরে যাব না। সেটা মিটিয়েই অফিসে আসব।’
আর নিত্য দেরি করে অফিসে আসার অভিযোগটি সত্য নয় বলে দাবি করেন এই সচিব।
জানতে চাইলে দুপুর ১২টার দিকে ফোনে খেদাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হক বলেন, ‘একটি মামলায় আমার আদালতে আজ (বুধবার) হাজিরা রয়েছে। কোর্টের কাজ সেরে পরিষদে যাব।’
স্থানীয়দের অভিযোগ প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান বলেন, ‘অভিযোগ হতেই পারে। তবে তা সত্য নয়। পরিষদের বাইরেও আমাদের অনেক কাজ থাকে। সেগুলো মিটিয়ে আমি পরিষদে যাই।’
আর সচিবের ঠিকমতো হাজির না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইউএনও আহসান উল্লাহ শরিফীর সরকারি ও ব্যক্তিগত নাম্বারে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে তার দপ্তরের সিও সন্তোষকুমারের মাধ্যমে খবর পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।
যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ বলেন, ‘বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’