ইতালি এখন মৃত্যুপুরী

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে এক দিনে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ২১০ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৪৯৫-এ। সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থায় থাকা ইতালিতে নতুন করে মারা গেছেন ১৩ ডাক্তারসহ ৪২৭ জন।

ইতালির সর্বশেষ পরিস্থিতি অনুযায়ী, দেশটি নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণে এখন মৃত্যুপুরী। এখানে প্রথম মৃত্যু ঘটেছিল গত ২১ ফেব্রুয়ারি, তখন চীনে মৃতের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩০০-এর বেশি। তবে চীনে ক্রমান্বয়ে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ইতালি।

প্রথম মৃত্যুর এক মাস না গড়ানোর আগেই দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ছাপিয়ে গেছে চীনকে। অথচ ইতালিতে প্রথম মৃত্যু ঘটেছিল চীনে মৃত্যুর দেড় মাসের বেশি সময় পর।

ইতালির কর্মকর্তারা শুক্রবার ২৪ ঘণ্টায় ১৩ ডাক্তারসহ ৪২৭ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছেন। এ নিয়ে ইতালিতে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৩ হাজার ৪০৫-এ। অন্যদিকে শুক্রবার পর্যন্ত চীনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৪৮-এ।

শুরুতে চীনে মৃতের সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকলেও মাস দুয়েকের মধ্যে তারা পরিস্থিতি অনেকটাই সামলে নিতে পেরেছে। যে হুবেই প্রদেশে থেকে এ ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ঘটেছিল বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে, সেখানে এখন আর কোনো নতুন রোগী পাওয়া যাচ্ছে না।

ইতালি গত ১২ মার্চ থেকে সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ, দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে প্রায় গোটা দেশকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠালেও সংক্রমণ ঠেকাতে তারা হিমশিম খাচ্ছে। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ইতালিতে প্রায় সব ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও জমায়েত অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ রয়েছে। এ লকডাউনের সময় অনবরত বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্টে ঘোষণা দিয়েছেন, লকডাউনের কারণে পুরো ব্যবস্থা ভেঙে পড়া থেকে রক্ষা পেয়েছে। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর খুব দ্রুত স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফেরত যাওয়া সম্ভব হবে না। ইতালির স্থানীয় দৈনিক পত্রিকার খবর অনুসারে, আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়া ২ হাজার ৩ জন উত্তরাঞ্চলীয় তিনটি এলাকার। এসব এলাকাতেই ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি।

মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর শঙ্কা : জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ১৯ মার্চ এক ভিডিও কনফারেন্সে সাংবাদিকদের বলেছেন, বিশ্বব্যাপী সমন্বিত পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকানো না গেলে তা দুনিয়াজুড়ে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আমরা যদি ভাইরাসটিকে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তে দিই, বিশেষত বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল অঞ্চলগুলোয়; তাহলে এটি লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করবে।’ গুতেরেস বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী সংহতি কেবল নৈতিক কারণেই নয়, এটি সবার স্বার্থে প্রয়োজন।’ জি-২০ দেশের নেতাদের প্রতি দরিদ্র দেশগুলোয় সহযোগিতা জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি।