সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে কারাগারে প্রেরন

প্রায় দেড় মাস ধরে নিখোঁজ সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে যশোরের বেনাপোল সাদিপুর সীমান্ত থেকে উদ্ধারের পর আদালতে সোপর্দ করা হয়। বিজিবির তার বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশ দায়ে একটি মামলা করে পোর্ট থানায় সোপর্দ করে।

রোববার বিকেলে পুলিশ তাকে যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মঞ্জুরুল ইসলামের আদালতে হাজির করলে আদালত অবৈধ অনুপ্রবেশ মামলায় তার জামিন মঞ্জুর করেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে ঢাকায় মামলা থাকার কারনে যশোর পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৫৪ ধারায় সাংবাদিক কাজলকে আদালত কারাগারে প্রেরনের আদেশ দেন।

বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি মামুন খান জানান, শনিবার ২ মে গভীর রাতে বিজিবি রঘুনাথপুর সীমান্ত থেকে এক ব্যক্তিকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে জানা যায়, ওই ব্যক্তি ঢাকা থেকে নিখোঁজ ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল। বিজিবি অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে থানায় একটি মামলা করেছে। তাকে রোববার ৩ মে আদালতে পাঠানো হয়।

কাজলের স্ত্রী জুলিয়া ফেরদৌসী নয়ন জানান, শনিবার (২ মে) রাত পৌনে ৩টার দিকে বেনাপোল থানা থেকে একজন পুলিশ কর্মকর্তা ফোন করে তাকে স্বামীর সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন।
“আমার ছেলেকে ও ফোনে বলেছে, ‘আব্বু আমি বেঁচে আছি, তোমরা সবাই আমাকে নিতে আস’।”

বাবা উদ্ধারের খবর পেয়েই ছেলে মনোরম পলক রোববার সকালে আরো কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে যশোরে চলে আসেন। আদালতে দুপুরে পুলিশ যখন সাংবাদিক কাজলকে নিয়ে আসেন তখন পলক ছুটে যেয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন।

বেনাপোল থানার ওসি মামুন খান বলেন, তাকে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি।

যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের রঘুনাথপুর ক্যাম্পের কমান্ডার হাবিলদার আশেক আলী বলেন, বেনাপোলের সাদিপুর সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারত থেকে প্রবেশের সময় ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়। অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে তাকে আটক দেখিয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

যুব মহিলালীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার ওয়েস্টিন হোটেলকেন্দ্রিক কারবারে ‘জড়িত’দের নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কারণে মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, তাতে আসামির তালিকায় কাজলের নামও রয়েছে।

মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর গত ৯ মার্চ শেরেবাংলা নগর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ওই মামলা করেন।

সাংবাদিক কাজল ১০ মার্চ সন্ধ্যায় তার ‘পক্ষকাল’ অফিস থেকে বের হন। এরপর থেকে তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। ওই দিন সন্ধ্যায় কাজল যখন অফিসে ঢুকেছিলেন তখন রাস্তার পাশে রাখা তার মোটরসাইকেলের কাছে বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে দেখা যায় ভিডিও ফুটেজে।

কাজলের খোঁজ মিলছে না জানিয়ে পরদিন ১১ মার্চ চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার স্ত্রী জুলিয়া ফেরদৌসি নয়ন। পরে ১৮ মার্চ রাতে মামলা করেন তার ছেলে মনোরম পলক। এক মাসপর ৯ এপ্রিল তার মোবাইল চালু পাওয়া যায়। বলে জানান, কাজল নিখোঁজ মামলার আই ও এসআই মুন্সি আব্দুল লোকমান। কিন্তু করোনার কারনে সারাদেশ লকডাউন থাকায় তিনি কাজলকে উদ্ধারে যশোরে আসতে পারেননি বলে দাবি করেন।

এক সময়ের জাসদ ছাত্রলীগ নেতা কাজল নিখোঁজ হওয়ার পর তার সন্ধান দাবিতে পুরনো রাজনৈতিক সহকর্মী, স্বজন ও সাংবাদিকরা মাঠে নেমেছিলেন।

তাদের আন্দোলনের মধ্যে এক পর্যায়ে কাজলের একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ভিডিওতে কাজল নিখোঁজ হওয়ার কিছুক্ষণ আগের চিত্র উঠে এসেছে বলে দাবি সংস্থাটির।

ওই ফুটেজে কাজলকে একটি জায়গায় রাস্তার পাশে মোটরসাইকেল রেখে পাশের কোথাও যেতে দেখা যায়। বেশ কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে মোটরসাইকেল চালিয়ে যান তিনি। এর মধ্যে তার ওই মোটরসাইকেল ঘিরে কয়েকজনকে তৎপরতা চালাতে দেখা যায়।
তবে ওই ফুটেজ ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে তেমন কিছু মেলেনি বলে জানিয়েছিলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।