গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিট পরীক্ষায় ধীর গতির অভিযোগ

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গবেষকদের উদ্ভাবিত নতুন করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ পরীক্ষার ‘জি র‍্যাপিড ডট ব্লট’ কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করলেও কাজের গতি ধীর বলে অভিযোগ উঠেছে।

জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কমিটি কাজ করছে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র সূত্র জানায়, গত ২ মে কিট পরীক্ষার কমিটি গঠন করা হলেও গত কয়েকদিনে কমিটি দুই-একবার বিষয়টি নিয়ে বসেছে। কিন্তু, আজকে পর্যন্ত কিট পরীক্ষার বিষয়ে খুব বড় কোনো অগ্রগতি হয়নি।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে— ‘দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা না হলেও আমরা তো একটা জরুরি পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এমন পরিস্থিতিতে কিট পরীক্ষার কাজ যে গুরুত্ব ও যে গতিতে হওয়া দরকার বিএসএমএমইউতে সেই গতিতে হচ্ছে কি না তা নিয়ে আমাদের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে।’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আজ বুধবার বলেন, ‘এটা হয়তো আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা তাদের বোঝাতেই পারছি না যে এটা জাতীয় জরুরি অবস্থা। এই সময়ে কাজটিকে জরুরি বিবেচনা করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা দরকার। যে গতিতে সাড়া পাওয়ার কথা সেরকম পাচ্ছি না।’

তিনি মনে করেন, ‘যে তারিখে কমিটি হয়েছে সেই সময় থেকে আজকে পর্যন্ত কাজটি হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু, এখনো তেমন কোনো অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। আমাদের গবেষকরা রাত-দিন পরিশ্রম করে কিট উদ্ভাবন করলেন, জাতির জরুরি সময়ে। কিন্তু, তা পরীক্ষা করে দেখার ক্ষেত্রে যে জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছি, বলার মতো না। আমরা গুরুত্বটাই বোঝাতে পারছি না, হয়ত এটা আমাদেরই ব্যর্থতা। এছাড়া তো আর কিছু বলার নেই।’

‘আমরা চাই আন্তরিকতার পরিচয় দিয়ে দ্রুত গতিতে কিট পরীক্ষা করা হোক। বিএমআরসি থেকে এথিক্যাল ক্লিয়ারেন্স পেতেও সময় লাগছে। তবে আজকের মধ্য তা পেয়ে যাব বলে আশা করছি,’ যোগ করেন ডা. জাফরুল্লাহ।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার বিএসএমএমইউ-এর রেজ্রিস্ট্রার সংস্থাটিকে ফোন করে জানিয়েছেন কিট পরীক্ষার পরবর্তী কার্যক্রম কি হবে তা আগামীকাল বৃহস্পতিবার চিঠি দিয়ে জানানো হবে। আজ বৌদ্ধ পূণিমার সরকারি ছুটি থাকায় আগামীকাল বিএসএমএমইউ-এর পক্ষ থেকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে তা জানানো হবে।

কমিটি গঠন করা হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো বিএসএমএমইউকে কিট সরবরাহ করা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে আগামীকাল যদি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে বিএসএমএমইউ চিঠি দিয়ে কিট চায় তাহলে আগামী দুই দিন সাপ্তাহিক বন্ধ শেষে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হয়তো আগামী রবিবার কিট সরবরাহ করতে পারবে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মতে, বিএসএমএমইউকে তাদের কিট দেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়টির পক্ষে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সেগুলো পরীক্ষা করে দেখা সম্ভব। কারণ, দেশে বর্তমানে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা অনেক। কিট পরীক্ষার জন্যে রোগীর অভাব হবে না।

আজ বিএসএমএমইউ-এর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া কিট পরীক্ষার ধীর গতিবিষয়ক এক প্রশ্নের উত্তরে দ্য বলেন, ‘আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি। সেই কমিটি কাজ করছে। এটা একটা কনফিডেনশিয়াল বিষয়। কমিটি কাজ সম্পন্ন করে আমাকে জানাবে। জানানোর পর আমি বিষয়টি জানবো। তার আগ পর্যন্ত আমি জানবো না। এ বিষয়ে যা কিছু বলার তা এখন বলতে হলে কমিটির সদস্যরা বলতে পারবেন।’

ছয় সদস্যের কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. শাহীনা তাবাসসুমের ফোন বন্ধ পাওয়ায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘যেহেতু অনুমতি ছাড়া কথা বলার ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ রয়েছে, সেই কারণে আমরা কথা বলতে পারছি না। তবে আমরা কাজ করছি।’

উল্লেখ্য, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখার অনুমতি দেয় গত ৩০ এপ্রিল। অধিদপ্তর একইদিনে বিএসএমএমইউকে চিঠি দিয়ে কিট পরীক্ষা করার বিষয়টি জানায়। বিএসএমএমইউ ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করে ২ মে।