করোনায় এক লাখ আমেরিকানের মৃত্যু

২৩৩ বাংলাদেশীসহ যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় প্রাণ হারালেন এক লাখ মানুষ। ২৬ মে মঙ্গলবার রাত ১১টায় প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে নিউইয়র্ক স্টেটে ২৩ হাজার ২৮২ জন। এর মধ্যে নিউইয়র্ক সিটিতেই মারা গেছে ১৬ হাজার ৪১০ জন। অর্থাৎ বিশ্বের রাজধানী হিসেবে খ্যাত নিউইয়র্ক সিটি হচ্ছে করোনাভাইরাসেরও প্রধান টার্গেট।

এ প্রসঙ্গে চিকিৎসা-বিশেষজ্ঞসহ নিউইয়র্কের স্টেট গভর্নর এ্যান্ড্রু ক্যুমো বহুবার অভিযোগ করেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। ফেব্রুয়ারিতেই যদি ইউরোপ থেকে নিউইয়র্ক এবং নিউজার্সিতে আসা ফ্লাইটগুলো বাতিল করা হতো তাহলে এমন মহামারির কবলে হয়তো নিউইয়র্ক অঞ্চলের মানুষদের পড়তো হতো না।

স্টেট গভর্নর যুক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে উল্লেখ করেছেন যে, চীন থেকে এই ভাইরাস ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে এবং সে সব দেশের লোকজন জেএফকে এবং নিউয়ার্ক এয়ারপের্ট হয়ে এ অঞ্চলে অবস্থান করছেন। উল্লেখ্য, মার্চের শেষ সপ্তাহে এ দুটি এয়ারপোর্ট বন্ধ করা হয়। আরো উল্লেখ্য, ২১ মার্চ থেকে নিউইয়র্ক অঞ্চলে ‘ঘরে থাকার নির্দেশ’ জারি করা হয় যা এখনও বহাল রয়েছে।
এদিকে, ২৬ মে সোমবারও নিউইয়র্কে দুই বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে করোনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায়। হাসপাতাল এবং স্বজনের উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশ সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার জানান, নিহতরা হলেন হবিগঞ্জের সন্তান এবং ব্রঙ্কসের বাসিন্দা শামসুল ইসলাম জীবন (৫০) এবং মোহাম্মদ আলম (৪৮)।

এর একদিন আগে অর্থাৎ ঈদের দিনও দুই প্রবাসীর মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাসহ বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ, ৫ চিকিৎসকও রয়েছেন।

এদিকে, চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা পুনরায় শংকা প্রকাশ করেছেন যে, করোনাভাইরাসের প্রকোপ একেবারেই থমকে দাঁড়ায়নি, তেমন স্টেটসমূহের লকডাউন শিথিল করায় নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সুস্পষ্টভাবে অভিমত পোষণ করেছেন যে, লকডাউন শিথিলের মতো পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি। তবে এসব আহবানে ন্যুনতম পাত্তা না দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাগরিকদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নিয়োজিত হবার জন্যে।

এমনকি, সোমবার ‘মেমরিয়্যাল ডে’ উইকেন্ডেও চার্চ, আগেরদিন রবিবার মসজিদে ঈদ জামাত করার উদাত্ত আহবান জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। কিছু কিছু মানুষ এতে সাড়া দিলেও অধিকাংশই তা বর্জন করেছে। আর যারা মসজিদে ঈদ জামাত করেছেন তারাও স্বাস্থ্যনীতি মেনেই তা করেছেন। এমনকি প্রত্যেকেই মাস্ক ব্যবহার করেছিলেন।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, স্টেটসমূহের লকডাউন শিথিল করার সাংবিধানিক এখতিয়ার হচ্ছে স্টেট গভর্নরদের। একারণে বাস্তবতার আলোকে স্টেট গভর্নররা পদক্ষেপ নিচ্ছেন পর্যায়ক্রমে। নিউইয়র্ক সিটি ছাড়া প্রায় পুরো স্টেটে লকডাউন শিথিলের প্রথম ধাপ শুরু হয়েছে। সিটিতেও মৃত্যুর হার এবং হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তির হার কমছে গত দেড় সপ্তাহ থেকে। এটি অব্যাহত থাকলে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে লকডাউন শিথিলের পথ সুগম হবে বলে ২৬ মে প্রেস ব্রিফিংকালে আশা পোষণ করেছেন সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো।

অপরদিকে, মিশিগানে মামলা-মোকদ্দমা সত্বেও লকডাউনের মেয়াদ জুনের ১২ তারিখ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন স্টেট গভর্নর গ্রিচেন হুইটমার। নিউইয়র্কে লকডাউনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৮ মে বৃহস্পতিবার।

জনজীবন এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সচল করার অন্যতম পূর্বশর্ত হিসেবে করোনা টেস্টকে বলা হচ্ছে। অথচ এক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত আশাব্যঞ্জক অগ্রগতিসাধিত হয়নি। মঙ্গলবার পর্যন্ত মাত্র এক কোটি ৪৬ লাখ অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার (৩৩০ মিলিয়ন) শতকরা ৪.৪ ভাগের টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে বলে জোন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটি জানিয়েছে। সোমবার বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে যে, লকডাউন দ্রুত শিথিলের যে প্রক্রিয়া চলছে এবং ইতিমধ্যেই অনেক স্টেটে শিথিল করাও হয়েছে, এর ফলে পুনরায় এই ভাইরাস মহামারি আকারে বিস্তৃত হতে পারে।

এই সংস্থার হেল্থ ইমার্জেন্সি প্রোগ্রামের নির্বাহী পরিচালক ড. মাইক রায়ান ভার্চুয়াল ব্রিফিংকালে আরো বলেছেন, আমরা যখন দ্বিতীয় পর্যায়ে আক্রমণের শংকা প্রকাশ করছি, সে সময়ে চলমান সংক্রমণেরই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। তার বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। নির্মম বাস্তবতা হচ্ছে এই রোগ যে কোন সময় ভয়ংকর আকার ধারণ করতে পারে। সংক্রমণের হার কমছে বলে এটি মনে করার কোনই কারণ যে, তা দুর্বল হয়ে চলে যাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে সকলকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অর্থাৎ বাসার বাইরে গেলে মাস্ক পরতে হবে, হাত ধুতে হবে, ৬ ফুট অন্তর অবস্থান করতে হবে। যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই মাস্ক পরতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। এমনকি, ২৫ মে ডেমক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী যো বাইডেন জনসমক্ষে এলে তাকে মাস্ক পরিহিত দেখে টিটকারি দিয়েছেন ট্রাম্প। উপহাস করেছেন রীতিমত। এর জবাবে বাইডেন বলেছেন যে, নাগরিকেরা সাধারণত: প্রেসিডেন্ট অথবা জাতীয় নেতাকে অনুসরণ করেন। অথচ আমেরিকার দুর্ভাগ্য তাদের প্রেসিডেন্ট তারই প্রশাসনের রীতি অনুসরণ করেন না।

করোনা টেস্টিং কিটের সংকট ছিল। তা কেটে উঠেছে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করলেও এখন পর্যন্ত টেস্টিং পরিক্রমা একেবারেই হতাশার পর্যায়ে। এছাড়া, স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা-সরঞ্জাম তথা পিপিইর সংকট লাঘবেও যথাযথ পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত গৃহিত হয়নি। এভাবে ঘরে থাকার নির্দেশ ক্রমান্বয়ে উঠিয়ে নিলে বা শিথিল করা হলে লাখো আমেরিকানের তালিকা আরো দীর্ঘ হবে বলে আশংকা চিকিৎসা-বিজ্ঞানী এবং সচেতন জনগোষ্ঠির।