সীমিত যাত্রী নেয়ার শর্ত : রাস্তায় বাস নামাতে চান না মালিকরা

রাজধানীর বঙ্গবাজার ও ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সোজা কাপ্তান বাজার অভিমুখী রাস্তার দু’ধারে গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে সারিবদ্ধভাবে থেমে আছে বিভিন্ন রুটের কয়েকশ বাস। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশে দীর্ঘদিন গণপরিবহন বন্ধ থাকার পর আর মাত্র একদিন পরেই রোববার (৩১ মে) থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে সীমিত আকারে গণপরিবহন চলাচল শুরু হবে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী ১৫ দিন সীমিত পরিসরে গণপরিবহন পরিচালনা করতে হবে-এই শর্তে গাড়ি চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার।

তবে এ সিদ্ধান্তে খুশি নন গণপরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। তারা বলছেন, প্রতিদিন রাস্তায় গাড়ি নামলেই ড্রাইভার ও হেলপারের বেতন, তেল খরচ , যন্ত্রপাতি মেরামত বাবদ একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকা খরচ হয়। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে বিভিন্ন চাঁদা পরিশোধ করতে হয়। এসব খরচ মেটাতে স্বাভাবিক সময়ে তারা আসনে যাত্রী বসানোর পরও বাসে দাঁড়িয়েও যাত্রী পরিবহন করে থাকেন। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে গিয়ে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গাড়ি চালালে তাদেরকে প্রতিদিনই লোকসান গুনতে হবে। এ কারণে সীমিত আকারে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি পাওয়ায় তারা খুশি নন। তারা জানতে চান, এ ক্ষতি পোষাবে কীভাবে?

শুক্রবার (২৯ মে) দুপুরে বঙ্গবাজারের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে, কিছু কিছু বাস সড়কে নামানোর জন্য প্রস্তুতি চলছে। দুই মাসেরও বেশি সময় বাসস্ট্যান্ডে পড়েছিল গাড়ি। তাই এই দুই মাস গাড়ি স্টার্ট না দেয়ায় গাড়ির ইঞ্জিন ঠিক আছে কি-না তা নিশ্চিত হতে দীর্ঘক্ষণ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে রেখেছেন চালকরা। পরিবহন শ্রমিকদের কেউ কেউ চাকার নাট-বল্টু সহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছেন। বাসগুলো স্টার্ট দিয়ে কিছু দূরে বসে ড্রাইভার ও হেলপারদের করোনাকালীন সময়ের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে গল্প-গুজব করতে দেখা যায়।

ঢাকা-মানিকগঞ্জ রোডে শুভযাত্রা পরিবহন শ্রমিক সমিতির নেতা পরিচয়ে সাইদুর রহমান নামে এক ব্যক্তি জানান, গত দুইমাস গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পরিবহন শ্রমিকরা মানবেতর জীবন যাপন করেছে। সরকার ৩১ মে থেকে শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দিলেও এ সিদ্ধান্তে মালিক-শ্রমিকরা খুশি হতে পারেনি।

তিনি বলেন, ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জের যাত্রীপ্রতি ভাড়া ১০০ টাকা। বাসে আসন সংখ্যা ৪০টি। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হলে অর্ধেক সংখ্যক আসনে অর্থাৎ ২০ জন যাত্রী পরিবহন করতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রতি ট্রিপে আগে চার হাজার টাকা পেলেও এখন সে আয় দুই হাজার টাকায় নেমে আসবে। ফলে তাদের লাভ তো দূরের কথা, তেল খরচ উঠবে না। এক্ষেত্রে বাস মালিকরা ভাড়া বৃদ্ধি করলে যাত্রীরা অভিযোগে লিপ্ত হবেন।

সাইদুর রহমান জানালেন, এসব নানা দিক বিবেচনায় সরকারি নির্দেশনা মেনে তাদের অনেকেই লোকসানের কথা চিন্তা করে আপাতত গাড়ি রাস্তায় না নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে সরকার ক্ষতির টাকা ভর্তুকি হিসেবে দিলে শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা গাড়ি চালাতে পারবেন বলে তিনি জানান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বাসচালক ও হেলপার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার দেশের অনেক নিম্নআয়ের মানুষের জন্য খাদ্য সাহায্য আর্থিক সহায়তা দিলেও পরিবহন শ্রমিকরা কিছুই পায়নি। যখন বাস চলাচল করত তখন যারা নিয়মিত চাঁদা উঠাতেন তারাও পাশে দাঁড়াননি। এখন সরকার গণপরিবহন চলাচলের ঘোষণা দেয়ার পর তাদের কারো কারো চেহারা দেখা যাচ্ছে।

তারা বলেন, সীমিত আকারে যানবাহন চলাচল করলেও এসব চাঁদাবাজরা যানবাহন থেকে চাঁদাবাজি শুরু করবেন। এসব কারণে তারা চিন্তায় রয়েছেন।