বাজেট অধিবেশন ভার্চুয়ালি করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম, নেয়নি : রুমিন

‘সংসদের বাজেট অধিবেশন করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ছড়ানোর আরেক কেন্দ্র হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য (এমপি) ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। তিনি বলেন, এই অধিবেশন ডিজিটাল বা ভার্চুয়ালি করার প্রস্তাব দিলেও তা গ্রহণ করা হয়নি। যাতে জীবনটাও বাঁচে, সেই সঙ্গে দায়িত্বটাও পালন করতে পারি, সেই মধ্যমপন্থা হিসেবে প্রয়োজনে ডকট্রিন অব নেসেসিটি অনুযায়ী কিংবা প্রেসিডেন্টের অর্ডিন্যান্স জারি করে ডিজিটালি জুমের মাধ্যমে বাজেট অধিবেশন করার প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু আমার এই প্রস্তাব তারা (সংসদ) নেয়নি।

বুধবার (১০ জুন) বিকেল ৫টায় শুরু হচ্ছে বাজেট অধিবেশন। এ উপলক্ষে সংসদের কর্মকর্তাদের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করে ৮ জুন পর্যন্ত ৪৩ জনের শরীরে এর সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তারও আগে সংসদ সচিবালয়ে দায়িত্বরত ৮২ জন আনসার ও তিনজন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া এ পর্যন্ত আটজন মন্ত্রী-এমপিও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে অনেকের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক কাজ করছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেন অধিবেশন চলে সে ব্যবস্থা করেছে সংসদ। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার জন্য কোন এমপি কবে সংসদে যাবেন তারও তালিকা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে আজ দুপুরে রুমিন ফারহানা বলেন, এখন করোনাভাইরাস নিয়ে পুরো পৃথিবী আতঙ্কিত। সংসদেও আক্রান্ত হয়েছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী ইতোমধ্যে সংসদের ৪৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত আটজন মন্ত্রী-এমপির অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া অনেকে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। অনেকে আবার আছেন যারা নিজেরাই জানেন না তারা আক্রান্ত বা ক্যারিয়ার (বাহক)। আমাদের সংসদ ভবনে আলো-বাতাস কিছুই ঢোকে না। এটি সেন্ট্রাল এসিতে চলে। একেবারে বদ্ধ একটি বিল্ডিং। এই বিল্ডিং হতে পারে করোনা উৎপাদনের আরেক হাব বা কেন্দ্র। অর্থাৎ এখানে একজনের করোনা হলেই তা এটি ছড়িয়ে পড়বে। এসব মাথায় রেখে আমি বারবার সংসদে যোগাযোগ করেছি এবং বলেছি অধিবেশন অনলাইনে করা হোক। আমরা ডিজিটালের বাংলাদেশের যে গল্প এতদিন ধরে শুনে আসছি সেই ডিজিটাল মাধ্যমে এটা করা হোক। কিন্তু আমার প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়নি। আমি সংসদের প্রধান হুইপকে বলেছি। যেখানে আমার অ্যাকসেস আছে সবাইকে বলেছি। কিন্তু কেউ আমার কথায় কর্ণপাত করেননি।

রুমিন বলেন, নানা কারণে সংসদ ‘হ-য-ব-র-ল’ অবস্থায় আছে। এজন্য আমি আরও একমাস আগে প্রস্তাব করেছিলাম বাজেট অধিবেশন ডিজিটালি করা হোক। এটা যদি সংবিধানের সাথে কেউ সাংঘর্ষিক মনে করে তাহলে সেখানে আমি দুটো যুক্তি দিতে পারি। সেটা হলো আইনের ভাষায় ডকট্রিন অব নেসেসিটি বলে একটি কথা আছে। আপনার যখন আর কোনো উপায় নেই সেই পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় একেবারেই নেসেসারি বা অত্যাবশ্যক হলে এটি প্রয়োগ করা যায়। আরেকটি হলো প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে অর্ডিন্যান্স জারি করা। এটা সহজেই করা যেত। কারণ গত তিন মাস ধরে দেশে করোনা সংক্রমণ চলছে।

বিএনপির এ এমপি বলেন, প্রয়োজনে প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে অর্ডিন্যান্স নিয়ে হলেও ভার্চুয়াল অধিবেশনের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কারণ এখানে বহু মানুষের জীবনের প্রশ্ন জড়িত।

রুমিন ফারহানা বলেন, বয়স্ক এমপিদের সংসদে না যাওয়ার জন্য নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। কিন্তু এখানে উৎসাহিত বা নিরুৎসাহিত করার কোনো ব্যাপার নয়। আমার দায়বদ্ধতা আছে, আমার এলাকার মানুষের কাছে, আমার দায়বদ্ধতা আছে আমার দেশের মানুষের কাছে, আমার দায়বদ্ধতা আছে আমার দলের মানুষের কাছে। তিনটি জায়গায় সংসদ সদস্য হিসেবে আমার দায়বদ্ধতা এবং সেই দায়বদ্ধতা থেকেই বাজেট অধিবেশনের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনে অংশগ্রহণ করাটা আমি দায়িত্ব মনে করি। সেই দায়িত্ব এবং জীবন যখন মুখোমুখি দাঁড়ায়- তখন তো আমাকে একটা মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে হবে- যাতে আমার জীবনটাও বাঁচে, সেই সঙ্গে দায়িত্বটাও আমি পালন করতে পারি। সেই মধ্যমপন্থা হিসেবে আমি বলেছিলাম ভার্চুয়াল পার্লামেন্ট করা হোক। প্রয়োজনে প্রেসিডেন্টের অর্ডিন্যান্স জারি করে ভার্চুয়াল পার্লামেন্ট করা হোক। তারা এই প্রস্তাব আমার নেয়নি।

তিনি বলেন, সংসদ একটা তালিকা করেছে কে কবে সংসদে যাবেন। কিন্তু আমাদের বিএনপিদলীয় এমপিদের এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। পরে আমরা বাধ্য হয়ে একান্ত সহকারীর (পিএ) মাধ্যমে জেনে নিয়েছি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা গতকাল মঙ্গলবার (৯ জুন) পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। কিন্তু সংসদ থেকে কী ব্যাপার-আশয় বিষয় কিছুই বলছে না। তারপর আমাদের পিএ’র মাধ্যমে খবর নিয়ে জানতে পারি। আমাদের সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে একেকজন এমপিকে একেক দিন-তারিখ দেয়া হয়েছে।

রুমিন বলেন, আমি সংসদে কবে যাবো এ বিষয়ে একটা চার্ট আমার পিএ’র মাধ্যমে নিয়ে এসেছি। আমার জন্য চারদিন সংসদে যাওয়া বরাদ্দ। কিন্তু আজ অধিবেশন শুরুর দিন কিংবা আগামীকাল বাজেট উত্থাপনের দিন বিএনপির কাউকে ডাকা হয়নি। বিষয়টি আমার কাছে একটু বিভ্রান্তিমূলক মনে হচ্ছে। কারণ আমাদের বাজেটের বইগুলো তো আগামীকাল বাজেট পেশের দিনই দেয়া হবে। কিন্তু আমাদের পিএ যারা, তারাও সংসদে এখন ঢুকতে পারবেন না করোনাভাইরাসের কারণে। সংসদের অধিবেশনে প্রবেশের জন্য তারা কেউ অনুমতিপ্রাপ্ত নন। তাহলে আমরা বইগুলো আনব কীভাবে? সংসদের অধিবেশন কক্ষে এমপি ছাড়া তো কারও প্রবেশের অনুমতি নেই, তাহলে আমাদের সেই বইগুলো আনবে কে?

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করোনাভাইরাস টেস্ট করা হলেও সংসদ সদস্যদের তা না করা সম্পর্কে এই এমপি বলেন, এটি কেন করা হয়েছে? এটা কি কোনো গোপন রোগ? এটা কি কোনো লজ্জাজনক যে বের হলে আমাদের ইজ্জত যাবে? এ বিষয়ে চিফ হুইপ বলেছেন, আজ টেস্ট করলে কাল যে হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা আছে? যাদের মনুষ্যত্ব আছে তারা এই অসুখের কথা লুকাতে পারে না।