বিশ্বব্যাপী মাস্ক-পিপিইর বাড়তি চাহিদা : বাজার দখলে তৎপর সরকার

করোনায় বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি চাহিদা বেড়েছে পিপিই, মাস্ক ও গ্লাভসের। এসব স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর বিশ্ববাজার এখন চীনের দখলে। কিন্তু করোনার উৎপত্তিস্থল চীন হওয়ায় এসবের বাজার হারানোর শঙ্কায় রয়েছে দেশটি। ফলে বাংলাদেশের সামনে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি এসব পণ্য রফতানির বিশাল সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে। এ সম্ভাবনাকে লুফে নিতে তৎপর সরকার।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, হয়তো অল্প কিছুদিনের মধ্যেই করোনার তীব্রতা কমবে। তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সংস্থার দেয়া তথ্য অনুযায়ী করোনামুক্ত পৃথিবী পেতে আরও অন্তত দু-তিন বছর সময় লাগবে। এ সময়ে পিপিই (পার্সোনাল প্রোটেকশন ইক্যুইপমেন্ট), মাস্ক ও গ্লাভসের মতো স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর চাহিদা বিশ্বে আরও বাড়বে।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, প্রাণঘাতী করোনার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। শুরু হয়েছে নতুন অর্থনৈতিক মেরুকরণ ও বিনিয়োগ বহুমুখীকরণ। বিশেষ করে করোনার উপত্তিস্থল চীন হওয়ায় দেশটি থেকে বিশ্বের অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নেবে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে বাংলাদেশের সম্ভাবনার দ্বার খুলতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আগে থেকেই মাস্ক, গ্লাভস রফতানি করে। এখন বিশ্বমানের পিপিইও রফতানি শুরু করেছে। তাই চীনের হারানো বাজার বাংলাদেশের পক্ষে দখল নেয়া খুব সহজ হবে বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ জন্য এসব পণ্য উৎপাদন ও রফতানিকারকদের বিভিন্ন নীতি সহায়তার পাশাপশি প্রণোদনার কথাও ভাবছে সরকার।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রফতানি) মো. ওবায়দুল আজম বলেন, করোনাকালে বিশ্বব্যাপী মাস্ক, পিপিইসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর চাহিদা বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী এসব পণ্যের বাজার চীনের দখলে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে চীন তাদের বাজার হারানোর শঙ্কায় রয়েছে। বাংলাদেশ সেটাকে কাজে লাগিয়ে বাজার দখলের সুযোগটা নিতে চায়।

তিনি বলেন, এ সম্ভাবনাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সেজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এসব পণ্য উৎপাদন ও রফতানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাজার ধরতে সরকার নীতি সহায়তার পাশাপাশি প্রণোদনার কথাও ভাবছে। এ জন্য ব্যবসায়ীদের সংগঠনের পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট কারখানার সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে।

অতিরিক্ত সচিব আরও বলেন, সারাবিশ্বে অন্যান্য পণ্যের রফতানি বাড়াতেও প্রণোদনার আওতা বৃদ্ধি করতে পারে সরকার। এসব বিষয়ে রফতানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ ধরনের নতুন বাজার সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ জন্য শুধু প্রণোদনা দিলেই হবে না, স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে আরও উন্নত হতে হবে। কারণ আমরা যদি ভালো মতো করোনা মোকাবিলা করতে না পারি তাহলে বিদেশিরা আমাদের থেকে পণ্য নিতে আগ্রহী হবে না।

এদিকে বিশ্বমানের পিপিই উৎপাদনকারী দেশের কাতারে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ। দেশের টেক্সটাইল খাতের নেতৃত্বস্থানীয় ব্র্যান্ড বেক্সিমকো গত ২৫ মে মার্কিন ব্র্যান্ড হেইনস-এর কাছে ৬৫ লাখ পিপিই গাউনের একটি চালান পাঠিয়েছে। এ চালান পৌঁছাবে মার্কিন কেন্দ্রীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (ফেমা) কাছে।

এছাড়া করোনার প্রকোপে পশ্চিমা অনেক ব্র্যান্ড বাংলাদেশের গার্মেন্টস থেকে অর্ডার বাতিল করেছে। এতে বিপাকে পড়েছে দেশের অনেক পোশাক শ্রমিক। তবে বেশকিছু পোশাক কারখানা করোনাকালে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পিপিই তৈরি করে সংকটকালে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এখন মাস্ক, গ্লাভস ও গাউনের মতো পিপিই তৈরি করে রফতানি করছে বাংলাদেশের বহু পোশাক কারখানা।

তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, পিপিইর চাহিদার কারণে অনেক পোশাক কারখানার মালিকরা এখন আশাবাদী হচ্ছেন। এ বিষয়ে বিজিএমইএর মুখপাত্র খান মনিরুল আলম শুভ বলেন, কমপক্ষে ৩০টি কারখানা করোনা মহামারির শুরু থেকেই পিপিই উৎপাদন করছে। এ সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

বাংলাদেশে অনেক কোম্পানি রয়েছে যারা সীমিত আকারে পিপিই তৈরি করতো। কিন্তু তারাও পশ্চিমা গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী এখন পুরোদমে সুরক্ষা উপকরণ তৈরির কাজে নেমেছে।