ফেসবুকে প্রতারণায় ১৬ নাইজেরিয়ানসহ গেপ্তার ১৮

ফেসবুকে পরিচিত হয়ে উপহার পাঠানোর নামে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ১৬ নাইজেরিয়ান ও দুই বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি।

গ্রেপ্তার নাইজেরীয়রা হলেন- চিরনউইয়ি ওয়েমা, এগিনা চুকবেজুকু, চিমাওবি আত্তাহ গ্যাব্রিয়েল, কেনেচুকুবু স্নালি, ওকেকে সেলেস্টাইন আবুচি, উয়েগবো স্যামুয়েল একেনে, উফোচুকবু তচুকবু উচিবেন্না, ওয়োমবো হেনরি এজিকে, চেবোয়োর নওয়ানেত ভিক্টর ও আনুরুকা গিনিকা ফ্রান্সিস। আর বাংলাদেশি দুইজন হলেন-মো. ইমরান হোসেন ও হারুন অর রশিদ।

প্রতারিত এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে তাদেরকে রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন সিআইডির ডিআইজি মো. শাহআলম।

তিনি জানান, গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে সাত লাখ টাকা, ২৩টি মোবাইল ফোন, ১৫টি পাসপোর্ট এবং বিপুল পরিমাণ টিশার্ট ও জিন্স প্যান্ট উদ্ধার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে বুধবার ধানমন্ডি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়েছে।

সিআইডির ডিআইজি মো. শাহআলম বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ন তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পল্লবীর একটি গোডাউন থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কেনা বিপুল পরিমাণ গার্মেন্টস প্রোডাক্ট জব্দ করা হয়েছে। তাদের পাসপোর্ট ভিসা পর্যালোচনা করলে দেখা গেছে তারা ওর্য়াক পারমিট নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। যদিও তারা নিজেদেরকে ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিত।’

তিনি বলেন, ‘এক ভুক্তভোগী বেশ কিছুদিন আগে ফেসবুকে একাটি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পান। সেটি গ্রহণ করলে ম্যাসেঞ্জরে ও পরবর্তীতে একটি বিদেশি নম্বর থেকে হোয়াটঅ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে থাকে প্রতারকরা। এরই এক পর্যায়ে ওই বিদেশি বন্ধু ভিকটিমকে বেশকিছু উপহার পাঠাবে বলে জানায়। এত উপহার কেন পাঠাবে তা জানতে চাইলে? ওই বিদেশি বন্ধু জানায় তার অনেক টাকা আছে। সে ভুক্তভোগীকে ভালো বন্ধু হিসেবেই এটি দিতে চাচ্ছে। এর বিনিময়ে সে কিছুই চায় না। ওই উপহারের ভিতরে আইফোন আইপ্যাড সহ বেশকিছু ডলার থাকবে বলেও জানায় প্রতারক চক্রটি।’

‘কয়েকদিন পর ভুক্তভোগী একটি বাংলাদেশি নম্বর থেকে ফোন পায়। সেখানে কেউ একজন কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়ে তাকে জানায় তার একটি উপহারের প্যাকেট এসেছে। কিন্তু দেশের নিয়ম অনুযায়ী প্যাকেট ছাড় করাতে হলে ৪৫ হাজার টাকা কাস্টমস ডিউটি দিতে হবে।’

সিআইডির ডিআইজি শাহআলম জানান, ওই ভুক্তভোগী তার একটি একাউন্ট থেকে ওই টাকা পরিশোধ করে। পরে আবার তাকে জানানো হয়, তার পার্সেলে বেশকিছু নগদ অর্থ পাওয়া গেছে সুতরাং তাকে আবার আড়াই লাখ টাকা দিতে হবে। এই টাকা না দিলে তার বিরুদ্ধে কাস্টমস আইন ও মানিলান্ডারিং আইনে মামলা করা হবে বলেও ভয় দেখানো হয়। এ অবস্থায় ভিকটিম ভীত ও সন্দেহগ্রস্থ হয়ে সিআইডির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

শাহআলম বলেন, ‘সিআইডির সাইবার পুলিশ একটি চৌকশ টিম ওই নম্বরের সূত্র ধরে এরসাথে সরাসরি যুক্ত দুইজন বাংলাদেশি একজন নাইজেরিয়ান নাগরিককে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো ১৫ জন নাইজেরিয়ান নাগরিককে ঢাকার পল্লবী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এদেরকে নাইজেরিয়ান ফ্রড গ্রুপ হিসেবে অভিহিত করা হয়।’

সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অতিরিক্তি ডিআইজি মাসুদুর রহমান, সাইবার ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ এসএম আশরাফুল আলম, রেজাউল মাসুদ, মুহাম্মদ ফয়সাল আহমেদ এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল আহসান এবং মাহমুদুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।