রাবি শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধার ফুলে সাজবেন এন্ড্রু কিশোর

বাবা এন্ড্রু কিশোরকে শেষবারের মতো দেখতে অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে এসে পৌঁছেছেন তার ছেলে এন্ড্রু সপ্তক। আজ বৃহস্পতিবার দেশে এসেছেন তিনি। এখন অপেক্ষা সপ্তকের বোন এন্ড্রু সঙ্গার জন্য।

তবে ছেলে দেশে আসতেই এন্ড্রু কিশোরের শেষযাত্রার কর্মসূচী চূড়ান্ত করেছে প্রিয় এই গায়কের পরিবার। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কণ্ঠশিল্পী মোমিন বিশ্বাস।

এন্ড্রু কিশোরের স্ত্রী লিপিকা, বোন শিখা বিশ্বাস, ভগ্নিপতি ডা. প্যাট্টিক বিপুল বিশ্বাসসহ পরিবারের সকল সদস্য ও শিল্পীর প্রিয়ভাজনেরা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আগামী ১৫ জুলাই সকালে প্রথমেই রাজশাহী শহরের স্থানী চার্চে নেওয়া হবে এন্ড্রু কিশোরের মরদেহ।

সেখানে প্রার্থনা শেষ করে এন্ড্রু কিশোরের শেষ ইচ্ছে অনুযায়ি তাকে নিয়ে যাওয়া হবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনারে।

এরপর ওই দিন সকাল ১১টা থেকে এক ঘন্টা ভক্ত শোভা কাঙ্খিদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য শহীদ মিনারে রাখা হবে তাকে। রাবি শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধার ফুলে সাজবেন এন্ড্রু কিশোর। এরপর তাকে নিয়ে আসা হবে রাজশাহীর কালেক্টরেট মাঠের পাশে খ্রিষ্টানদের কবরস্থানে। সেখানে বাবা-মায়ের কবরের পাশেই এন্ড্রু কিশোরকে সমাহিত করা হবে।

এখন শুধু এন্ড্রু কিশোরের মেয়ের জন্য অপেক্ষা। এখনো দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করতে পারেননি সঙ্গা। দেশে ফেরার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। জানা গেছে, তার দেশে ফিরতে আরও চার দিন সময় লাগতে পারে! যদি এর আগেই সঙ্গা দেশে এসে পৌঁছানো সম্ভব হয় তাহলে প্রিয় গায়কের শেষযাত্রার কাজ ১৫ জুলাই এর পরিবর্তে আগেও সম্পন্ন হতে পারে।

এন্ড্রু কিশোরের শিষ্য মোমিন বিশ্বাস বলেন, ‘আজ বৃহস্পতিবার দাদার শেষযাত্রার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে পরিবারে। আমাকে এ বিষয়গুলো জানিয়েছেন বউদি (এন্ড্রু কিশোরের স্ত্রী লিপিকা)। সবার কাছে দাদার পরিবারের একটাই অনুরোধ সবাই শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসে যেনো সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখেন। করোনার এই ভয়াবহ সময়ের কথাও আমাদের ভুলে গেলে চলবে না।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৮০ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকা চলে যান এন্ড্রু কিশোর। তার আগে থেকেই রাজশাহী শহরে ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তিনি ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। নিজের শহরকে ও ক্যাম্পাসকে কখনো ভুলতে পারেননি তিনি। কোনো আয়োজনে ডাক পড়লেই ছুটে আসছেন।

তাই তো মৃত্যুর পরও, একবার নিজের প্রাণের ক্যাম্পাসে যাওয়ার বাসনা প্রকাশ করেছেন তিনি। আর চিরনিদ্রায় ঘুমাতে চেয়েছেন নিজের শহরে মা-বাবার পাশে।

সবরকম প্রস্তুতি নিয়ে এন্ড্রু কিশোরের মরদেহ রাখা হয়েছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের হিমাঘরে।

প্রসঙ্গত, গেল বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ক্যান্সারে (নন-হজকিন লিম্ফোমা) আক্রান্ত হয়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন এন্ড্রু কিশোর। ৯ মাস পর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন এন্ড্রু কিশোর ১১ জুন রাত আড়াইটার একটি বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফিরেন। তারপর ঢাকার বাসায় বেশকিছু দিন অবস্থান করে শরীরের অবস্থা বিবেচনায় ও কোলাহলমুক্ত থাকতে রাজশাহী চলে যান।

তারপর থেকে সেখানে তার বোনের বাসা সংলগ্ন ক্লিনিকেই ছিলেন। সবাইকে কাঁদিয়ে ৬ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে না ফেরার দেশে চলে গেছেন গানের মহারাজ।