করোনা ও বন্যার দুর্যোগ ঢাকতে নানা ইস্যু তৈরি করছে সরকার: রিজভী

করোনা মহামারীর ব্যর্থতা, করোনার টেস্ট জালিয়াতি ও ভয়াবহ বন্যার দুর্যোগ ঢাকতে সরকার নানা ইস্যু তৈরি করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, এমনিতে করোনার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত মানুষ, তার ওপর বন্যার মহাদুর্যোগে মানুষ বির্পযস্ত। কিন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় মানুষের ঈদের আনন্দ মাটি হতে বসেছে। করোনা মহামারীর ব্যর্থতা, করোনার টেস্ট জালিয়াতি ও ভয়াবহ বন্যার দুর্যোগ ঢাকার জন্য নানা ইস্যু তৈরি করে জনদৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে সরকার।

তিনি আরও বলেন, বন্যা পরিস্থিতির এখনও কোনো উন্নতি নেই। দিনকে দিন বন্যা পরিস্থিতি প্রলয়ঙ্করী রূপ ধারণ করছে। অস্বাভাবিকভাবে তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী এ বন্যার কবলে প্রায় ২০-২৫টি জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, তিস্তা, আত্রাই, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, সুরমা, কুশিয়ারাসহ দেশের বেশির ভাগ নদীর উপচে পড়া পানিতে গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে যাচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি, মাছের খামার ভেসে যাচ্ছে। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।

বিএনপির এ নেতা বলেন, উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে নদীভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কিন্তু শুধু লিপ সার্ভিস ছাড়া সরকার এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করেনি।

রিজভী বলেন, বন্যার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ বন্যা নাকি আরও তিন সপ্তাহ স্থায়ী হবে। যদি তাই হয়, তাহলে বাংলাদেশের ব্যাপক এলাকা পানিতে ডুবে অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করবে। কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ ব্যাপক এলাকায় নদীভাঙন বিপজ্জনক রূপ ধারণ করেছে।

‘নদীভাঙনের ফলে বন্যাদুর্গত এলাকায় পাট, ধান, সবজিসহ ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, গবাদিপশু নদীর পেটে চলে গেছে। নাজেহাল অবস্থায় পড়েছে বাঁধভাঙা এলাকার লোকজন। বন্যার পানিতে চাষবাস ও বসবাসের যোগ্য নদীর চরগুলো তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় লাখ লাখ মানুষ হাহাকার করছে।’

তিনি বলেন, বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চারটি চর যমুনার বুকে তলিয়ে গেছে। এভাবে ব্রহ্মপুত্র, যমুনার করালগ্রাসে কুড়িগ্রাম, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধার বেশ কিছু গ্রাম বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে দ্বিতীয় দফা বন্যা চলছে। আরো এক দফা বন্যার পূর্বাভাসে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে হাওরবাসী।

রিজভী আরও বলেন, ফসল আবাদ করে যে মানুষগুলো সচ্ছলভাবে জীবনযাপন করত, তারা এখন বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে দুমুঠো খাবারের জন্য হাহাকার করছে। নদীভাঙন রোধে সরকারের দ্রুত কোনো তৎপরতা নেই। ভাঙনের শিকার অসহায় মানুষকে সহায়তা করতে সরকারি যন্ত্রের শৈথিল্য পরিস্থিতিকে চরম অবনতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এমনকি গবাদিপশু ও শিশুখাদ্যের সংকটও চরম মাত্রায় বিরাজমান।

বিএনপির এ নেতা বলেন, বন্যা উপদ্রুত মানুষের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা না থাকায় তারা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে। করোনার মহামারী মোকাবেলায় অনাচার ও অব্যবস্থাপনার ব্যর্থতার মতো বন্যা মোকাবেলায় সরকার উদাসীন ও নির্লিপ্ত। করোনার আঘাতে অসুস্থ মানুষের প্রতি সরকার যেমন কোনো দায়বোধ করেনি, ঠিক তেমনি বন্যাকবলিত লাখ লাখ অসহায় মানুষের প্রতিও সরকার ভ্রুক্ষেপহীন।

কোরবানি ঈদের প্রাক্কালে বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগেও সরকার মানুষের পাশে নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রিজভী বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ সমাজের বিত্তবানদের বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জোর আহ্বান জানান।