জামায়াত ছাড়ছে বিএনপি?

bnp logo

বিএনপি’র দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সঙ্গী জামায়াতে ইসলামী। দলটির সঙ্গে বিএনপি’র আদর্শিক মিল না থাকলেও দুই দশক ধরে জোট করে একই ধারার রাজনীতি করে আসছে তারা। সম্প্রীতি দুই দলের মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে অনেকটাই। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই দূরত্বের শুরু। নির্বাচনের পরে এ দূরত্ব আরো বেড়েছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরেই জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার পক্ষে টুকটাক কথা বলেছেন বিএনপি’র সিনিয়র নেতারা। তারা বলে আসছিলেন, বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে থাকার কারণেই দলটি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গত শনিবার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটির বৈঠকে জামায়াত ছাড়ার বিষয়েও কথা হয়। ভার্চুয়াল এই বৈঠকে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির প্রায় সব নেতারাই এই বৈঠকে অংশ নেন। খবর মানবজমিন।

সূত্র জানায়, দলের চেয়ারপারসন জেলে যাওয়ার পর থেকেই সারা দেশের জেলা এবং মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ আলোচনার মধ্যে অনেকটাই কথা হয় জামায়াত ইস্যু নিয়ে। জামায়াত ছাড়ার বিষয়ে অনেক তৃণমূল নেতাই মত দেন। আগামীতে আন্দোলনে বিএনপিকে একলা চলার বিষয়েও পরামর্শ দেন তৃণমূলের নেতারা। গত উপজেলা এবং জাতীয় নির্বাচনেও জামায়াত ইস্যু নিয়ে দলের মধ্যে অনেক কথা হয়। গত শনিবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের শুরুতে এক সদস্য এই বিষয় নিয়ে কথা বলেন এবং জামায়াত ছাড়ার বিষয়ে প্রস্তাব দেন। পরে অন্য সদস্যরাও কেন বিএনপি’র জামায়াত ছাড়া উচিত এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন। এর মধ্যে জোটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক নেতা ছাড়া সবাই জামায়াত ছাড়ার বিষয়ে মত দেন। এসময় তারেক রহমান কোনো কথা বলেননি।

বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের সিনিয়র নেতারা কথা বলবেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ২০ দলের নেতাদের সঙ্গে এই বিষয়ে বিএনপি’র সিনিয়র নেতারা কথা বলবেন। খালেদা জিয়ার কাছ থেকে ‘সবুজ সংকেত’ পেলেই ঘোষণা দিয়েই জামায়াত ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানাবে বিএনপি।
এব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এবারো সেটা হয়েছে। আমরা বর্তমান করোনা পরিস্থিতি, রাজনীতি এবং দলের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। আর একটা বিষয় হচ্ছে স্থায়ী কমিটির বৈঠক নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে সব সময় দলের মহাসচিব কথা বলেন। যে মিটিংয়ে কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত হয় সেটা নিয়ে তিনি মিটিং শেষে সংবাদ সম্মেলন করে জানান। এবারের বৈঠকে তেমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেই তিনি ব্রিফিং করেননি। জামায়াত ইস্যুতে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে খন্দকার মোশাররফ বলেন, দেশের এবং বৈশ্বিক রাজনীতি নিয়ে আমাদের কথা হয়েছে। হ্যাঁ এই বিষয় (জামায়াত) নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, বৈঠকে আমরা বেশির ভাগ সময় দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। এই মহামারি থেকে কীভাবে উত্তরণ করা যায় এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমান করোনা মহামারির সময়ে বৈশ্বিক রাজনীতি কীভাবে চলবে সেসব নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা একটা মডার্ন দল হিসেবে আমাদেরও সময় এসেছে আধুনিক বৈশ্বিক রাজনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার।

দেশের বেশ কয়েকটি জেলা এবং মহানগরের বিএনপি’র শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা হয় মানবজমিনের। এদের প্রায় সবাই জামায়াত ছাড়ার বিষয়ে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অবহিত করেছেন বলে জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন নেতা জানান, বিএনপি’র দুরবস্থার জন্য জোটসঙ্গী জামায়াতেরও দায় আছে। দেশ-বিদেশে দলটির জোটসঙ্গী হওয়ার কারণে সমালোচনা শুনতে হয়। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থাকা জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ না থাকলে প্রতিবেশীসহ বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে বিএনপি’র সম্পর্ক আরো ভালো থাকতো বলে মনে করেন কেউ কেউ।

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মধ্যে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সব পর্যায়ের কমিটিতে শতকরা ৩৩ জন নারী থাকতে হবে। শনিবার বিকাল ৫টা থেকে টানা প্রায় আড়াই ঘণ্টা ভার্চুয়ালে চলা বৈঠকে এ বিষয়েও কথা বলেছেন বিএনপি’র নেতারা। এর জন্য ইতিমধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দুটি খসড়া তালিকাও নিয়েছেন। একটি নিয়েছেন দলের দপ্তর থেকে, আরেকটি নিয়েছেন দলের শীর্ষ মহিলা নেত্রীদের থেকে। এ ছাড়া বৈঠকে অতীতে দলের কমিটি গঠন নিয়ে নিজেদের ভুল-ত্রুটির বিষয়েও আলোচনা করেন নেতারা। আগামীতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের সব কমিটিতে নেতৃত্ব বাছাই নির্বাচনের মাধ্যমেও করার সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।