করোনা সনদে ‘ভুল’ নিয়ে প্রশ্ন, তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

বিদেশগামী যাত্রীর সঙ্গে থাকা করোনা সনদের সঙ্গে অনলাইনের সনদের মিল না পাওয়ায় বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয় সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের মেয়ে ঐশীকে। পরে জানা যায়, ওই যাত্রীর করোনা পজিটিভ হলেও তিনি অনলাইন থেকে পেয়েছেন নেগেটিভ সনদ। যাত্রীকে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানোর পরদিন তার নমুনা পরীক্ষা করা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের (এনআইএলএমআরসি) পরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান স্বীকার করেছেন তাকে ভুল সনদ দেয়া হয়েছে।

পরিচালক বলেন, ‘আমাদের এখানেই ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের ভুলের জন্য ওনার কাছে নেগেটিভ রিপোর্টটি যায়। এর কারণে জনসম্মুখে তিনি হেয় হয়েছেন। সেটা আমরা স্বীকার করি। আমরা এটি আরও খতিয়ে দেখছি। যিনি ভুলটি করেছেন তিনি সাময়িক সময়ের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত। তার বিরুদ্ধে আমরা শিগগিরই ব্যবস্থা নেব।’

রিজেন্ট হাসপাতাল, জেকেজি হেলথ কেয়ারের বিরুদ্ধে ভুয়া সনদ দেয়ার অভিযোগের মধ্যে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের করোনা সনদ নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে।

করোনার নমুনা পরীক্ষা নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে এমন ভুল গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। আর এই ভুলের ঘটনা তদন্তে কমিটি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দ্রুত সময়ের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার জন্য বলা হয়েছে কমিটিকে।

এদিকে ভুক্তভোগী যাত্রী সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের মেয়ে ঐশী এই ঘটনায় দায়িদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যব্স্থা নেয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দিয়েছেন।

জানা গেছে, এ পর্যন্ত এক লাখ করোনার নমুনা সংগ্রহ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এনআইএলএমআরসির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শনাক্ত করতে দেশের প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে এক লাখ নমুনা পরীক্ষা করার কৃতিত্ব দেখালো ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার (এনআইএলএমআরসি)। অর্থাৎ দেশে এ পর্যন্ত পরীক্ষা হওয়ার করোনার মোট নমুনার ১৩ শতাংশেরও বেশি পরীক্ষা হয়েছে এই একটি ল্যাবরেটরিতে। এছাড়াও একদিনে সর্বোচ্চসংখ্যক তিন হাজার ২৩২ নমুনা পরীক্ষাও করা হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটিতে।

সেক্ষেত্রে ঐশী খানের মতো আরও কোনো সনদে ভুল হয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। এর আগে করোনার ভুল সনদ দেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জেকেজির ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী ও তার স্বামী আরিফ চৌধুরীকে। বাতিল করা হয়েছে জেকেজির পরীক্ষার অনুমতি।

সবশেষ রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারও হাসপাতাল থেকেও করোনার ভুল সনদ দেয়া হয়েছে।

রবিবার করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে লন্ডনে যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে যান সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের মেয়ে ঐশী খান। তবে অনলাইনের রেজাল্টের সঙ্গে তার হাতে থাকা করোনার রিপোর্টে মিল না পাওয়ায় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা তাকে ফেরত পাঠান।

বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।

তবে প্রতিষ্ঠানটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘বিষয়টি আমরা খুব সিরিয়াসলি দেখছি। কোনো ভুলই কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। তারপরও মানুষের ভুল হতে পারে। কিন্তু এমন সেনসেটিভ বিষয়ে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ইতিমধ্যে আমাদের মহাপরিচালক একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছেন তারা রিপোর্ট দেয়ার পরই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।’

স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, এমন একটি সেনসেটিভ বিষয় নিয়ে যখন তোলপাড় হচ্ছে সর্বত্র সেই জায়গায় সনদ দেয়ার সময় আরও জোরালোভাবে মনিটরিং করার কোনো বিকল্প নেই। এমন কাজটি শুধু ক্লার্ক বা পিয়নের ওপর দায়িত্ব দেয়া কেন হবে? অবশ্যই দায়িত্বশীল কাউকে দেখতে হবে যাতে কোনোভাবে ভুল কিছু না হয়। এক্ষেত্রে যার স্বাক্ষর তাকে কিন্তু দায়িত্ব নিতে হবে। প্রয়োজনে সময় নিয়ে সনদ দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ভুল স্বীকার করা হয়েছে এটা ভালো কথা। কিন্তু দায় এড়ানো যাবে না।

এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘অনেকের মধ্যেই পেশাগত দক্ষতা নেই। করোনার রিপোর্ট দেয়ায় ভুল করা এই সামগ্রিক পরিবেশেরই চিত্র। তাই যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্য জায়গায় বসানো ছাড়া এই অবস্থার উত্তরণ হবে না। তদবির বন্ধ করতে হবে।’