বিভিন্ন জেলায় আগাম ঈদ উদযাপন

eid jamat

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল থেকে প্রতিবারের ন্যায় এবারও দেশের বিভিন্ন জেলায় আগাম ঈদ পালিত হচ্ছে। দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে আগামীকাল ঈদ উৎসব পালনের ঘোষণা দেওয়া হলেও এসব গ্রামে একদিন আগে ঈদ উদযাপিত হচ্ছে। প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ জামাতের আয়োজন, জামাত শেষে কোলাকুলি ও হাত মেলাতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অনেক জায়গায় তা মানা হয়নি। নামাজ শেষে মুসল্লিরা কুশল বিনিময় করেছেন। করেছেন কোলাকুলিও।

চাঁদপুর: সৌদির সঙ্গে মিল রেখে চাঁদপুরের ৪০ গ্রামে আজ শুক্রবার উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল আজহা। ৯০ বছর ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ পালন হচ্ছে এসব গ্রামে।

করোনাভাইরাসের কারণে এসব গ্রামের ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত না হলেও স্থানীয় প্রতিটি মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় ঈদ জামাত। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনেক ঈদ জামাত আয়োজনের কথা থাকলেও বেশিরভাগ জায়গায় তা মানা হয়নি।

হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের সাদ্রা হামিদিয়া দাখিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ আবু ইছহাক ১৯২৮ সাল থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে সব ধর্মীয় রীতিনীতি প্রচলন শুরু করেন। ইছহাকের মৃত্যুর পর তার ছয় ছেলে এ মতবাদের প্রচার চালিয়ে আসছেন।

জেলার হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, মতলব দক্ষিণ ও কচুয়া উপজেলার ৪০টি গ্রামে প্রায় ৯০ বছর ধরে এভাবে ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আজহা উদযাপিত হয়ে আসছে।

এই দরবারের বর্তমান পীর মো. আরিফ চৌধুরী জানান, এই দরবারের প্রতিষ্ঠাতা পীর মাওলানা ইসহাক সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে একদিন আগে রোজা ও ঈদ পালনের রেওয়াজ চালু করেন। তিনি জানান, ১৯৩১ সাল থেকে সাদ্রা মাদ্রাসায় আমার দাদা এবং তার মৃত্যুর পর আমার বাবা ঈদ জামাতের ইমামতি করেছেন। বাবার মৃত্যুর পর থেকে আমি এর দায়িত্বে রয়েছি।

আরিফ চৌধুরী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এবার ঈদের জামাত ভাগ করে দিয়েছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে মসজিদে ঈদের জামাত হওয়ার কথা বলা হয়েছিল। আর কেন্দ্রীয় জামাতটি দারুজজখর খানকা শরীফ প্রাঙ্গণে সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হয়। এসব জামাতে অনেক জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি।

যেসব গ্রামে ঈদ উদযাপিত হচ্ছে সেগুলো হলো হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা, সমেশপুর, অলিপুর, বলাখাল, মনিহার, বেলচো, জাঁকনি, প্রতাপপুর, গোবিন্দপুর, দক্ষিণ বলাখাল। ফরিদগঞ্জ উপজেলার-সেনাগাঁও, বাসারা উভারামপুর, উটতলী, মুন্সিরহাট, মূলপাড়া, বদরপুর, পাইকপাড়া, সুরঙ্গচাইল, বালিথুবা, কাইতাড়া, নুরপুর, শাচনমেঘ, ষোলা, হাঁসা, চরদুখিয়া এবং মতলব দক্ষিণ উপজেলার দশআনী, মোহনপুর, পাঁচআনী ও কচুয়া উপজেলার উজানি গ্রাম।

চাঁদপুরের এসব গ্রাম ছাড়াও পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও চট্টগ্রাম জেলার কয়েকটি স্থানে মাও. ইছহাক খানের অনুসারীরা একদিন আগে ঈদ উদযাপন করেন।

শেরপুর: সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে শেরপুরের নয়টি গ্রামেও আগাম ঈদুল আজহা পালিত হচ্ছে। শুক্রবার সকাল আটটা থেকে নয়টার মধ্যে পৃথক স্থানে মুসল্লিরা ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন।

শেরপুর সদরের উত্তর ও দক্ষিণ চরখারচর, মুন্সীরচর, বামনপরচর, ঝিনাইগাতী উপজেলার বনগাঁও, নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী মধ্যপাড়া ও চিনামারা, নকলা উপজেলার বানেশ্বর্দীসহ ৯টি স্থানে পৃথকভাবে ঈদুল আজহার নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

প্রত্যেকটি জামাতে দেড় থেকে দুই শতাধিক মুসল্লি অংশ নেন। ঈদের নামাজের বড় জামাত দুটি অনুষ্ঠিত হয় সকাল আটটায় বনগাঁও ও নন্নী মধ্যপাড়ায়। নামাজের পর মুসল্লিরা গরু-ছাগল কোরবানি করছেন।

প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনার কারণে প্রত্যেকটি ঈদ জামাতে অংশ নেয়া মুসল্লিরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামাজ আদায় করেছেন বলে জানা গেছে। জামাতে অংশ নেয়া মানুষ কেউ কোলাকুলি করেননি।

ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার কয়েকটি গ্রামের শতাধিক ব্যক্তি ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন। শুক্রবার সকালে উপজেলা শহরের চটকাবাড়িয়া ঈদগাপাড়া জামে মসজিদে এ নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন রেজাউল ইসলাম।

দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে হরিণাকুন্ডু উপজেলার চিথলীপাড়া, ভালকী, বৈঠাপড়া ও ফলসিসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ ঈুদল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করে আসছেন।

বোয়ালমারী (ফরিদপুর): ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সাত গ্রামে ঈদুল আজহার জামাত ও পশু কোরবানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার উপজেলার রূপাপাত ও শেখর ইউনিয়নের শেখর, কাটাগড়, গঙ্গানন্দপুর, রাখালতলি, মাইটকুমরা, সহস্রাইল, দুর্গাপুর গ্রামের প্রায় আড়াই শত পরিবারের কয়েক হাজার মানুষ ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন।

আলফাডাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মাহিদুল হক জানান, ‘আমাদের পুর্বপূরুষ থেকে আমরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা মির্জাখিল পীরের তরিকাপ্রাপ্ত চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার হযরত ইয়াছিন আলী (রহ.) পীরের অনুসারী। আমরা যারা মির্জাখিল পীরের অনুসারী তারা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখা, ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করে থাকি।’ ঈদ উপলক্ষে এসব গ্রামের প্রতিটি ঈদের জামাত ঘিরে ছোটখাটো গ্রামীণ মেলা বসেছে।